জাতির উদ্দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত ২’০, (১৪তম পর্ব) অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ ২৬শে জুলাই আর এটি এক বিশেষ দিন। আজ ‘কার্গিল বিজয় দিবস’। একুশ বছর আগে আজকের দিনেই কারগিলের যুদ্ধে আমাদের সেনাবাহিনী ভারতের বিজয় পতাকা উড়িয়েছিল। সাথী, কারগিলের যুদ্ধ যে পরিস্থিতিতে হয়েছিল সেটা ভারত কখনও ভুলতে পারবে না। পাকিস্তান বড়-বড় পরিকল্পনা তৈরি করে ভারতের জমি দখল আর নিজেদের ওখানে চলতে থাকা অভ্যন্তরীণ কলহ থেকে দৃষ্টি সরানোর দুঃসাহস দেখিয়েছিল। ভারত তখন পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছিল কিন্তু কথায় বলে,

বয়রু অকারণ সব কাহুঁ সো।
যো কর হিত অনহিত তাহুঁ সো…

অর্থাৎ দুষ্টের স্বভাবই হচ্ছে, বিনা কারণে সবার সঙ্গে শত্রুতা করা। এমন স্বভাবের লোক, যে উপকার করে তারও ক্ষতি করার কথাই ভাবে। তাই ভারতের মিত্রতার জবাবে পাকিস্তান পিঠে ছোরা মারার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু, এর পরে ভারতের বীর সৈন্যরা যে পরাক্রম দেখিয়েছিল, ভারত নিজের যে শক্তি প্রদর্শন করেছিল, তা সারা পৃথিবী দেখেছে। আপনি অনুমান করতে পারেন – উঁচু পাহাড়ে বসে থাকা শত্রু আর নীচ থেকে লড়তে থাকা আমাদের সেনা জওয়ানরা, আমাদের বীর জওয়ানরা, কিন্তু, জয় পাহাড়ের উচ্চতার হয় নি – ভারতীয় সেনার ভরপুর তেজ আর সত্যিকারের বীরত্বের হয়েছিল। সাথী, সেই সময় আমারও কার্গিল যাওয়া আর ভারতীয় সেনার বীরত্ব দর্শনের সৌভাগ্য হয়েছিল। সেই দিন, আমার জীবনের সবথেকে অমূল্য সময়ের একটি। আমি দেখতে পাচ্ছি যে আজ গোটা দেশের মানুষ কারগিলের জয়কে স্মরণ করছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে এক হ্যাশট্যাগ কারেজ-ইন-কারগিল ব্যবহার করে নিজেদের বীরদের প্রণাম জানাচ্ছে, যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। আমি আজ সব দেশবাসীর পক্ষ থেকে, আমাদের এই বীর জওয়ানদের সঙ্গে, সেই সব বীরাঙ্গনা মায়েদেরও প্রণাম করি, যাঁরা, মা-ভারতীর সত্যিকারের যোগ্য পুত্রদের জন্ম দিয়েছেন। আমার, দেশের তরুণদের কাছে অনুরোধ, আজ সারা দিন কার্গিল বিজয়ের সঙ্গে যুক্ত আমাদের বীর সেনাদের নানা কাহিনী, বীরাঙ্গনা মাতাদের ত্যাগ সম্পর্কে, একে অন্যকে বলুন, শেয়ার করুন। সাথী, আমি আজ আপনাদের একটি অনুরোধ করছি। একটি ওয়েবসাইট আছে ডব্লু ডব্লু ডব্লু-গ্যালান্ট্রি অ্যাওয়ার্ডস-ডট-গভ-ডট-ইন, আপনারা অবশ্যই সেটা দেখুন। ওখানে আপনি আমাদের বীর যোদ্ধাদের ব্যাপারে, তাঁদের পরাক্রমের ব্যাপারে, অনেক তথ্য পাবেন, আর সেই সব তথ্য নিয়ে যখন আপনি নিজের বন্ধুদের সঙ্গে চর্চা করবেন – তাদের কাছে তা প্রেরণার কারণ হয়ে উঠবে। আপনারা অবশ্যই এই ওয়েবসাইট দেখুন, আর আমি তো বলব, বার বার দেখুন।

বন্ধু, কার্গিল যুদ্ধের সময় অটলজি লালকেল্লা থেকে যা বলেছিলেন, আজও আমাদের সবার জন্য তা প্রাসঙ্গিক। অটলজী তখন দেশকে গান্ধীজির এক মন্ত্রের কথা স্মরণ করিয়েছিলেন। গান্ধীজির মন্ত্র ছিল যে কারও যদি, কখনও মনে সংশয় থাকে যে সে কী করবে, কী করবে না, তাহলে তাঁর ভারতের সবথেকে গরীব আর অসহায় ব্যক্তির সম্পর্কে ভাবা উচিত। তাঁর এটা ভাবা উচিত যে সে যা করতে যাচ্ছে তাতে সেই ব্যক্তির ভালো হবে কি হবে না। গান্ধীজির এই ভাবনার থেকে এগিয়ে অটলজি বলেছিলেন যে কার্গিল যুদ্ধ আমাদের আর একটা মন্ত্র দিয়েছে – এই মন্ত্র হল, কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, আমাদের এটা ভাবতে হবে, যে এই পদক্ষেপ সেই সৈনিকের সম্মানের যোগ্য কিনা যে দুর্গম পাহাড়ে নিজের প্রাণের আহুতি দিয়েছিল। আসুন অটলজির বয়ানে তাঁর এই ভাবনার কথা আমরা শুনি, বুঝি আর সময়ের দাবি হল সেটাকে গ্রহণ করি।

অটলজির কন্ঠ (সাউন্ড বাইট)

“আমাদের সবার মনে আছে যে গান্ধীজি আমাদের এক মন্ত্র দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে যদি মনে কোনও সংশয় থাকে যে তোমার কী করা উচিত তাহলে তুমি ভারতের সেই সবথেকে অসহায় ব্যক্তিটির ব্যাপারে ভাবো আর নিজেকে জিজ্ঞাসা করো যে তুমি যা করতে যাচ্ছ তাতে সেই ব্যক্তির ভালো হবে কিনা। কার্গিল আমাদের এক অন্য মন্ত্র দিয়েছে – কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের এটা ভাবা উচিত যে আমাদের পদক্ষেপ সেই সৈনিকের সম্মানের যোগ্য কিনা যে ওই দুর্গম পাহাড়ে নিজের প্রাণের আহুতি দিয়েছিল।”

