33 C
Kolkata
Tuesday, April 30, 2024

এক টুকরো বেঁচে থাকা

Must Read

এক টুকরো বেঁচে থাকা

একি; তুমি এমন কাকভেজা হয়ে কোথা থেকে এলে?
এলাম, সে আমি যেখান থেকেই আসি না কেন, আগে দরোজাটা ছাড়বে তো!
ওহহ… এসো। এভাবে কেউ বৃষ্টিতে ভেজে এখন, ঠান্ডা লেগে জর টর বাঁধিয়ে বসলে করোনা আর দূরে থাকবে না। অন্তরে এসে জায়গা করে নেবে।
হোক, আমি মরলেই তো তুমি বেঁচে যাও।
কি সব বক বক করছো!
আমার কথা তো তোমার বক বক-ই মনে হবে।
মানেটা কি ঝগড়া করতে এসেছো নাকি? আর আজ এসেছো কেন? এই কয়েকটা দিন আমরা দেখা করবো না, কথা বলবো না, এমনটাই তো ঠিক করেছিলাম না?
রাখো তোমার ঠিক করাকরি, আমি তোমাকে না দেখে থাকতে পারবো না, কথা না বলে থাকতে পারবো না, ব্যাস!
এই কি হচ্ছে, আস্তে বল না, মা বাবা ঘরেই আছে।
তাঁদের বাসা, তাঁরাই তো থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক।
আরে …তুমি কি পাগল হলে; মুখ বন্ধ করে যা বলতে এসেছো বলে চলে যাও।
হা হা হা… মুখ বন্ধ করলে বলবো কেমন করে? আর তাছাড়া আমি এসেই যাওয়ার জন্য আসিনি। কিছু খেতে দাও আগে, আমি কাল থেকে কিছু খাইনি।
খাওনি! কিন্তু কেন?
তোমার জন্যই তো, তুমি তো শুধু ফার্নিসার পছন্দ করেই চলে এলে, কিন্তু সেগুলোকে ফ্লাটে তোলা, মোটামুটি ব্যাবহারযোগ্য করে সেট করা, জানি তুমি পরে সব তোমার পছন্দমতো গুছিয়ে নেবে। কিন্তু গিয়েই তো আর তা সম্ভব হবে না।
কিন্তু এর সাথে না খেয়ে থাকার সম্পর্ক কি?
আরে … ঠিক ঠাক করতে করতে ভুলেই গিয়েছিলাম আমার কিছু খাওয়া হয়নি।
এমন সময় দুর্বার মা ভেতর থেকে হাসতে হাসতে বেরিয়ে এসে বললেন, দুর্বা, কথা না বাড়িয়ে ওকে আগে গরম জল করে দে, ফ্রেস হয়ে নিক। আমি খাবার গরম করে ডাইনিং-এ দিচ্ছি।
এবার ধীমান একটু লজ্জা পেলো, তুমি আমাকে আগে বলবে না, মা জেগে আছেন? আমি তো ভেবেছি বাবা মা বুঝি দুপুরের ঘুম দিচ্ছেন।
আমি তো বললাম, কিন্তু তুমি পাত্তা দিলে? বক বক করেই গেলে। হয়েছে লজ্জা না পেয়ে এবার ওয়াসরুমে যাও আমি গরম জল করে দিচ্ছি। আমাদের গিজারটা কাজ করেছে না আজ কয়েকদিন ধরে।
ধীমান এতক্ষণে নিজের দিকে তাকিয়ে বলল, কিন্তু আমি ফ্রেস হয়ে পরবো কি?
ভেবো না, বিয়ে উপলক্ষে মা তোমার জন্য বেশ কয়েকটা ড্রেস কিনেছে। সেখান থেকেই একটা বের করে দিচ্ছি।
কি; আজই পরবো বিয়ের পোশাক?
আরে না, তোমাকে পাঞ্জাবী বা শেরওয়ানী পরতে হবে না। কিছু প্যান্ট-শার্ট কেনা হয়েছে, সেখান থেকে দিচ্ছি।
ওহহ তাই বলো, আমি ভাবলাম, আজই বুঝি ওসব পরে…টরে তোমাকে নিয়ে যেতে হবে।
নিয়ে যেতেই যদি হয় তো সমস্যা কি? চারদিন আগেই না হয় গেলাম।
আরে না; আজ তোমাক নিয়ে যাওয়া যাবে না। এখনো গ্যাসচুলা কেনা হয়নি, কেবল নেটওয়ার্ক লাগেনি…।
হা হা হা দুর্বা হাসতে হাসতে বলল, ঠিক আছে, ভয় পেও না। আমি আজ যাবও না। কার্ড ছাপিয়ে ধুমধাম করে বিয়ে না করলেও, সেদিন তো কিছু বন্ধু ও স্বজনকে আসতে বলা হয়েছে। তাঁদের আপ্যায়নের ব্যাবস্থাও করা হয়েছে। তাঁদের আমি বঞ্চিত করতে পারি না। আর তাছাড়া একটু বেশি বয়েসে বিয়ে করছি বলে কি আমি সাজগোছ করবো না? পার্লারে বুকিং দেয়া আছে বাবু…!
কি তুমি পার্লারে গিয়ে সেজে আসবে এই করোনার দিনে? আর তাছাড়া দুর্বা এই কাজটা না করলেই কি নয়? ওরা এমন করে বিয়ের কন্যাকে সাঁজায় যে অদ্ভুত ধরনের প্ল্যাস্টিক পুতুল মনে হয়। নিজের পরিচিত মানুষটাকে চেনাই যায় না!
এর আগে কয়টা বিয়ে করেছো?
মানে?
এই যে বললে, নিজের মানুষটাকে চেনাই যায়না।
আরে দূর; এজন্য কি নিজেকে বিয়ে করতে হয়, বন্ধু-বান্ধব পরিচিতজনের বিয়েতে কত দেখলাম। আমি আমার খালাতো বোনের বিয়েতে গিয়ে আমার বোনটাকেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একটা সঞ্চয়িতা আর বিষাদসিন্ধু নিয়ে গিয়েছিলাম উপহার হিসেবে। ভেবেছিলাম বোনটাকে আমি নিজহাতে উপহারটা দেবো, কিন্তু ওকে খুঁজে না পেয়ে যখন ঘুরে ঘুরে পাঁক খাচ্ছিলাম, তখন আমার খালা পাশে এসে বলল, তুই কি খুঁজচ্ছিস বাবা?
আমি যখন বললাম আমি বোনকে খুঁজে পাচ্ছি না, তখন তো খালাসহ আশেপাশের সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। কারণ আমার বোনটি আমার সামনেই বিয়ের স্টেজে ওর নির্ধারিত রাজকীয় একটা চেয়ারে বসে আছে হাসি হাসি মুখ করে।
দুর্বার মা হো হো করে হেসে উঠলেন, ঠিক আছে বাবা, আমি দুর্বাকে আর পার্লারে যেতে দেবো না, এমনিতে এই কোভিড১৯-এ যাওয়াও ঠিক না। তুমি এবার ফ্রেস হয়ে নাও। খাবার দিচ্ছি আমি।

