খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হিমাচল প্রদেশের স্বাস্থ্যকর্মী এবং কোভিড টিকাকরণ কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। অনুষ্ঠানে রাজ্যের রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, শ্রী জে পি নাড্ডা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী অনুরাগ সিং ঠাকুর, রাজ্যের সাংসদ, বিধায়ক এবং পঞ্চায়েত প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী সিমলার ডোডরা খার-এর সিভিল হাসপাতালের চিকিৎসক ডঃ রাহুলের প্রশংসা করেন। এই হাসপাতালে টিকার সবথেকে কম অপচয় হয়েছে। দুর্গম অঞ্চলে কিভাবে তাঁরা এই সাফল্য অর্জন করেছেন প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে আলোচনা করেন। মান্ডির থুনাগ-এর টিকাপ্রাপ্ত শ্রী দয়াল সিং-এর কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, টিকাকরণের জন্য কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল এবং তাঁরা টিকা সম্পর্কে গুজবের মোকাবিলা কিভাবে করেছেন। সুবিধাভোগীরা প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী টিকাকরণ অভিযানে হিমাচল প্রদেশের সকলের দলগত উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তিনি কুলু-র আশাকর্মী নিরমা দেবীর কাছে টিকাকরণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চান। টিকাকরণ অভিযানে স্থানীয় প্রথার সাহায্য নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী টিকাকর্মীদের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আলোচনা করা এবং যৌথ উদ্যোগে কাজ করার প্রশংসা করেন। তিনি নিরমা দেবীর কাছে জানতে চান, দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে কিভাবে তাঁরা মানুষের কাছে টিকা পৌঁছে দিচ্ছেন।
প্রবীণ নাগরিকদের টিকাকরণ অভিযানের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার সময় শ্রী মোদী হামিরপুরের শ্রীমতী নির্মলা দেবীর সঙ্গে কথা বলেন। হামিরপুরের এই বাসিন্দা যথেষ্ট পরিমাণে টিকার সরবরাহ থাকায় প্রধানমন্ত্রীকে আশীর্বাদ করেন এবং এই কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন। হিমাচল প্রদেশের স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলির প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী উনা-র কর্মো দেবীকে সঙ্গে কথা বলেন। এই টিকাকর্মী ২২,৫০০ সুবিধাভোগীকে টিকা দিয়েছেন। শ্রী মোদী বলেন, কর্মো দেবীর মতো টিকাকর্মীদের কারণেই বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ অভিযান এগিয়ে চলেছে। তিনি পা ভেঙে যাওয়া সত্ত্বেও টিকা দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রশংসা করেন। লাহুল ও স্পিতি-র শ্রী নাওয়াং উপাসকের কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, একজন আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে তিনি কিভাবে মানুষকে টিকা নিতে উৎসাহিত করছেন। তিনি এই অঞ্চলের অটল সুড়ঙ্গের প্রভাব নিয়েও কথা বলেন। শ্রী উপাসক জানান, অটল সুড়ঙ্গের কারণে যাতায়াতের সময় অনেক কমে গেছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। লাহুল-স্পিতি-তে টিকাকরণ সফলভাবে এগিয়ে চলার জন্য প্রধানমন্ত্রী বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দের প্রশংসা করেন। মতবিনিময়ের সময় তিনি ব্যক্তিগত এবং খোলামেলা আলাপচারিতায় অংশ নেন।
উপস্থিত সকলের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী জানান, ১০০ বছরের মধ্যে এত বড় এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হিমাচল প্রদেশ জয়ী হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে। দেশের মধ্যে এই রাজ্যে যাঁরা যাঁরা টিকা পাওয়ার যোগ্য, তাঁরা সকলেই অন্তত একটি টিকার ডোজ পেয়েছেন। তিনি বলেন, আত্মবিশ্বাস এবং আত্মনির্ভরতার জন্যই এই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
শ্রী মোদী বলেন, এ দেশের নাগরিকদের কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতাই ভারতে টিকাকরণের সাফল্যের মূল কারণ । দেশে রেকর্ড সংখ্যায় প্রতিদিন টিকা দেওয়া হচ্ছে। এক একদিন ১ কোটি ২৫ লক্ষের মতো টিকার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, পৃথিবীর অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার থেকেও বেশি সংখ্যায় ভারতে এক একদিনে টিকাকরণের কাজ চলছে। এই কারণে প্রধানমন্ত্রী ডাক্তার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, চিকিৎসাকর্মী, শিক্ষক ও মহিলাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি স্বাধীনতা দিবসে তাঁর ভাষণে যে ‘সবকা প্রয়াস’-এর কথা বলেছিলেন, সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, সকলের প্রয়াসের মাধ্যমেই টিকাকরণের সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। হিমাচল প্রদেশকে দেবভূমি বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী টিকাকরণ কর্মসূচিতে আলাপ-আলোচনা এবং যৌথ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।
শ্রী মোদী বলেন, লাহুল-স্পিতি-র মতো প্রত্যন্ত জেলাতেও ১০০ শতাংশ যোগ্য সুবিধাভোগীরা অন্তত টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। অটল সুড়ঙ্গ নির্মাণের আগে এই অঞ্চল বছরে বেশ কয়েক মাস দেশের বাকি অংশের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকত। টিকাকরণ অভিযানে কোনও গুজব বা ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে হিমাচল প্রদেশের মানুষ সতর্ক থাকায় তিনি তাঁদের প্রশংসা করেন। বিশ্বের বৃহত্তম এবং দ্রুততম টিকাকরণ কর্মসূচিকে সফলভাবে বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি গ্রামীণ সমাজের ভূমিকার প্রশংসা করেন। গ্রামীণ সমাজের কারণেই আজএই সাফল্য অর্জন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্প প্রত্যক্ষভাবে লাভবান হবে। স্থানীয় কৃষক এবং উদ্যানপালকরা – যাঁরা ফলমূল, শাকসব্জি উৎপাদন করেন, তাঁরাও এখন এর সুফল পাচ্ছেন। গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে হিমাচলের প্রতিভাবান যুব সম্প্রদায় তাদের সংস্কৃতি এবং পর্যটনকে দেশ-বিদেশে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
ড্রোন সংক্রান্ত নিয়মাবলীর সম্প্রতি পরিবর্তন হওয়ায় শ্রী মোদী বলেন, স্বাস্থ্য এবং কৃষিক্ষেত্রের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্র এর ফলে লাভবান হবে। নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হবে। তিনি এই প্রসঙ্গে স্বাধীনতা দিবসে তাঁর আরেকটি ঘোষণার কথা উল্লেখ করেন। কেন্দ্র, স্বনির্ভর মহিলা গোষ্ঠীগুলির জন্য একটি বিশেষ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আমাদের বোনেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী দেশে-বিদেশে বিক্রি করতে পারবেন। আপেল, কমলালেবু, কিন্নৌ, মাশরুম, টোম্যাটোর মতো বিভিন্ন পণ্য তাঁরা দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে দিতে পারবেন।
‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এর কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী হিমাচল প্রদেশের কৃষক ও উদ্যানপালকদের আগামী ২৫ বছর জৈব পদ্ধতিতে চাষের পরামর্শ দেন। এর সাহায্যে রাজ্যের মাটিকে রাসায়নিক পদার্থের কুপ্রভাব থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে। সূত্রঃ পিআইবি।