বন্ধু, যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে, আমরা যা বলি, যা করি, সীমান্তে কর্তব্যরত সৈনিক আর তার পরিবারের মনোবলের উপর তার গভীর প্রভাব পড়ে। এই কথা আমাদের কখনও ভোলা উচিত নয় আর আমাদের আচার, আমাদের ব্যবহার, আমাদের বক্তব্য, আমাদের বয়ান, আমাদের মর্যাদা, আমাদের লক্ষ্য, সব কিছু খতিয়ে দেখা উচিত যে আমরা যা করছি, যা বলছি, তাতে সৈনিকদের মনোবল বাড়ে, তাদের সম্মান বৃদ্ধি পায়। রাষ্ট্রকে সবার উপরে রাখার মন্ত্র নিয়ে, একতার সূত্রে আবদ্ধ দেশবাসী, আমাদের সৈনিকদের শক্তিকে বহু হাজার গুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এখানে তো বলাই হয়েছে যে – কলিযুগে সঙ্ঘবদ্ধতাই শক্তি প্রদান করে।

কেউ কেউ এসব না বুঝে স্যোসাল মিডিয়ায় এমন বিষয়গুলো ছড়িয়ে দেন যে আমাদের দেশের তাতে বিপুল ক্ষতি হয়ে যায়, কখনো কখনো কৌতূহল থেকে ঐসব মেসেজ ফরোয়ার্ড করা হতেই থাকে, জানে যে এটা অন্যায় তবুও ফরোয়ার্ড করতেই থাকে। এখন যুদ্ধ শুধু সীমান্তেই হয় না,দেশের ভেতরেও অনেক দিক থেকে লড়াই চলে, সে লড়াইয়ে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে অংশগ্রহণ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। দেশের সীমান্তে দুর্গম পরিস্থিতিতে যুদ্ধের সেনারা লড়াই করছেন তাঁদের সে ভূমিকার কথা মনে রাখাও আমাদের কাজ।

আমার প্রিয় দেশবাসী! গত কয়েকমাস সারা দেশ একজোট হয়ে যে ভাবে করোনার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে, তাঁরা বহু আশঙ্কাকে অমূলক প্রমাণ করেছেন, আজ আমাদের আরোগ্য লাভের হার অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় অনেক ভালো, শুধু তাইই নয়, আমাদের দেশের করোনায় মৃত্যু হারও অনেক অনেক দেশের থেকে কম। অবশ্যই একজন মানুষের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক, সেখানে ভারত লাখ লাখ মানুষের জীবন দানে সফল হয়েছে। কিন্তু বন্ধুরা করোনার বিপদ কিন্তু কমেনি, কোনও কোনও এলাকায় তীব্র গতিতে এই রোগ ছড়াচ্ছে,আমাদের আরও অনেক বেশি সজাগ থাকার প্রয়োজন আছে,আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে করোনা শুরুতে যেমন বিপজ্জনক ছিলো আজও একই রকম রয়েছে,এজন্য আমাদের সম্পূর্ণ সতর্ক থাকতে হবে। মুখে মাস্ক বা গামছা দিতে হবে,একজনের থেকে অন্যজনের দু গজ দূরত্ব বজায় রাখা,বারবার হাত ধোওয়া, কোথাও থুতু না ফেলা,পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় সবসময় নজর রাখা এগুলোই করোনা থেকে বাঁচার হাতিয়ার। কখনো কখনো মুখে মাস্ক দিয়ে রাখতে অস্বস্তি হয়, মনে হয় মুখ থেকে মাস্ক সরিয়ে ফেলি।কথাবার্তার সময়, যখন সব থেকে বেশি মাস্কের ব্যবহার প্রয়োজন, সে সময়ই মাস্ক সরিয়ে রাখেন। এই রকম অবস্থায় আমি আপনাদের মনে করিয়ে দেবো ౼আপনি মাস্কের জন্য অস্বস্তি অনুভব করবেন, মনে হবে যে খুলে ফেলি, মুহূর্তের জন্য মনে করার চেষ্টা করুন যে চিকিৎসক, নার্স౼ আমাদের করোনা যোদ্ধাদের কথা মনে করুন, দেখবেন তাঁরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মাস্ক পরে থাকছেন আমাদের বাঁচানোর জন্য ৮ ঘন্টা ১০ ঘন্টা মাস্ক পরে থাকছেন, তো এঁদের কি কষ্ট হয় না! ওঁদের কথা একটু মনে করুন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে কোনও ক্ষেত্রেই শিথিল হলে চলবে না,কাউকে তা করতে দেওয়াও যাবে না।একদিকে করোনার বিরুদ্ধে সচেতনতা ও সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, আবার অন্যদিকে ব্যবসা,অফিস,পড়াশোনা যে কাজই আমরা করিনা কেন সেখানেও গতি আনতে হবে, সেখানেও এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। বন্ধুগণ, করোনার সময়ে আমাদের গ্রামাঞ্চল সারা দেশকে পথ দেখিয়েছে। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের, গ্রাম পঞ্চায়েতের নানান কর্মকাণ্ডর খবর পাওয়া যাচ্ছে। জম্মুতে ত্রেবা গ্রাম পঞ্চায়েত আছে, সেখানকার পঞ্চায়েত প্রধান বলবীর কাউর। আমি খবর পেয়েছি, তিনি তাঁর পঞ্চায়েত এলাকায় একটা ত্রিশ বেডের কোয়ারেন্টাইন সেন্টার বানিয়েছেন, পঞ্চায়েত অফিসে আসার রাস্তায় জলের ব্যবস্থা করেছেন, লোকজনের হাত ধুতে যেন অসুবিধে না হয় তার ব্যবস্থা করেছেন। শুধু এটুকু নয়, বলবীরজী ভলেন্টিয়ারদের নিয়ে নিজের কাঁধে স্প্রে পাম্প নিয়ে পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত পুরো এলাকা ও আসেপাশের এলাকা জীবাণুমুক্ত করেছেন। এমনই আরেকজন কাশ্মীরী মহিলা পঞ্চায়েত প্রধান আছেন গান্দরওয়ালের চৌঁটলিবারের জৈতুনা বেগম। জৈতুনা বেগম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁদের পঞ্চায়েত যেমন করোনার বিরুদ্ধে জবরদস্ত লড়াই চালাবে আবার সেই সঙ্গে উপার্জনের সুযোগও তৈরি করবে। উনি যেমন বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন, নিখরচায় রেশনের ব্যবস্থা করেছেন আবার গ্রামবাসীদের শস্যবীজ ও সারও দিয়েছেন,যাতে কিনা চাষীদের ক্ষেতে,খামারে কাজে কোনো অসুবিধে না হয়। বন্ধুগণ, কাশ্মীর থেকে আরেকটা অনুপ্রেরণাজনক ঘটনার কথা জেনেছি, কাশ্মীরের অনন্তনাগের মিউনিসিপ্যাল প্রেসিডেন্ট শ্রীমান মোহাম্মদ ইকবাল। ওঁর নিজের এলাকায় জীবাণুমুক্ত করার জন্য স্প্রেয়ারের প্রয়োজন ছিলো এবং উনি বুঝতে পেরেছিলেন স্প্রেয়ার অন্য জায়গা থেকে আনাতে হবে এবং তার দাম পড়বে কমসে কম ছ’ লাখ টাকা, মোহাম্মদ ইকবাল কি করলেন౼ নিজেরাই স্প্রেয়ার বানিয়ে ফেললেন এবং খরচ হলো মাত্র ৫০,০০০ টাকা। এরকম আরও কতো যে উদাহরণ রয়েছে, দেশের বিভিন্ন কোন থেকে এসে হাজির হচ্ছে, প্রত্যেকেই অভিনন্দন যোগ্য। প্রতিবন্ধকতা এসেছে কিন্তু মানুষ সর্ব শক্তি দিয়ে তার মোকাবিলাও করে চলেছেন।