আরও পড়ুন -  একটি চিঠি

এর দুদিন পর ফোন এলো, ধীমান কোভিড হাসপাতালে ভর্তী হয়েছে আজ। প্রথমে হালকা জর ও খুশখুশে কাশিটাকে খুব একটা পাত্তা দেয়নি ধীমান। কিন্তু শেষ রাতের দিকে বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ধীমান তার এক পরিচিত ডাক্তার বন্ধুর সহযোগিতায় দ্রুত হাসপাতালে ভর্তী হয়। সেই বন্ধুটিই দুর্বাকে ফোন করে খবরটা জানালো।
দুর্বা খবরটা শোনার পর বাকরুদ্ধ হয়ে বসে থাকলো প্রথমে, তারপর অজানা আশঙ্কায় একটু ভীত হলো। দুদিন আগেই ধীমান এসেছিল, তাহলে তখনও নিশ্চয় সে করোনায় আক্রান্ত ছিল। বাবা মা ওর কাছাকাছি তেমন না এলেও, আমি তো কাছে বসেই খেতে দিয়েছিলাম। তবে কি আমিও…।
সে বাসার কাউকে কিছু না বলে দ্রুত বের হলো, একটা বার হলেও নিজ চোখে ধীমানকে আগে দেখে আসবে, সে কেমন আছে। তারপর না হয় নিজের করোনা টেষ্ট করবে।
দুর্বা ধীমানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ধীমান এক বিশেষ পোশাক পরে শুয়ে আছে অক্সিজেনকে সাথী করে …। তাঁদের মাঝে একটা স্বচ্ছ কাঁচের দেয়াল। দুর্বা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ধীমানের চোখের দৃষ্টিটা পাওয়ার আশায়। বেশ অনেকক্ষণ… অনেকক্ষণ পর ধীমান চোখ মেলে হটাৎ এদিকে তাকালো, মুহুর্তে তার চোখে এক অদ্ভুত আলো জ্বলে উঠলো। একটু আনন্দ উচ্ছ্বলে পড়ে গেলোও বোধয়।
দুর্বা হাতের ইশারায় বোঝালো, সব ঠিক হয়ে যাবে, তুমি ভেবো না। শুধু আমাদের বিয়ের তারিখটা একটু পিছিয়ে গেলো, এই যা…!
ধীমানের চোখে এবার একটু কষ্ট ফুটে উঠলো, যেটাতে সে বোঝাতে চাইলো, করোনার জন্য নয়, বিয়েটা পিছিয়ে গেলো বলেই আমি কষ্ট পাচ্ছি দুর্বা…!
দুর্বা হাতের অঙ্গুলিতে চুমু মেখে ধীমানের দিকে বাতাসে ছড়িয়ে দিল, আমি অপেক্ষায় থাকলাম ধীমান… তুমি ঠিক ফিরে আসবে আমার কাছে।

আরও পড়ুন -  গ্রাহকদের যাবতীয় মুশকিল আসান রেশন ব্যবস্থায়, ১ লা মার্চ থেকে
সুফিয়া শিউলি। লেখিকা। বাংলাদেশ।

Latest News

Muskan Baby: মুসকান বেবি হলুদ স্যুটে দর্শকদের নাচিয়ে দিলেন এই কায়দায়, সেই দেখে ভক্তরা হলেন পাগল

Muskan Baby: মুসকান বেবি হলুদ স্যুটে দর্শকদের নাচিয়ে দিলেন এই কায়দায়, সেই দেখে ভক্তরা হলেন পাগল।  হরিয়ানভি নাচ: এই ঐতিহ্যের মধ্যে...
- Advertisement -spot_img

More Articles Like This

- Advertisement -spot_img