World Football 2021: দেখতে দেখতে চলে যাচ্ছে আরও একটি বছর, বিশ্ব ফুটবলে কেমন ছিলো ২০২১

Published By: Khabar India Online | Published On:

২০২১ পেরিয়ে দরজায় কড়া নাড়ছে ২০২২ সাল। আর মাত্র ২ দিন পরেই নতুন বছরকে বরণ করে নেবে বিশ্ববাসী।

২০২১ সালে উত্তেজনাকর কিছু ঘটনায় ঠাসা ছিলো পুরো ফুটবল ক্যালেন্ডার। করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবে থমকে গিয়েছিলো ক্রীড়াঙ্গন। তবে এ বছর ফুটবলাঙ্গন ছিলো চমকে ঠাসা। করোনা পরিস্থিতিতে অবস্থা খারাপ হলেও মাঠে চলেছে খেলা। চলতি বছরে সব চেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিলো আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসির বার্সেলোনা ত্যাগ এবং পর্তুগালের সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফেরা। যে ক্লাবের হাত ধরেই বিশ্বের কাছে এলএম টেন পরিচিতি পায় মেসি, সেই ক্লাবেরই জার্সি এবার খুলে আলমারিতে তুলে রাখলেন লিওনেল মেসি।

সিআর সেভেনের ইউনাইটেডে ফেরাটাও ছিলো অনেকটাই কাল্পনিক। তাছাড়া ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের দুর্ঘটনাও ছিলো অন্যতম। এসব ঘটনা সাধারণত একই বছরে ঘটার বিষয়টিও বিরল। সে কারণেই ২০২১ সাল অনেকাংশেই ফুটবল ইতিহাসে ভিন্ন আঙ্গিকে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এলএম টেনের বার্সা ত্যাগ: ২০২১ সালেই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি হাজারো ভক্ত-সমর্থকদের কাঁদিয়ে বার্সা অধ্যায় শেষ করে পাড়ি জমান ইউরোপীয়ান ফুটবলের অন্যতম ধনী ক্লাব পিএসজিতে। মেসি যখন বার্সা ছাড়ার গুঞ্জন উঠে তখনও ট্রান্সফার বিশেষজ্ঞ ফ্যাব্রিজিও রোমানো দাবি করে আসছিলো বার্সেলোনার সাথে চুক্তি নবায়ন করতে যাচ্ছেন লিওনেল মেসি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফুটবল বিশ্বকে হতবাক করে কাতালান ক্লাবটি শেষ পর্যন্ত জানিয়ে দেয় করোনায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া বার্সেলোনা মেসির মত খেলোয়াড়কে ধরে রাখতে পারবে না।

এমনকি শেষ চেষ্টা হিসেবে প্রিয় ক্লাবে থাকার জন্য মেসি তার বেতনের ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার জন্যও রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু মেসির মতো খেলোয়ারকে রাখতে সাহস পায়নি বার্সা। ক্লাব ছাড়ার দিন সংবাদ সম্মেলনে তাই মেসি নিজের আবেগকে প্রশমিত করতে পারেননি। কথা বলতে গিয়ে বারবার তাকে চোখ মুছতে দেখা গেছে। শুধুমাত্র আর্থিক কারনে তিনি আর বার্সেলোনায় থাকতে পারছেন না এমন কথা বলতে গিয়ে কন্ঠরোধ হয়ে আসছিল ফুটবল যাদুকরের।

সিআর সেভেনের ইউনাইটেডে ফেরা: বার্সা ছেড়ে লিওনেল মেসি যত বড় ঘটনার জন্ম দিতে পারেনি তার চেয়ে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। মেসির ঘটনা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ট্রান্সফার জগতে তোলপাড় থাকলেও রোনাল্ডোর দলবদল হয়েছে অনেকটাই আকস্মিক। মেসির সাথে অবশ্য রোনালদোর দলবদলের ঘটনার কোনই মিল নেই। শুধুমাত্র নতুন চ্যালেঞ্জ নিতেই জুভেন্টাস থেকে রোনালদো পুরোনো ক্লাবে ফিরে আসেন। রোনালদো যখন রিয়াল মাদ্রিদ থেকে যখন জুভেন্টাসে পাড়ি জমিয়েছিলেন তখন ইতালিয়ান জায়ান্টদের মূল লক্ষ্যই ছিল সিআর সেভেনকে দলে ভিড়িয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জেতা। কিন্তু রোনালদোকে সাথে নিয়ে তিন বছরে সেই লক্ষ্যের কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারেনি তুরিনের বুড়িরা। আর তাই রোনালদো নিজেই অনেকটা জুভেন্টাস ছাড়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন।