আরও পড়ুন -  চাচা-চাচী এমন কাজ করলেন গ্রামে ক্ষেতের পাশে, ভাইরাল ভিডিও পোস্ট করতেই, Video Watch

আমার প্রিয় দেশবাসীরা, সঠিক পদক্ষেপ, সদর্থক পদক্ষেপ নিতে পারলে বিপদের সময় অনেক উপকার হয়। এই করোনার সময়ে দেখা গেলো আমাদের যুবসমাজ,নারী সমাজ নিজেদের মেধা ও দক্ষতার নতুন নতুন প্রয়োগ করেছেন। যেমন, বিহারের অনেক মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী মধুবণি পেইন্টিং দিয়ে মাস্ক বানানো শুরু করেছে। আর দেখতে দেখতে সেই মাস্ক অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে। একদিকে এই মাস্ক. যেমন শিল্পকলার সাবেক ঐতিহ্যকে পরিচিত করাচ্ছে আবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার সঙ্গে উপার্জনের পথ-ও দেখাচ্ছে। আপনারা জানেন উত্তরপূর্ব অঞ্চলে প্রচুর বাঁশ হয়,সেই বাঁশ থেকে ত্রিপুরা, মণিপুর, অসমের কারিগররা কি দারুণ উচ্চমানের জলের বোতল ও টিফিন বাক্স তৈরি শুরু করেছেন। এগুলোর গুনমান দেখলে আপনি বিশ্বাসই করতে পারবেন না যে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা বোতল এত চমৎকার হতে পারে। উপরন্তু এগুলি পরিবেশবান্ধবও বটে। এগুলো যখন তৈরি হয়, বাঁশ ব্যবহার করার আগে নিম ও অন্যান্য ঔষধীর সঙ্গে সেদ্ধ করা হয়, যাতে এর মধ্যে ঔষধের গুন পাওয়া যায়। ছোট ছোট স্থানীয় উৎপাদন থেকে কি করে বড় সাফল্য পাওয়া যায় তার উদাহরণ আমরা ঝাড়খণ্ডে দেখেছি। ঝাড়খণ্ডের বিশুনপুর গ্রামে তিরিশটির বেশি গোষ্ঠী মিলে লেমনগ্রাসের চাষ করছে। লেমনগ্রাস মাত্র চার মাসে তৈরি হয়ে যায় এবং এর তেল বাজারে ভাল দামে বিক্রি হয়। আজকাল এর প্রচুর চাহিদাও আছে। আমি দেশের দুটি অঞ্চলের কথা বলতে চাই। এই দুটি জায়গা পরস্পরের থেকে হাজারো কিলোমিটার দূরে কিন্তু ভারতকে আত্মনির্ভর বানাতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছে। এই দুই জায়গা – এক হল লাদাখ আর অন্যটি হল কচ্ছ। লেহ লাদাখের নাম শুনলেই সু-উচ্চ পাহাড় আর নয়নাভিরাম পার্বত্য অঞ্চলের দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে, হিমেল হাওয়ার স্পর্শ অনুভব করতে পারা যায়। আর কচ্ছ মানে দিগন্তবিস্তৃত ধুধু মরুভূমি, কোথাও কোন উদ্ভিদের চিহ্ন নেই। লাদাখে এক বিশেষ ধরনের ফল পাওয়া যায়, যার নাম চুলি বা অ্যাপ্রিকট। এর চাষ এলাকার অর্থনিতির আমূল পরিবর্তন করতে পারে কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সরবরাহ শৃঙ্খল, খারাপ আবহাওয়া প্রভৃতি নানা সমস্যায় জেরবার হতে থাকে এর ফলন। ফলনের যাতে ন্যূনতম ক্ষতি হয় তাই আজকাল এক নতুন উদ্ভাবনের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। এটি একটি দ্বৈত ব্যবস্থা, যার নাম হল, সোলার অ্যাপ্রিকট ড্রায়ার ও হিটিং সিস্টেম। এটি আপ্রিকট ও অন্যান্য ফল প্রয়োজন মত ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে শুকাতে পারে। আগে যখন আপ্রিকট ফল ক্ষেতের পাশে শুকানো হত, তখন অনেক ফল নষ্ট ত হতই, ধুলো, ময়লা, জলের জন্যে তার গুনমানও খারাপ হত। অন্যদিকে, কচ্ছতে ড্রাগন ফলের চাষ করার জন্য প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অনেকেই শুনে অবাক হন- কচ্ছ আর ড্রাগনফল। কিন্তু আজকাল সেখানে বহু চাষীভাই এই কাজের সাথে যুক্ত এবং কম জমিতে কি করে বেশি ফলন সম্ভব হয় সেই নিয়ে নানা রকম উদ্ভাবনও হচ্ছে। আমি জানতে পেরেছি ড্রাগনফলের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। কচ্ছের চাষীভাইদের সংকল্প যে দেশকে যেন ড্রাগনফলের আমদানি না করতে হয় – একেই ত বলে আত্মনির্ভরশীল হওয়া।

