‘মিটু’ প্রায় আন্দোলনের রূপ ধারণ করলেও তা কতটা সফল হয়েছে বলা মুশকিল। এবার নিজের জীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খুললেন টলিউডের অভিনেত্রী সোহিনী সরকার (Sohini Sarkar)।
খড়দহের মেয়ে সোহিনী জানিয়েছেন, প্রতিটি কাহিনীতেই রাক্ষস-খোক্কস থাকে, তা সে যত বড়ই রূপকথা হোক না কেন। তাঁর জীবনও এর ব্যতিক্রম নয়। এখন তাঁর জীবনে সেভাবে কোনো ভিলেন না থাকলেও শৈশবে যখন তিনি সবে সিরিয়ালে অভিনয় করতে শুরু করেছিলেন, সেখানে এক ব্যক্তি তাঁকে খারাপ ভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সোহিনী তাঁকে ধারে-কাছে ঘেঁষতে না দেওয়ায় তিনি অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেছিলেন। সেই সময় সোহিনী পড়তেন একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে। সবেমাত্র ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা শুরু করেছেন। মন দিয়ে কাজ করতে চাইতেন সোহিনী।
ওই ব্যক্তি সোহিনীকে প্রচন্ড বকাবকি করতেন। বয়সে অনেকটাই ছোট সোহিনী বুঝতে পারতেন না, ওই ব্যক্তি তাঁকে কেন বকছেন! কিন্তু তার পরেই মেকআপ রুমে গিয়ে ওই ব্যক্তি সোহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতেন। যাতে তিনি ওই ব্যক্তির জালে ধরা দেন। কিন্তু সোহিনী কোনো ভাবেই তাঁর ফাঁদে পা দেননি। সময়টা ছিল 2005-2006 সাল। সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়া থাকলেও অধিকাংশ মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছিলেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় যাঁরা থাকতেন, তাঁরাও বেশি অ্যাকটিভ থাকতেন না। সোহিনী আঠারোর নিচে বয়স হওয়ার ফলে সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছিলেন না। এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে আর পাঁচটা মেয়ের মতোই তিনিও ভয় পেয়েছিলেন, লজ্জা পেয়েছিলেন। তাই সবাইকে জানাতে না পারলেও ধারাবাহিকের যাঁরা তাঁর বয়সে বড় সহকর্মী ছিলেন, তাঁরাই সেদিন সোহিনীকে সাহায্য করেছিলেন।
View this post on Instagram
ওই নির্ধারিত ব্যক্তিকে ইন্ডাস্ট্রিতে আর দেখতে পাননি সোহিনী। খারাপ কাজ করতে গিয়ে এই ধরনের লোকেরা কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন বলে বিশ্বাস করেন সোহিনী। এরপর হয়তো সোহিনীকে শুনতে হবে, তাহলে উনি এত বছর পর কেন মুখ খুললেন? ব্যক্তিটি যদি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন, তাহলে সোহিনীকে বলা হবে, তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ব্যক্তিটিকে ফাঁসাবার চেষ্টা করছেন! হাজারখানা সংবাদমাধ্যমে সোহিনীর যৌন হেনস্থার কথা প্রকাশিত হলে সেই খবরের নিচে অনেকগুলি কমেন্ট থাকবে, যেমন “সতীপনা দেখাচ্ছে”, “ভালোবেসেছিল, পাত্তা দেয়নি, তাই ফাঁসাচ্ছে” ইত্যাদি। এবার আশা করি, পাঠক-পাঠিকারা বুঝতে পারবেন,শুধুমাত্র সোহিনীই নন, যে কোন মেয়েই তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া কোনো অস্বস্তিকর ঘটনার কথা সর্বসমক্ষে বলতে কেন বলতে চান না বা বললেও অনেক দেরি করে ফেলেন! আসলে দেরি করেই বলুন অথবা ঘটনার সময়েই বলুন, আঙুলটা প্রথম মেয়েদের দিকেই ওঠাতে শিখে গেছে সমাজ। তাই সমাজের উদ্দেশ্যে একটাই বার্তা, মেয়েরাও মানুষ, সুতরাং মেয়েদের প্রতিবাদী মানসিকতাকে নারীবাদ আখ্যায়িত না করে মানবতাবাদটাই না হয় শিখে নিন!