আরও পড়ুন -  Allergies: যে খাবারগুলো, ধুলোবালির অ্যালার্জি কমাবে

রোনালদো যখন দল ছাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন সাথে সাথে প্রথম দল হিসেবে ম্যানচেস্টার সিটি তার দিকে হাত বাড়ায়। এ নিয়ে রোনালদোর এজেন্টের সাথে দফায় দফায় আলোচনাও করেছে সিটিজেনরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রোনালদো যে অর্থ দাবী করেছিল তার কারণেই হোক বা অন্য কোন অজানা কারণে পেপ গার্দিওলার দল পর্তুগীজ সুপারস্টারের সাথে চুক্তি চূড়ান্ত করতে পারেনি। আর এই সুযোগে রোনালদোকে দ্বিতীয় দফায় দলে নিতে সাবেক ক্লাব ইউনাইটেড কোন ভুল করেনি। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের লাল জার্সিতে ক্যারিয়ারের শেষ সময়টা কতখানি রাঙ্গাতে পারেন রোনালদো সেদিকেই তাকিয়ে আছে পুরো ফুটবল বিশ্ব।

ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের দুর্ঘটনা: ডেনমার্কের ফুটবলাররা ব্যক্তিগত পর্যায়ে খুব কম সংখ্যক খেলোয়াড়ই স্পট লাইটে আসতে পেরেছেন। তার মধ্যেই নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন। ইউরো শুরুর আগে থেকেই টুর্নামেন্টের যে কয়জন তারকা খেলোয়াড় সামনের দিকে ছিলেন সেই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলেন ইন্টার মিলানের এই মিডফিল্ডার। কিন্তু গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যান।

মাঠের ভিতরেই সতীর্থদের সহযোগিতায় পুরো মেডিকেল টিম যেভাবে এরিকসেনকে চিকিৎসা দিয়েছে সেই দৃশ্য পুরো ফুটবল বিশ্বকে শিহরিত করে তুলেছিল। হাসপাতালে নেবার আগ পর্যন্ত এরিকসেন ছিলেন সংজ্ঞাহীন। শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে তার জ্ঞান ফেরার খবর আসে, এমনকি সতীর্থদের ম্যাচে অংশ নেবারও অনুরোধ জানান তিনি। ঐ মুহূর্তে পুরো ড্যানিশ দলের মানসিক অবস্থা সহজেই অনুমেয়। ম্যাচটিতে ফিনল্যান্ড ১-০ গোলে জয়ী হয়েছিল। জুনের ঐ ঘটনার পর থেকে অভিজ্ঞ এই প্লেমেকার এখনো ফুটবলের বাইরে রয়েছেন। শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতোমধ্যেই ইন্টারের সাথে তার চুক্তিও বাতিল হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন -  Martinez: মার্টিনেজ আর্জেন্টিনাকে উল্লাসে ভাসালো, রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে

কোকা-কোলা কান্ড: ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর খবর নিয়ে সবসময় সরব থাকে বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের জুনে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে খেলতে নেমেছিলো পর্তুগাল। সেখানে ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে মাঠের বাইরের এক ঘটনায় জন্ম দেয় রোনালদো, যা নিয়ে হইচই পড়ে যায় পুরো বিশ্বে। সংবাদ সম্মেলনে বসে রোনালদো সামনে রাখা দুটি কোকা কোলার বোতল টেবিল থেকে নামিয়ে রাখেন। ঐসময় এসব কোমল পানীয়র পরিবর্তে সবাইকে সাধারণ পানি পান করার জন্য বলেছিলেন তিনি। এই ঘটনায় কোকা কোলা কোম্পানী মাত্র ঘণ্টাখানেকের মধ্যে প্রায় ৪ বিলিয়ন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিলো। রোনালদোর এই ঘটনার পর আরও কয়েকজন খেলোয়াড়ও এর পুনরাবৃত্তি করেন। এর মধ্যে ফরাসি মিডফিল্ডার পল পগবাও ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আয়োজক কমিটি টুর্নামেন্টের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হওয়া সত্তেও সংবাদ সম্মেলনে কোকের বোতল আর রাখেননি।