বন্ধুরা, যখন আমরা কিছু নতুন করার কথা ভাবি, উদ্ভাবনের বিষয়ে চিন্তা করি, তখন এমন কাজ ও সম্ভব হয় যা আমরা আগে কখনো ভাবিনি। যেমন ধরুন বিহারের কিছু যুবক, যারা সামান্য চাকরি করত। একদিন তারা সিদ্ধান্ত নেয় তারা পার্ল মানে মুক্তোর চাষ করবে। ওদের অঞ্চলের লোকেদের এই বিষয় খুব একটা জানা ছিল না। এরা আগে সমস্ত খবরাখবর নেয়, জয়পুর ও ভুবনেশ্বর গিয়ে প্রশিক্ষণ ও নেয়। তারপর নিজেদের গ্রামেই চাষ আরম্ভ করে। আজ এরা নিজেরা যথেষ্ট রোজগার তো করছেনই উপরন্তু এরা অন্য রাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের মুজফফরপুর, বেগুসরাই ও পাটনাতে প্রশিক্ষণ দেওয়াও শুরু করেছে। বহু মানুষের এর ফলে আত্মনির্ভর হওয়ার পথ খুলে গেছে।

বন্ধুরা, আর কয়েকদিন পর রাখীবন্ধনের পবিত্র উৎসব আসবে। আমি দেখছি, বেশ কিছু মানুষ ও সংস্থা এবারের রাখীবন্ধন উৎসব অন্যরকম ভাবে পালন করার পরিকল্পনা করছেন। কিছু মানুষ একে ভ্যোকাল ফর ল্যোকাল এর সঙ্গেও যুক্ত করছেন। কথাটা ঠিকই। আমাদের উৎসব, পালা পার্বণে আমাদের কাছাকাছি লোকেদের ব্যবসার উন্নতি হলে, তাদের উৎসব সার্থক হলে তবেই ত আমরাও উৎসবকে যথার্থ উপভোগ করতে পারি। সমস্ত দেশবাসীকে রাখীবন্ধনের অনেক অনেক শুভকামনা।

বন্ধুরা, সাতই আগস্ট ন্যাশনাল হ্যান্ডলুম ডে। আমাদের হ্যান্ডলুম ও হস্তশিল্প হাজারো বছরের গৌরবজ্জল ইতিহাসের উজ্জ্বল নিদর্শন। আমাদের উচিৎ এর যত বেশি সম্ভব ব্যবহার ও প্রচার। ভারতের হ্যান্ডলুম ও হ্যান্ডিক্রাফট কত সমৃদ্ধ, কত রকমের এই বিষয়ে দুনিয়ার মানুষে যত জানবে, ততই আমাদের স্থানীয় কারিগর ও তাঁতশিল্পীরা উপকৃত হবে।

বন্ধুরা, বিশেষ করে আমার যুবসম্প্রদায়ের বন্ধুরা, আমাদের দেশ বদলাচ্ছে। কিভাবে বদলাচ্ছে? কত শীঘ্র বদলাচ্ছে? কোন কোন ক্ষেত্রে বদলাচ্ছে? এক সদর্থক দৃষ্টি দিয়ে দেখলে আমরা নিজেরাই হতবাক হয়ে যাব। একটা সময় ছিল যখন খেলাধুলা হোক বা অন্য ক্ষেত্র, অধিকাংশ লোক হয় বড় বড় শহর থেকে হতেন, নাহলে নামিদামি স্কুল কলেজ থেকে, নাহলে হতেন ধণী, সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য। এখন দেশে পরিবর্তন হচ্ছে। গ্রাম তথা ছোট শহর থেকে, সামান্য পরিবার থেকেও যুবকযুবতীরা এগিয়ে আসছেন, সাফল্যের শিখরে পৌঁছচ্ছে্ন। এরা বহু বাধাবিপত্তি সত্তেও নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করছেন। এরকমই কিছু উদাহরণ আমরা সম্প্রতি বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলে দেখতে পেয়েছি।

আজ ‘মন কি বাত’-এ আমরা এমন কিছু প্রতিভাবান ছেলে-মেয়ের সঙ্গে কথা বলবো। এমনি এক প্রতিভাবান মেয়ে কৃত্তিকা নান্দল। কৃত্তিকা হরিয়ানার পানীপথের বাসিন্দা।

