খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ
আমার প্রিয় দেশবাসী,
নমস্কার!
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা এখন আনলক ২ এর পর্যায়ে প্রবেশ করেছি। আর এখন আমাদের চারপাশে এমন এক ঋতু, যে সময়টিতে সর্দি-ঠান্ডালাগা-কাশি౼ আরও কত সমস্যা হয়, এগুলির প্রকোপও বাড়ে। এই সময় তাই সমস্ত দেশবাসীর প্রতি আমার অনুরোধ, নিজের খেয়াল রাখুন।
বন্ধুগণ,
এটা সত্যি যে, যদি আমরা করোনা সংক্রমণের কারণে মৃত্যুর হারকে দেখি, তা হলে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় ভারতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। লকডাউন সঠিক সময়ে জারি করায় এবং অন্যান্য বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভারতে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বেঁচেছে। কিন্তু, আমরা এটাও দেখছি, আনলক – ১ এর পর্যায়ে ব্যক্তিগত ও সামাজিক আচরণে অবহেলা বেশ নজরে আসছে। আগে আমরা মাস্ক পরে দু’গজ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে দিনে অনেকবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোওয়া সহ বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক ছিলাম। কিন্তু আজ যখন আমাদের আরও বেশি সাবধান হওয়া প্রয়োজন, তখন এই ধরনের আচরণ চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে।
বন্ধুগণ,
লকডাউনের সময় বিভিন্ন নিয়ম অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে পালন করা হয়েছিল। এখন আবারও সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও দেশের প্রতিটি নাগরিকের সেই রকম সাবধানতা দেখানোর প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের কন্টেনমেন্ট এলাকাগুলিতে বিশেষ নজর রাখতে হবে। যাঁরা এই নিয়মগুলি পালন করছেন না – তাঁদেরকে আমাদের কড়া হুশিয়ারী দিতে হবে, থামাতে হবে এবং বোঝাতেও হবে। আপনারা হয়তো সম্প্রতি একটি খবরে দেখেছেন, একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্য-স্থানে মাস্ক না পরায় তাঁকে ১৩ হাজার টাকার জরিমানা করা হয়। ভারতেও স্থানীয় প্রশাসনকে এরকম সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। এটি ১৩০ কোটি দেশবাসীর জীবনকে রক্ষা করার অভিযান। গ্রাম প্রধানই হন, কিংবা দেশের প্রধানমন্ত্রী౼ ভারতে কেউই নিয়মের বাইরে নন।
বন্ধুগণ,
লকডাউনের সময় গরিবের বাড়িতে উনুন জ্বলার বিষয়টি নিশ্চিত করা দেশের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ছিল। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কিংবা সুশীল সমাজের মানুষ প্রত্যেকেই চেষ্টা করেছেন, আমাদের এই বৃহৎ দেশে যাতে কোনও দরিদ্র ভাইবোন অনাহারে না ঘুমোন। দেশ কিংবা ব্যক্তি যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে, সংবেদনশীলভাবে সিদ্ধান্ত নিলে যে কোনও সঙ্কটের মোকাবিলা করার শক্তি বেড়ে যায়। সেই জন্য, সরকার লকডাউনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনা নিয়ে এসেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের জন্য পৌনে দু’লক্ষ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ বাস্তবায়িত করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
বিগত তিন মাসে ২০ কোটি দরিদ্র পরিবারের জন ধন অ্যাকাউন্টে সরাসরি ৩১ হাজার কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে। এই সময়ে ৯ কোটিরও বেশি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৮ হাজার কোটি টাকা জমা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, গ্রামের শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ রোজগার প্রকল্প দ্রুত শুরু করা হয়েছে। এই খাতে কেন্দ্রীয় সরকার ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ——————-
বন্ধুগণ,