ইউরোপীয়ান সুপার লিগ বিতর্ক: ইউরোপের বেশ কিছু শীর্ষ ক্লাব নিয়ে প্রস্তাবিত ইউরোপীয়ান সুপার লিগের পরিকল্পনা নিয়ে ফুটবল বিশ্বে ঝড় কম হয়নি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ছয় ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, লিভারপুল, আর্সেনাল, চেলসি ও টটেনহ্যাম ছাড়াও এসি মিলান, ইন্টার মিলান, জুভেন্টাস,অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা এই লোভনীয় সুপার লিগে নিজেদের সম্পৃক্তার ঘোষনা দেয়। নিয়মিত প্রতিযোগিতার বাইরে গিয়ে ক্লাবগুলোর এই বিদ্রোহী আচরণ কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি বিশ্ব ফুটবলের দুই প্রধান সংস্থা ফিফা ও উয়েফা। দুই সংস্থা থেকেই এই ক্লাবগুলোকে সরে আসার আহ্বান জানানো হয়, নতুবা যেকোন ধরনের বড় সিদ্ধান্তের হুমকি দেয়া হয়। সর্মথকরাও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে।

মূলত রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সাথে আরও কয়েকজন প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তি মিলে নতুন এই লিগের পরিকল্পনা সামনে নিয়ে আসে। এই লিগে খেললে ক্লাবগুলোও আর্থিকভাবে বিশাল লাভবান হবে, এমন লোভও দেখানো হয়। কিন্তু পুরো বিষয়টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ও উয়েফা ইউরোপা লিগের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে দেখা দেয়। বিতর্কিত এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়সহ ফুটবল বিশেষজ্ঞরা সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এই প্রস্তাব থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে আসে বেশিরভাগ ক্লাব। যদিও রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস এখনো তাদের অবস্থান পুরোপুরি নিশ্চিত করেনি। উয়েফা ইতোমধ্যেই এই পরিকল্পনার সাথে জড়িত ১২টি ক্লাবকে আর্থিক জরিমানাও করেছে।

আরও পড়ুন -  Messi Announced: কি জানালেন মেসি? অস্ট্রেলিয়াকে রুখে দিয়ে

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ড্র নিয়ে নাটকীয়তা: বছর শেষের চমক ছিলো চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর ড্র নিয়ে উয়েফার কান্ড। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত প্রতিযোগিতার নক আউট পর্বের ড্র হয়েছে দুই দুইবার। এই বিতর্কিত কাণ্ড নিয়েই ফুটবল প্রেমীদের রোষাণলে ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফা। টেকনিক্যাল ভুলের কারনে গত ১২ ডিসেম্বর উয়েফার সদর দপ্তর নিয়নে অনুষ্ঠিত প্রথমবারের ড্র বাতিল করে কিছু সময় পরেই দ্বিতীয়বারের মত ড্র অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথমবার হওয়া ড্র নিয়ে অবশ্য আগুনের উত্তাপ ছড়িয়েছিলো পুরো ফুটবল বিশ্বে। চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডেই যে দেখা হয়ে যাবার কথা পিএসজি আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। দল যেমন তেমন, ফুটবল বিশ্ব আরো একবার দেখতো মেসি-রোনালদো দ্বৈরথ।

কিন্তু এই ড্র বাতিল করে পর ফুটবল প্রেমিদের সকল স্বপ্নে জল ঢেলে দেয় উয়েফা। দ্বিতীয়বারের ড্র’তে পিএসজি পেয়েছে স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদকে আর ইউনাইটেড পেয়েছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে। তবে উত্তেজনা আছে এখানেও, তারকায় ঠাসা পিএসজির হয়ে যে মাঠে নামবেন লস ব্ল্যাঙ্কোস শিবিরের সাবেক সেনাপতি সার্জিও রামোস।

নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের মালিকানা পরিবর্তন: ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ধনকুবের মালিক পেয়েছে। ম্যানচেস্টার সিটির শেখ মানসুর, চেলসির রোমান আব্রামোভিচ, আর্সেনালের স্ট্যান ক্রোয়েনেকে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গ্লেজারদের পাশাপাশি এবার নিউক্যাসেল ইউনাইটেডকে কিনে নিয়েছে সৌদি আরবের ধনী প্রতিষ্ঠান পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড। ট্রান্সফার মার্কেটে ধারাবাহিক ভাবে ইংলিশ ক্লাবগুলো একের পর এক রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এই মালিকদের সুবাদে। এবার নতুন করে নিউক্যাসেল কি চমক দেখায় সেটাই এখন দেখার বিষয়। ম্যাগপাইদের নিজেদের সম্পত্তিতে পরিণত করতে ৩২০ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করেছেন মোহাম্মদ বিন সালমানের পিআই ফান্ড। যা প্রিমিয়ার লিগের অতীতের সব রেকর্ডকে ভঙ্গ করে দিয়েছে। জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতেই হয়তো নিউক্যাসেল চমক দেখাতে পারে।