মোদী জী – হ্যালো, কৃত্তিকা, নমস্কার।
কৃত্তিকা – নমস্কার স্যার।
মোদী জি – এতো ভাল ফলাফলের জন্য আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন।
কৃত্তিকা – ধন্যবাদ স্যার।
মোদী জী – এই কয়েক দিন ধরে আপনি ফোন কলে এতো শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছেন যে ক্লান্ত হয়ে গেছেন তাই না? প্রচুর ফোন কল পেয়েছেন নিশ্চয়ই।
কৃত্তিকা – হ্যাঁ স্যার।
মোদী জি – এবং যারা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন আপনাকে তারাও নিশ্চই গর্ববোধ করেন যে তারা আপনার পরিচিত। কেমন অনুভূতি হচ্ছে আপনার?
কৃত্তিকা – স্যার খুব ভাল লাগছে। আমার অভিভাবকরা আমাকে নিয়ে গর্বিত দেখে আমারও গর্ববোধ হচ্ছে।
মোদী জি – আচ্ছা, আপনার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা কে?
কৃত্তিকা – স্যার, আমার মা আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
মোদী জী – বাহ, আচ্ছা, আপনি আপনার মায়ের কাছ থেকে কী শিখছেন?
কৃত্তিকা – স্যার তিনি তার জীবনে এতো কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন, তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। তিনি খুব সাহসী। আমি তার থেকেই অনুপ্রেরণা পাই, তার মতোই হতে চাই।
মোদী জী – আপনার মা কতদূর পড়াশুনো করেছেন?
কৃত্তিকা – স্যার, বিএ পাস করেছেন।
মোদী জী – আচ্ছা বিএ।
কৃত্তিকা – হ্যাঁ স্যার।
মোদী জী- আচ্ছা। তাহলে তো উনি নিশ্চই আপনাকে পড়ান?
কৃত্তিকা – স্যার। সমাজে কিভাবে চলতে হয়, সে সম্পর্কে উনি আমাকে শেখান।
মোদী জী- উনি আপনাকে বকাঝকা করেন?
কৃত্তিকা – হ্যাঁ স্যার, বকাঝকাও করেন।
মোদী জী- আচ্ছা ভবিষ্যতে আপনি কি করতে চান?
কৃত্তিকা – স্যার, আমি চিকিত্সক হতে চাই।
মোদী জী- আরে বাহ্ !
কৃত্তিকা – এম. বি. বি. এস. করতে চাই।
মোদী জী- ডাক্তার হওয়া সহজ কাজ নয়।
কৃত্তিকা – হ্যাঁ স্যার।
মোদী জী – ডিগ্রি তো আপনি পেয়ে যাবেন কারণ আপনি খুবই মেধাবি। কিন্তু, একজন চিকিত্সকের জীবন বেশ কঠিন, তাকে সমাজের প্রতি সমর্পিত হতে হয়।
কৃত্তিকা – হ্যাঁ স্যার।
মোদী জী – নিশ্চিন্তে রাতে ঘুমাতে পারবেন না, শান্তিতে থাকতে পারবেন না।
কখনও কখনও রাত বিরেতে কোনও রোগীর কল আসে, তারপরে হাসপাতাল থেকে ফোন কল আসে। তখন হাসপাতালে দৌড়াতে হবে। ২৪ ঘণ্টা, তিনটি পঁয়ষট্টি দিনই ডাক্তার এর কাজ থাকে। ডাক্তার জনগণের সেবায় সমর্পিত প্রাণ ।
কৃত্তিকা- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জী – এবং জীবনের ঝুঁকিও রয়েছে, কেন আপনি কখনই জানেন না, আজকাল এতো ধরণের রোগ রয়েছে, তার চিকিৎসা করতে গেলে প্রাণের আশঙ্কা তো হতেই পারে ।
কৃত্তিকা- সেটা ঠিক স্যার।
মোদী জী – আচ্ছা কৃত্তিকা, হরিয়ানা তো খেলাধুলায় গোটা দেশের কাছে একটি অনুপ্রেরণাদায়ক রাজ্য।
কৃত্তিকা- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জি – তা আপনিও কোন খেলাতে অংশ নেন নাকি?খেলাধুলাতে আগ্রহ আছে আপনার?
আপনার কি কোন খেলাধুলো পছন্দ?
কৃত্তিকাঃ- স্যার, স্কুলে বাস্কেটবল খেলতাম।
মোদী জীঃ- আচ্ছা, আপনার উচ্চতা কত? আপনি লম্বা?
কৃত্তিকাঃ- না স্যার, পাঁচ ফুট দুই আমি।
মোদী জীঃ- আচ্ছা তাহলে আপনার খেলার প্রতি ভাললাগা আছে?
কৃত্তিকাঃ- স্যার, ওটা তো শুধুমাত্র একটা প্যাশন, সেই জন্যে খেলি।
মোদী জীঃ- আচ্ছা, আচ্ছা, তাহলে চলুন কৃত্তিকা, আমার তরফ থেকে আপনার মা কে প্রণাম জানাবেন, উনি আপনাকে এরকম যোগ্য করে তুলেছেন, আপনার জীবন গঠন করেছেন। আপনার মা কে প্রণাম এবং আপনাকে অনেক-অনেক অভিনন্দন, অনেক-অনেক শুভকামনা।
কৃত্তিকাঃ- ধন্যবাদ, স্যার।
চলুন এবার আমরা যাই কেরালার এরনাকুলামে। কেরালার এক যুবকের সঙ্গে কথা বলতে।
মোদী জীঃ- হ্যালো।
বিনায়কঃ- হ্যালো স্যার, নমস্কার।
মোদী জীঃ- তাহলে বিনায়ক, অভিনন্দন।
বিনায়কঃ- হ্যাঁ, ধন্যবাদ স্যার।
মোদী জীঃ- শাবাশ বিনায়ক, শাবাশ।
বিনায়কঃ- হ্যাঁ, ধন্যবাদ স্যার।
মোদী জীঃ- হাউ ইস যোশ?
বিনায়কঃ –হাই স্যর।
মোদী জীঃ- আপনি কি কোন খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত?
বিনায়কঃ- ব্যাডমিন্টন।
মোদী জীঃ- ব্যাডমিন্টন।
বিনায়কঃ- হ্যাঁ, ইয়েস।
মোদী জীঃ- আপনি কি স্কুলেই খেলেন, নাকি অন্য কোথাও থেকে কোন প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন?
বিনায়কঃ- না স্কুলেই আমরা কিছু প্রশিক্ষণ পেয়েছি।
মোদী জী:- হুম, হুম।
বিনায়কঃ- আমাদের শিক্ষকদের থেকে।
মোদী জী:- হুম, হুম।
বিনায়কঃ- যাতে আমরা বাইরে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাই।
মোদী জীঃ- দারুণ।
বিনায়কঃ- স্কুল থেকেই পেয়েছি।
মোদী জীঃ- আপনি কটা রাজ্যে গেছেন?
বিনায়কঃ- আমি কেবলমাত্র কেরল এবং তামিলনাড়ুতে গেছি।
মোদী জীঃ- শুধু কেরল এবং তামিলনাড়ু।
বিনায়কঃ- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জীঃ- তাহলে আপনার কি দিল্লী আসার সুযোগ পেলে ভাল লাগবে?