আরেকটি বিষয় সারা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে, তা হ’ল – করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতে ৮০ কোটিরও বেশি মানুষকে তিন মাস ধরে রেশন অর্থাৎ পরিবারের সদস্য পিছু ৫ কেজি করে গম বা চাল বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, প্রতি মাসে প্রতিটি পরিবারকে ১ কেজি ডালও বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার আড়াই গুণ বেশি, ব্রিটেনের জনসংখ্যার ১২ গুণ বেশি বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের জনসংখ্যার প্রায় আড়াই গুণেরও বেশি মানুষকে আমাদের সরকার বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দিয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজ আমি এই প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করছি : –
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশে বর্ষায় এবং তারপরও কৃষিকাজ বেশি হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতে সামান্য স্বস্তি থাকে। জুলাই থেকে ধীরে ধীরে উৎসবের পরিবেশ তৈরি হতে শুরু করে। আগামী ৫ই জুলাই গুরুপূর্ণিমা, এরপর শ্রাবণ মাস শুরু হবে। তারপর আসবে ১৫ই আগস্ট – রাখি, শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, গণেশ চতুর্থী, ওনম। এরপর, কাটিবিহু, নবরাত্রি, দুর্গাপুজো, দশহরা, দীপাবলী, ছটপুজো হবে। উৎসবের এই মরশুমে প্রয়োজন অনুযায়ী খরচও বাড়ে। এসব বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা এখন দীপাবলী ও ছটপূজা পর্যন্ত অর্থাৎ নভেম্বর মাস অবধি বাড়িয়ে দেওয়া হ’ল। ৮০ কোটি মানুষ জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে খাদ্যশস্য পাবেন। সরকার এই পাঁচ মাসে ৮০ কোটিরও বেশি দরিদ্র ভাইবোনদের প্রতি মাসে ৫ কেজি গম কিংবা চাল বিনামূল্যে বিতরণ করবে। এছাড়াও, প্রতিটি পরিবারকে মাসে ১ কিলো ছোলাও বিনামূল্যে দেওয়া হবে।
বন্ধুগণ,
প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনার সময় বৃদ্ধির ফলে ৯০ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ হবে। এর সঙ্গে আমরা যদি গত তিন মাসের খরচটি যুক্ত করি, তা হলে এই পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা। সারা দেশের জন্য আমরা একটি স্বপ্ন দেখেছি, অনেক রাজ্য খুব ভালো একটি কাজ করছে, বাকি রাজ্যগুলিকেও আমি অনুরোধ করছি, এই কাজটিকে বাস্তবায়িত করার জন্য। কোন কাজ? এখন গোটা ভারতের জন্য ‘এক রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে – অর্থাৎ ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’। এর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন সেইসব দরিদ্র বন্ধুরা, যাঁরা নিজের গ্রাম ছেড়ে অন্য জায়গায় এমনকি অন্য রাজ্যে রোজগারের জন্য যেতে বাধ্য হন।
বন্ধুগণ,
আজ দরিদ্র, অসহায় মানুষকে সরকার যে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দিতে পারছে, তার কৃতিত্ব দুই শ্রেণীর নাগরিকের ওপর বর্তায়। প্রথমত, আমাদের দেশের পরিশ্রমী কৃষক অর্থাৎ আমাদের অন্নদাতারা এবং দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশের সৎ করদাতারা। আপনাদের পরিশ্রম ও আপনাদের উৎসর্গের মাধ্যমেই দেশ এই সাহায্য করতে পারছে। আপনারা দেশের খাদ্য ভান্ডার ভরছেন বলেই দরিদ্র মানুষ এবং শ্রমিকদের উনুন জ্বলছে, আপনারা সততার সঙ্গে কর প্রদান করে নিজের দায়িত্ব পালন করছেন বলেই দেশের দরিদ্র মানুষরা এতবড় সঙ্কট মোকাবিলা করতে পারছেন। আজ আমি প্রত্যেক দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি, দেশের প্রত্যেক কৃষক ও করদাতাকে অন্তর থেকে অভিনন্দন জানাই, প্রণাম জানাই।
বন্ধুগণ,
আগামী দিনে আমরা নিজেদের উদ্যোগকে আরও ত্বরান্বিত করবো, দরিদ্র, নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষদের ক্ষমতায়নের জন্য নিরন্তর কাজ করবো। আমরা সবরকম সতর্কতা বজায় রেখে অর্থনৈতিক কাজকর্মগুলিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবো। আত্মনির্ভর ভারতের জন্য আমরা দিনরাত কাজ করবো। আমরা সবাই লোকালের জন্য ভোকাল হবো। এই সঙ্কল্প নিয়ে আমাদের ১০০ কোটি দেশবাসী মিলেমিশে কাজ করবেন, এগিয়ে যাবেন।
আরও একবার আমি আপনাদের সকলের জন্য প্রার্থনা করছি যে, আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন। আপনাদের সকলের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা দু’গজ দূরত্ব বজায় রাখুন, গামছা, ফেস কভার, মাস্ক – এগুলি সবসময় ব্যবহার করুন। কোনও অবহেলা করবেন না – এই অনুরোধ, এই শুভেচ্ছা জানিয়ে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভ কামনা।
ধন্যবাদ। সূত্র – পিআইবি / ফাইল ছবি।