সার্স-কোভ-২ ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর।
কোভিড-১৯এর নতুন ভ্যারিয়েন্টকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২৬শে নভেম্বর ওমিক্রন (বি.১.১.৫২৯) হিসেবে উল্লেখ করছে। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। এই উত্তরগুলি মন্ত্রকের ওয়েবসাইটেও আপলোড করা আছে।
প্রশ্ন : ওমিক্রন কি এবং কেন এটিকে উদ্বেগের ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে?
উত্তর : দক্ষিণ আফ্রিকায় সার্স-কোভ-২ এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে ২৪শে নভেম্বর প্রথম জানা যায়। এটিকে বি.১.১.৫২৯ বা ওমিক্রন হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। আলফা, বিটা, ডেল্টার মতো ওমিক্রন গ্রিক বর্ণমালার একটি অক্ষর। এই ভ্যারিয়েন্টটিতে প্রচুর পরিমাণে পরিযোজন হয়েছে। এখানে ৩০টির বেশি ভাইরাল স্পাইক প্রোটিন আছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সহজেই আঘাত হানতে পারে।
ওমিক্রনের পরিযোজনার বিষয়টি বিবেচনা করে বলা যায় এই ভ্যারিয়েন্ট সহজেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে ঢুকে যায়। এর ফলে দক্ষিণ আফ্রিকায় সংক্রমণ দ্রুতহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রনকে উদ্বেগের কারণ বলে ঘোষণা করেছে।
প্রশ্ন : বর্তমানে যেসব নমুনা পরীক্ষা হয় সেগুলির সাহায্যে ওমিক্রনকে কি শনাক্ত করা সম্ভব?
উত্তর : সার্স-কোভ-২ এর নমুনা পরীক্ষার বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হল আরটি-পিসিআর। এই পদ্ধতিতে ভাইরাসের স্পাইক, এনভেলপ্ড ও নিউক্লিওক্যাপসিটকে শনাক্ত করা যায়, যার সাহায্যে ভাইরাসের উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব। তবে ওমিক্রনে স্পাইক জিনটি যথেষ্ট পরিযোজিত হওয়ায় কখনও কখনও নমুনা পরীক্ষার সময় এটিকে শনাক্ত করা যায়না। ওমিক্রনের জিন বিন্যাস সম্পর্কে অবশ্য আরও তথ্যের প্রয়োজন রয়েছে।
প্রশ্ন : নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের সম্পর্কে উদ্বেগের কতটা কারণ আছে?
উত্তর : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ মূল্যায়ণের পর ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট উদ্বেগের কারণ বলে উল্লেখ করেছে। যখন কোভিড-১৯ মহামারীর সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পায় অথবা ভাইরাসের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে তখন উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেই সময় জনস্বাস্থ্য ও বিভিন্ন ধরণের সামাজিক পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে যে সুফল পাওয়া যায় তাতে ঘাটতি দেখা যায়। এছাড়াও নতুন ভারিয়েন্টের ফলে ভাইরাসকে শনাক্ত করা, টিকা কার্যকর হওয়া এবং চিকিৎসা করানোর সময় সমস্যা দেখা দেয়।
কয়েক ধরণের পরিযোজন হওয়ায় ওমিক্রনকে উদ্বেগের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এটি সহজেই সংক্রমণকে ছড়িয়ে দেয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে এবং নতুন করে আবারও সংক্রমণের সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ কতটা শক্তিশালী এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে তা কতটা দূর্বল করতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।
প্রশ্ন : আমরা ভ্যারিয়েন্টটি আটকাতে কি কি ব্যবস্থা নেব?
উত্তর : আগে যেসমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হতো তা অব্যাহত থাকবে। সঠিকভাবে মাস্ক পড়তে হবে, টিকা নেওয়া না হলে টিকার দুটি ডোজই নিতে হবে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে এবং যতটা সম্ভব খোলামেলা স্থানে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
প্রশ্ন : তৃতীয় ঢেউ কি আসছে?
উত্তর : ওমিক্রন দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে অন্যান্য দেশেও আঘাত হানছে। ধারণা করা হচ্ছে ভারত সহ বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পরতে পারে। তবে এর প্রাবল্য সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। দেশে টিকাকরণ অভিযান দ্রুতহারে চলতে থাকায় এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে যথেষ্ট সংক্রমিত হওয়ায়, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের তীব্রতা কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত আরও বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণের প্রয়োজন।
প্রশ্ন : বর্তমান যেসব টিকা আছে সেগুলি কি ওমিক্রনকে প্রতিহত করতে পারে?
উত্তর : বর্তমান টিকাগুলি ওমিক্রনকে প্রতিহত করতে পারে কিনা সে বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য প্রমাণ নেই। টিকার কার্যকারিতা স্পাইকের পরিযোজনের জন্য কমে যেতেও পারে। সেলুলার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে অ্যান্টিবডির সাহায্যে টিকা ভাইরাসকে প্রতিহত করতে পারে। তাই ভাইরাসজনিত রোগের তীব্রতার হাত থেকে বাঁচতে টিকা নেবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। টিকাকরণ তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো যোগ্য ব্যক্তি যদি এখনও টিকা না নিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তার দ্রুত টিকা নেওয়া প্রয়োজন।
প্রশ্ন : ভারত এই ভ্যারিয়েন্টের বিষয়ে কতটা প্রস্তুত?
উত্তর : কেন্দ্রীয় সরকার নিবিড়ভাবে পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে চলেছে । নির্দিষ্ট সময় অন্তর এ সংক্রান্ত যথাযথ নির্দেশিকা প্রকাশিত হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসকেরা ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত করার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন। জিন বিন্যাস সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ভ্যারিয়েন্টটির জন্য কি ধরণের লক্ষণ দেখা যায়, সংক্রমণের বৈশিষ্ট্য ও সংক্রমিত ব্যক্তিদের চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
প্রশ্ন : এই ভ্যারিয়েন্টের সৃষ্টির কারণ কি?
উত্তর : যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো ভাইরাস থাকবে ততক্ষণ সেটির অভিযোজন একটি স্বাভাবিক নিয়ম। ভাইরাস সহজেই সংক্রমিত হয়ে সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়ে অন্যকে সংক্রমিত করে। এটি স্বাভাবিক পদ্ধতি। যখন সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় অথবা মানুষ আবারও নতুন করে সংক্রমিত হয় সেইসময় এই ভাইরাস প্রচারের আলোয় চলে আসে। সংক্রমিতের সংখ্যা কমানোই ভ্যারিয়েন্ট প্রতিহত করার সবথেকে কার্যকর পদ্ধতি। সূত্রঃ পিআইবি