বিনায়কঃ- হ্যাঁ স্যার, এখন আমি দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করছি।
মোদী জীঃ- বাহ, আপনি তাহলে দিল্লী আসছেন?
বিনায়কঃ- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জীঃ- আচ্ছা আমায় বলুন, যে সব সহপাঠীরা ভবিষ্যতে বোর্ডের পরীক্ষা দেবেন তাদের জন্য কী আপনার কোন বার্তা আছে?
বিনায়কঃ- কঠোর পরিশ্রম এবং সময়ের সদ্ব্যবহার।
মোদী জীঃ- তার মানে সময়ের একদম সঠিক ব্যবস্থাপনা।
বিনায়কঃ- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জীঃ- বিনায়ক, আমি আপনার শখগুলি জানতে চাই।
বিনায়কঃ- ব্যাডমিন্টন এবং রোইং।
মোদি জি: আপনি কি সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয়?
বিনায়ক: না আমাদের স্কুলে ইলেকট্রনিক্স আইটেম এবং গেজেট ব্যবহার করার অনুমতি নেই।
মোদি জি: তাহলে তো আপনি সৌভাগ্যবান!
বিনায়ক: হ্যাঁ স্যার।
মোদি জি: খুব ভালো বিনায়ক। আপনাকে অনেক শুভকামনা এবং উইশ ইউ অল দ্যা বেস্ট।
বিনায়ক: থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।
চলুন এবার উত্তরপ্রদেশে যাওয়া যাক। উত্তরপ্রদেশে অমরোহার শ্রীমান উসমান সৈফির সঙ্গে কথা বলা যাক।
মোদীজি: হ্যালো উসমান। আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
উসমান: ধন্যবাদ স্যার।
মোদি জি: আচ্ছা উসমান আপনি বলুন আপনি যেমনটি চেয়ে ছিলেন ঠিক তেমনই রেজাল্ট হয়েছে নাকি প্রত্যাশার থেকে কিছুটা কম পেয়েছেন?
উসমান: না, আমি ঠিক যেমন চেয়েছিলাম, তেমনই হয়েছে। আমার বাবা-মাও খুব খুশী।
মোদী জী – বাহ, খুব ভালো। আচ্ছা পরিবারে আপনার ভাইয়েরাও কি আপনার মতই প্রখর মেধাবী নাকি আপনি একাই এত মেধাবী?
উসমান: না, কেবল আমিই, আমার ভাই একটু চঞ্চল প্রকৃতির।
মোদি জি: হা হা হা ( হাসি)
উসমান: পরিবারের বাকিরা আমায় নিয়ে খুব খুশীই।
মোদি জি: আচ্ছা, তাই নাকি! আচ্ছা পড়াশোনা করার সময় আপনার প্রিয় বিষয় কি ছিল?
উসমান: ম্যাথামেটিক্স( গণিত বিদ্যা)
মোদি জি: বাহ বাহ! তাহলে অংক করতে নিশ্চয়ই ভালো লাগতো? কি কারণে? কোন শিক্ষক কী আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছিল?
উসমান: হ্যাঁ, আমাদের এক সাবজেক্ট টিচার রজত স্যার!উনি আমাকে উৎসাহিত করেছিলেন এবং উনি খুব ভালো পড়ান, আর তাছাড়া শুরু থেকেই ম্যাথামেটিক্স আমার খুব ভালো লাগতো কারণ ম্যাথামেটিক্স একটা ভীষণ ইন্টারেস্টিং বিষয়।
মোদি জি: হুম, হুম।
উসমান: যত বেশি অংক করি তত বেশী আগ্রহ জন্মায় ঠিক এই কারণেই এটা আমার ফেভারিট সাবজেক্ট।
মোদীজি: হুম, আপনি কি জানেন একটা অনলাইন “বৈদিক ম্যাথমেটিক্স” এর ক্লাস চলছে?
ওসমান: হ্যাঁ স্যার।
মোদি জি: আচ্ছা আপনি কি কখনো এটি ট্রাই করেছেন?
উসমান: না স্যার এখনো করা হয়নি।
মোদি জি: আপনি দেখবেন, আপনার বন্ধু-বান্ধবের মনে হবে আপনি যেন জাদুকর, কারণ বৈদিক ম্যাথামেটিক্সের সাহায্যে আপনি কম্পিউটারের স্পিডে গণনা করতে পারবেন। খুবই সরল পদ্ধতি, আর এখন তা অনলাইনেও সহজলভ্য।
উসমান: হ্যাঁ, স্যার।
মোদিজী: যেহেতু আপনার গণিতশাস্ত্রে আগ্রহ আছে ফলে অনেক নতুন নতুন জিনিস আপনি দিতে পারেন।
উসমান: হ্যাঁ, স্যার।
মোদিজী: উসমান, আপনি অবসর সময় কী করেন?
উসমান: অবসর সময় আমি কিছু না কিছু লিখি। লেখার প্রতি আমার খুব আগ্রহ রয়েছে।
মোদিজী: আরে বাঃ! অর্থাৎ আপনি গণিতশাস্ত্রেও আগ্রহী আবার সাহিত্যেও আগ্রহী?
উসমান: হ্যাঁ, স্যার।
মোদিজী: কী লেখেন আপনি? কবিতা, শায়েরী…?
উসমান: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সম্পর্কিত যেকোনো বিষয় নিয়ে লিখি।
মোদিজী: আচ্ছা!
উসমান: নতুন নতুন তথ্য জানা যায়। যেমন জিএসটি চালু হওয়া বা আমাদের নোট বন্দি সবকিছু।
মোদিজী: আরে বাঃ! তা আপনি কলেজে পড়ার জন্য ভবিষ্যত পরিকল্পনা তৈরি করছেন?
উসমান: স্যার আমার জিইই মেন-এর ফার্স্ট টাইম আটেম্প্ট হয়েছে আর এখন আমি সেপ্টেম্বরে সেকেন্ড আটেম্পট এ বসব। আমার মূল লক্ষ্য আমি প্রথমে আইআইটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেব, তারপর সিভিল সার্ভিসে যাব এবং একজন আইএএস হব।
মোদিজী: আরে বাঃ! আচ্ছা আপনার কি টেকনোলজিতেও আগ্রহ আছে?
উসমান: হ্যাঁ, স্যার। সেজন্য আমি প্রথম বার বেস্ট আই আই টি-র তথ্য প্রযুক্তি বেছে নিয়েছি।
মোদি জী: আচ্ছা ওসমান, আমার তরফ থেকে অনেক শুভেচ্ছা। আপনার ভাইয়ের দুষ্টুমিতে আপনার সময় নিশ্চয়ই ভালো কাটবে। আপনার বাবা-মাকে আমার তরফ থেকে প্রণাম জানাবেন। তারা আপনাকে এভাবে সুন্দর সুযোগ দিয়েছেন, আপনার মনোবল বাড়িয়েছেন। আর আমার এটা জেনে ভালো লাগছে যে আপনি পড়াশোনার পাশাপাশি সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়েও পড়াশোনা, চর্চা করছেন এবং লিখছেনও। দেখুন লেখার উপকার হল যে তাতে আপনার বিচারবোধে তীক্ষ্ণতা আসে। অনেক ভালো গুণ আছে লেখার। আচ্ছা, তাহলে অনেক অনেক অভিনন্দন আমার তরফ থেকে।
উসমান: ধন্যবাদ, স্যার।

