ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির এক গ্রাহকের দায়ের করা মামলায় অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলার আট সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। জামিনের পর গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে এই অভিনেত্রী বলেছেন, ‘আমি যখন ইভ্যালিতে যুক্ত হয়েছি, তার আগেই ইভ্যালিতে ৪০ লাখ গ্রাহক ছিল। তারা যেভাবে আস্থা রেখেছে, আমিও কিন্তু সেভাবেই আস্থা রেখেছিলাম।’
সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই মামলায় মিথিলাসহ আরেক অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে রোববার (১২ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তাদের আগাম জামিনের আবেদন করা হয়েছিল।
জামিনের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মিথিলা বলেন, মহামান্য আদালত বলেছেন, যে মামলাটি আমার বিরুদ্ধে করা হয়েছে, সেটার আসলে খুব একটা ভিত্তি নেই, ভিত্তিটা স্ট্রং নয়। সেই কারণে আমাকে আগাম জামিন দিয়েছেন। আইনের প্রতি আমার আস্থা আছে। আমি আশা করছি যে, শিল্পীরা হয়রানির শিকার হবে না। শুধু এখন নয়, ভবিষ্যতেও।
ভবিষ্যতে এধরনের কাজ করার সময় আরও সতর্ক হয়ে কাজ করবেন কি না এমন প্রশ্নে এই অভিনেত্রী বলেন, অবশ্যই সতর্ক হয়ে কাজ করবো। আমি বাংলাদেশের ১০০টির বেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছি; তবে এ ধরনের একটা হয়রানিমূলক পরিস্থিতির জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না।
তিনি আরও বলেন, অসম্ভব হয়রানির ভেতর দিয়ে আমি যেটা শিখলাম আমাদের মিডিয়ার এসব ইস্যু ডিল করার জন্য সেভাবে কোনো এজেন্সি নেই, ম্যানেজার নেই, আমাদের ইনডিভিজুয়ালি ডিল করতে হয়।
ইভ্যালির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক নাকি ভুল ছিল এমন প্রশ্নে এ তারকা বলেন, এই হয়রানির ভেতর দিয়ে যাওয়াটা আমি ডিজার্ভ করিনি।
আদালতে আজ মিথিলার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ইমতিয়াজ ফারুক ও নিয়াজ মোর্শেদ। শবনম ফারিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আইনজীবী জেড আই খান পান্না, জেসমিন সুলতানা ও জামিউল হক ফয়সাল। এসময় মিথিলা ও ফারিয়া আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এই দুই অভিনেত্রীর জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আইনজীবী জেসমিন সুলতানা। তিনি বলেন, আজ বিকেল সোয়া ৩টার দিকে আদালতে শুনানি হয়। জামিনে থাকাকালীন পুলিশ যাতে এ দুই অভিনয়শিল্পীকে কোনো প্রকার হয়রানি না করে সে ব্যাপারেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় সাদ স্যাম রহমান নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক তাহসান, মিথিলা ও শবনম ফারিয়াসহ নয়জনের নামে মামলা করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন গ্রেফতার ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল, তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, আকাশ, আরিফ, তাহের ও মো. আবু তাইশ কায়েস।
সাদ স্যাম রহমান তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, তাহসান, মিথিলা ও শবনম ফারিয়া ইভ্যালির বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। তাদের উপস্থিতি এবং বিভিন্ন প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ডে আস্থা রেখে প্রতিষ্ঠানটি থেকে পণ্য ক্রয়ের উদ্দেশে বিনিয়োগ করেন তিনি। তার বিনিয়োগ করা টাকার পরিমাণ তিন লাখ ১৮ হাজার টাকা, যা তিনি এখনো উদ্ধার করতে পারেননি। এ তারকাদের কারণেই তিনি প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজিব হাসান বলেন, মামলায় ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মোহাম্মদ রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, ইভ্যালির শুভেচ্ছাদূত ছিলেন তাহসান। মিথিলা ছিলেন ইভ্যালি লাইফস্টাইলের শুভেচ্ছাদূত। এছাড়া শবনম ফারিয়া প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন।