‘ বৃষ্টি ছোঁয়া মন ‘

Published By: Khabar India Online | Published On:

‘ বৃষ্টি ছোঁয়া মন ‘

ষোড়শী মেয়েটি জানালায় মুখঠেসে বাহিরে বাড়িয়ে দিল দু হাত, বৃষ্টির জল তার আঙুলের ফাঁক গলে নিচে পড়ছে, কিছু জল আবার গড়িয়ে গড়িয়ে কনুই ছুঁয়ে…. চুয়ে চুয়ে পড়ছে। বাবা মুগ্ধ চোখে মেয়ের বৃষ্টি ছোঁয়া উচ্ছ্বাস দেখছেন। কি অপূর্ব দৃশ্য! বাবার চোখে মুখে বেঁচে থাকার এক বিশাল শান্তি এসে ভর করলো।
বাবা আবেগে মনে মনে বলে উঠলেন, বেঁচে থাকার জন্য এর থেকে বেশি কি আর লাগে……?
কিন্তু তাঁর এই বেঁচে থাকার আনন্দ আবেশমাখা মুহুর্ত টুকুতে হটাৎ ই বিজলী চমক দিলো; মেয়েটির মা বিরক্তিভরা কণ্ঠে চিৎকার করে উঠলেন, আমি আর কত জগ, পাতিল পট্টি লাগাবো তোমার ঘরে? এতবার বলেছি ঝড়-বৃষ্টির জলে ঘরটা ভেসে যায়, চালের টিনটা পাল্টাও। কে কার কথা শোনে!
বাবা হাসতে হাসতে বললেন, আহা, এই ব্যপার? সেজন্য এতো রাগ করছো কেন? বলেছি তো, স্কুলে পাঁচ মাসের বেতন পাওনা আছে, ওটা পেলেই তোমার ঘরের চাল আমি ঠিক করে দিবো। এখন বলো, এই মুহুর্তে আমি তোমার জন্য কি করতে পারি? জগ, বালতি আরও লাগবে? তাহলে তার ব্যাবস্থা করে দেই।
মা আরও রেগে গেলেন, জগ, বালতির ব্যবস্থা তোমাকে করতে হবে না, ও আমি নিজেই নিয়ে এসে বসাতে পারি।
অহহ…তাই? তাহলে তো হয়েই গেল, এবার তুমি এদিকটায় একবার এসো তো…, অনেকক্ষণ হলো তোমাকে দেখি না।
দেখো বেশি ঢঙ্গ করো না! আমি মরি আমার জ্বালায়, আর তিনি রঙে আছেন!

আরও পড়ুন -  ‘মুসলিম না হয়ে হিন্দু হলে রাজি ছিলাম’, যুবতীর মন্তব্যে যোগ্য জবাব দিলেন রাজচন্দ্র
সুফিয়া শিউলি। লেখিকা।

আহা …একবার এসোই না; এসে একবার মেয়েটার দিকে দেখো। আমরা এত কথা বলছি অথচ মেয়েটা মন প্রাণ ঢেলে যেন বৃষ্টিকেই অনুভব করে যাচ্ছে, বিশ্বের কোন কিছুতেই তার কিছু যায় আসে না যেন! কি অপুর্ব দৃশ্য!
মা বাবার কথায় ছ্যাত করে উঠলেন, হুম পাগল ছাগলের মেয়ে তো পাগল ছাগলেই হবে, আর কি হবে; আমার হয়েছে যত জ্বালা। যাই সাঝ হয়ে এলো, রাতের খাবারের যোগাড় করি। খাবার বলতে কিন্তু ঐ চাল সেদ্ধ আর আলু সেদ্ধ, ওটাই গিলতে হবে আজ….।
বাবা আবারও হা হা করে হেসে উঠলেন, তোমার হাতের ছোঁয়ায় ঐ সেদ্ধ খাবার টুকুই অমৃত হবে গো জানি, সে ব্যাপারে চিন্তা নেই আমার।
ইস কি প্রেম, কথার জাদু জানো তুমি, মরন আমার…।
ও শোনো, শুধু মেয়েটাকে সাথে একটা ডিম সেদ্ধও দিও। মিটসেভের ওপরে দেখো, আমি এনে রেখেছি।
মা এবার হেসে ফেললেন, জানি, দেখেছি। ওটিতে তোমার ঠিক নজরেই থাকে।
কোথায় আর নজর, কত কি ইচ্ছে করে, কিছুই করতে পারিনা মেয়েটার জন্য করতে। বুকে এই কষ্টটাই ঘুরে বেড়ায় শুধু।
মা রান্নাঘরে যেতে যেতেও মুখ ফিরে তাকালেন, মনকষ্টের ছায়ামাখা এক করুণ মুখ দেখতে পেলেন। খুব মায়া হলো তাঁর। তিনি মৃদু পায়ে কাছে হেঁটে এসে আলতো করে বাবার হাতটি নিজের হাতে নিলেন। কষ্ট পেয়েও না। দেখে নিও, মেয়ে আমাদের একদিন মস্ত বড় মানুষ হবে। নিজের দায়িত্ব নিজে নিয়ে চলতে শিখবে সাহস ও আত্মবিশ্বাসের সাথে।
বাবা গভীর দৃষ্টিতে মায়ের চোখের দিকে তাকালেন, হুম জানি তো, তুমি যে ওর মা।
আর তুমি যে ওর বাবা।
মেয়েটি এই সুন্দর মুহুর্তটি না দেখার ভান করে সব দেখলো এবং মনে মনে বলল, তোমরা দুজনেই আমার ছেলেমেয়ে, তোমাদেরকে সারাজীবন ভালো রাখার দায়িত্ব আমার….।

আরও পড়ুন -  Birthday: জন্মদিন আজ, টাইগার কাপ্তান মাশরাফি বিন মুর্তজা