আরও পড়ুন -  Adrit-Kaushambi: সিদ্ধার্থের প্রেম জমে ক্ষীর দিদিয়ার সাথে অনস্ক্রিনে, দর্শকমহলের একাংশ ঝলক দেখে নিশ্চত

আসুন, চলুন এবার একদম নিচে দক্ষিণে যাওয়া যাক। তামিলনাড়ুর নামাক্কলের কন্যা কনিগ্গার সঙ্গে কথা বলি, আর কনিগ্গার কথা তো খুবই উৎসাহব্যঞ্জক!

মোদিজী: কনিগ্গা জী, (বানাক্কাম) নমস্কার!
কনিগ্গা: (বানাক্কাম) নমস্কার স্যার।
মোদিজী: কেমন আছেন?
কনিগ্গা: ভালো, স্যার।
মোদীজি- প্রথমেই জানাই অভিনন্দন তোমাকে দুর্দান্ত সাফল্যের জন্য।
কনিগ্গা- ধন্যবাদ স্যার।
মোদিজি- আমি যখনই নামাক্কাল জায়গাটার নাম শুনি, আমার অঞ্জনেয়ার মন্দিরের কথা মনে পড়ে।
কনিগ্গা- হ্যাঁ স্যার।
মোদীজি- এবার থেকে তোমার সঙ্গে আলাপ হওয়ার দিনটাও মনে পড়বে।
কনিগ্গা- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জী- আবারও তোমাকে অভিনন্দন জানাই।
কনিগ্গা- অনেক ধন্যবাদ স্যার।
মোদীজী- তুমি পরীক্ষার জন্য খুবই পরিশ্রম করেছো, কেমন ছিল সেই প্রস্তুতির অভিজ্ঞতা?
কনিগ্গা- স্যার, আমরা প্রথম দিন থেকেই পরিশ্রম করছি, আমি এইরকম কিছু আশা করিনি, কিন্ত আমি ভালো লিখেছিলাম, তাই ভালো ফল হয়েছে।
মোদী জী- তুমি কিরকম আশা করেছিলে?
কনিগ্গা- চারশো পঁচাশি কিংবা চারশো ছিয়াঁশি, এইরকম কিছু একটা ভেবেছিলাম।
মোদী জী- আর এখন?
কনিগ্গা- চারশো নব্ব্ই।
মোদী জী- তাহলে এখন, তোমার পরিবারের লোকেদের, তোমার শিক্ষকদের, প্রতিক্রিয়া কেমন?
কনিগ্গা- তাঁরা, সবাই খুব খুশি, খুবই গর্বিত।
মোদী জি- তোমার প্রিয় বিষয় কি?
কনিগ্গা-অঙ্ক।
মোদী জী- ওহহ! তোমার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কি?
কনিগ্গা- আমি ডাক্তার হতে চাই, যদি সম্ভব হয় তাহলে এএফএমসি মানে, সশস্ত্র বাহিনীর মেডিক্যাল কলেজে পড়তে চাই।
মোদী জী- তোমার পরিবারে আর কেউ ডাক্তার না অন্য কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত?
কনিগ্গা- না স্যার, আমার বাবা একজন ড্রাইভার, কিন্ত আমার দিদি ডাক্তারী পড়ছে।
মোদী জী- আরে বাহ! তাহলে তো আমি প্রথমে তোমার বাবাকে জানাই প্রণাম। তিনি তোমার দিদির এবং তোমাকে খুবই যত্ন করে বড়ো করছেন। তিনি অত্যন্ত ভালো কাজ করছেন।
কনিগ্গা- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জী- আর তিনি প্রত্যেকের জন্য অনুপ্রেরণা।
কনিগ্গা- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জী- তাহলে আবার তোমাকে, তোমার দিদি কে, তোমার বাবাকে, তোমার পরিবারকে জানাই অনেক অভিনন্দন।
কনিগ্গা- অনেক ধন্যবাদ স্যার।

আরও পড়ুন -  তামিল অভিনেতা বিবেক প্রয়াত

বন্ধুগণ, এইরকম আরও কতো যুব বন্ধু আছে, যাঁদের মনের জোর, সফলতার কাহিনী আমাদের কঠিন পরিস্থিতিতেও অনুপ্রেরণা দেয়। আমার ইচ্ছে ছিল যত বেশি সংখ্যক যুব বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু সময়েরও নিজস্ব সীমা আছে। আমি সকল তরুণ-তরুণী বন্ধুদের অনুরোধ করছি যে তারা যেন নিজেদের জীবনের অনুপ্রেরণামূলক ঘটনাবলী যা দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে, নিজেদের ভাষায় আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়।

আমার প্রিয় দেশবাসী, সাত সমুদ্র পারে, ভারতবর্ষ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে, ‘সুরিনাম’ নামে একটি ছোট দেশ আছে। ‘সুরিনামের’ সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুবই গভীর। প্রায় একশ বছরেরও সময় আগে, ভারত থেকে মানুষজন ওই দেশে গিয়েছিল এবং সেই দেশকেই আপন করে নিয়েছিল। কত মানুষের চতুর্থ, পঞ্চম প্রজন্মও ওখানে আছে। আজ সুরিনামের প্রায় এক চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ ভারতীয় বংশোদ্ভুত। আমরা কি জানি যে ওই দেশের সাধারণ ভাষা গুলির মধ্যে একটি ভাষা ‘সরনামি’, যা আসলে ভোজপুরি ভাষারই এক প্রকার রূপান্তর। এই ধরনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য আমরা ভারতীয়রা গর্ব অনুভব করি। সাম্প্রতিককালে শ্রী চন্দ্রিকা প্রসাদ সন্তোখী ‘সুরিনামের’ নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। উনি ভারতের বন্ধু এবং উনি ২০১৮এ আয়োজিত ভারতীয় বংশোদ্ভুতদের সাংসদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। শ্রী চন্দ্রিকা প্রসাদ সন্তোখী নিজের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বেদ মন্ত্র উচ্চারণ এর মাধ্যমে শুরু করেছিলেন। সেটা সংস্কৃত ভাষায় উচ্চারণ করেছিলেন। উনি বেদের উল্লেখ করে “ওম শান্তি শান্তি শান্তি” বলার মাধ্যমে নিজের শপথগ্রহণ সম্পন্ন করেছিলেন। নিজের হাতে বেদ নিয়ে তিনি বলেছিলেন “আমি চন্দ্রিকা প্রসাদ সন্তোখী”, তারপর উনি কি বলেছিলেন জানেন আপনারা ? উনি বেদের অন্তর্গত একটি শ্লোক উচ্চারণ করেছিলেন। উনি বলেছিলেন-

“ওম অগ্নে ব্রতপতে ব্রতম্ চরিষ্যামি তচ্ছকেয়ম তন্মে রাধ্যতাম।
ইদমহমনৃতাত সত্যমুপৈমি।”

অর্থাৎ, “হে অগ্নি, সংকল্পের দেবতা, আমি একটি প্রতিজ্ঞা করছি। আমায় এর জন্য শক্তি ও সামর্থ্য প্রদান করুন। আমায় অসত্যের থেকে দূরে থাকার এবং সত্যের কাছে যাওয়ার আশীর্বাদ প্রদান করুন”। সত্যিই এটা আমাদের সকলের কাছে খুবই গৌরবান্বিত হওয়ার বিষয়। আমিও শ্রী চন্দ্রিকা প্রসাদ সন্তোখী কে অভিনন্দন জানাচ্ছি, আর নিজের দেশের সেবা করার জন্য ১৩০ কোটি ভারতবাসীর তরফ থেকে শুভকামনা জানাচ্ছি।

আমার প্রিয় দেশবাসী, এটা বর্ষা ঋতুর সময়। গতবারে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে বর্ষাকালে বিভিন্ন আবর্জনা ও তাদের থেকে ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রকোপ বাড়ছে। হাসপাতালেও ভিড় বাড়ছে। তাই আপনারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বিশেষ নজর দিন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বর্ধনকারী খাবার, আয়ুর্বেদিক ঔষধি খেতে থাকুন। এই করোনা সংক্রমনের সময় অন্যান্য রোগ থেকেও দূরে থাকুন। আমাদের যাতে হাসপাতালে না যেতে হয়, সেটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

বন্ধুরা, বর্ষাকালে দেশের একটা বড় অংশের মানুষ বন্যার সঙ্গেও লড়াই করছেন। বিহার, অসমের মত রাজ্য গুলোতে বন্যার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ একদিকে করোনা সংক্রমণ, অন্যদিকে এই ধরনের কঠিন পরিস্থিতি রয়েছে। এই সময় সমস্ত রাজ্যের সরকার, এনডিআরএফ এর সদস্যরা, রাজ্যের আপতকালীন নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সদস্যরা, বিভিন্ন সমাজসেবী সংস্থা সকলে একসঙ্গে মিলে এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য লড়াই করছেন। সমগ্র দেশ এই ধরনের জরুরী কালীন পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের পাশে আছে।

বন্ধুরা, পরের মন কি বাত এ আমাদের দেখা হওয়ার আগেই ১৫ই আগস্ট আসছে। এইবার ১৫ ই আগস্টও অন্য রকম পরিস্থিতিতে পালন হবে। করোনা মহামারীর জরুরীকালীন অবস্থার মধ্যেই পালন হবে।

আমার সমস্ত যুবকযুবতী বন্ধুদের কাছে, সমগ্র দেশবাসীর কাছে অনুরোধ যে, আমরা স্বাধীনতা দিবসে এই মহামারী থেকে মুক্তির প্রতিজ্ঞা নিই। আত্মনির্ভর ভারতের সংকল্প নিই। কিছু নতুন শেখার ও শেখানোর প্রতিজ্ঞা নিই। আমাদের কর্তব্য পালনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকি। আমাদের দেশ আজ যে উচ্চতার শিখরে পৌঁছেছে, তা অনেক মহান ব্যক্তির তপস্যার ফল, যাঁরা দেশ গঠনের জন্য নিজেদের জীবনের বলিদান দিয়েছিলেন। সেইরকম মহান মানুষদের মধ্যে একজন ছিলেন লোকমান্য তিলক। ১লা আগস্ট ২০২০তে লোকমান্য তিলকের শততম মৃত্যুবার্ষিকী। ওঁর জীবন আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা, আমাদের প্রত্যেককেই কিছু শেখায়। এর পরে যখন আমাদের দেখা হবে, আবার অনেক কথা বলবো। একসঙ্গে মিলে কিছু নতুন শিখব ও সেটা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেব। আপনারা সবাই নিজের খেয়াল রাখবেন। নিজেদের পরিবারের খেয়াল রাখবেন। সুস্থ থাকুন। সমস্ত দেশবাসীকে আগামী উৎসবের দিনগুলোর জন্যে অনেক শুভকামনা জানাই। অনেক ধন্যবাদ। সূত্র – পিআইবি / ছবি – ফাইল।