একটি চিঠি

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ

একটি চিঠি

নীল,

হয়তো অবাক হচ্ছিস এতদিন পর কেন তোকে চিঠি লিখছি।কেন লিখছি এটা হয়তো আমি নিজেও জানিনা।তবে জীবনের এই শেষবেলায় এসে আমার না বলা কিছু কথা তোকে জানাতে ইচ্ছা করলো বলতে পারিস।

তোকে আমি খুব ভালবাসতাম এটা তুই ভালোভাবেই জানিস।আর তুই ও আমাকে……. ভাবছিস হয়তো কেন তোকে বিয়ে করতে রাজি হলামনা তখন।আমার কোন উপায় ছিলোনা রে….।আমি ছিলাম প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।কার কাছে,কেন সেটাই তোকে আজ বলবো।

আমরা দু’জনে যখন মুক্ত বিহঙ্গের মত ডানা মেলে ভালোবাসার আকাশে উড়ছি ঠিক তখনই একদিন মাসিমা,মেশোমশাই অথাৎ তোর বাবা, মা আমাদের বাড়িতে এসে আমার বাবা, মা কে চরম অপমান করেন।নানান ধরনের কটুক্তি করেন।সে ভাষাগুলো না হয় নাই বললাম কারন সেগুলি শুনতে তোর ভালো লাগবেনা জানি।সেদিন তারা বেরিয়ে যাওয়ার পর বাবা , মা আমার সাথে আর কথা বলেননি।বলাবাহুল্য সেদিন রাতে কারও খাওয়াও হয়েছিলো না।অদ্ভুত এক অস্থিরতায় অন্ধকার বারান্দার এক কোণে বসে ছিলাম।হঠাৎ দেখলাম বাবা বারান্দার গ্রীল খুলে বাইরে বেরিয়ে গেলেন হাতে কিছু একটা নিয়ে।অন্ধকারের ভিতর ঠিক বুঝতে পারলামনা হাতে কি রয়েছে।আমিও বাবার পিছু নিলাম।

আরও পড়ুন -  "একটু উষ্ণতার ছোঁয়া"

কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।দেখলাম বাবা উঠানের বড় আম গাছটায়…….দৌড়ে গিয়ে বাবার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।ততক্ষণে মা সেখানে এসে গেছেন।বাবা আমায় শুধু একটা কথায় বললেন “সারাজীবন মাথা উঁচু করে বেঁচেছি আজ এই অপমানের পর আর এ মুখ আমি কাউকে দেখাতে পারবোনা।তোমাকে আমি বাঁধা দেবোনা।আমার মৃত্যুর পর তোমার যা মন চায় কোর।”সেদিন বাবাকে কথা দিয়েছিলাম তোকে আমি ফিরিয়ে দেবো।তুই আমাকে ভুল বুঝেছিলি আমি জানি।কিন্তু এই ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিলো কি?সন্তান হয়ে বাবার মৃত্যুর কারন হবো এটা আমি ভাবতেও পারিনা।

তোকে ফিরিয়ে দিয়ে বাবা, মায়ের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে কলকাতা পাড়ি দিলাম।ভেবেছিলাম মানিয়ে নিয়ে সুখি হওয়ার চেষ্টা করবো।তোকে ভুলতে পারবোনা জানতাম।তাই বুকের এক কোণায় তোকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু যখনই আমি একা থাকতাম তুই ঘুম থেকে জেগে উঠে আমায় জ্বালাতন ……।

আরও পড়ুন -  Hot Dance Video: ভোজপুরি গানে যুবতীর হট নাচ, ভাইরাল ভিডিও দেখুন

আমিও চোখ বন্ধ করে তোর সাথেই সময় কাটাতাম।

যে মানুষটার হাত ধরে নূতন জীবনে প্রবেশ করেছিলাম সে আমাকে কোনদিনও ভালোইবাসেনি।কিন্তু তবুও আমি দুই সন্তানের মা।আমি ছিলাম শুধুমাত্র লোকটির রাতের শয্যাসঙ্গীনী।কোনদিন এ নিয়ে অশান্তি তার সাথে আমি করিনি কারন মন থেকে আমিও তাকে কোনদিনও………কিন্তু কি করবো বল?তোকে যে আমি আজও ভুলতে পারিনি।ত্রিশটা বছর অভিনয় করে ঘোরের মধ্যেই যেন কেটে গেলো।বিশ্বাস করবি কিনা জানিনা , আমি কিন্তু কোনদিনও আমার দায়িত্ব-কর্তব্য থেকে বিন্দুমাত্র সরিনি বা বলতে পারিস আমার বিবেক আমাকে সরতে দেয়নি।মন থেকে ভালবাসতে পারিনি ঠিকই কিন্তু অবহেলাও কোনদিন তাকে করিনি।একটা যন্ত্রের মত পুরো জীবনটা কাটিয়ে দিলাম।সে যেদিন আমায় ছেড়ে চিরদিনের মত চলে গেলো সেদিন হাউ হাউ করে কেঁদেছিলাম।কিন্তু কেন বলতে পারিস?আমি জানি মানুষটিকে কোনদিন ভালবাসতে পারিনি …..সেদিনের কান্না তো সে কথা বলেনা….হয়তো মনের কোথাও তার জন্য তিল তিল করে অজান্তেই একটা জায়গা তৈরি হয়ে গেছিলো।বলতে পারিস নীল,একটা মানুষ একই সাথে দু’জনকে ভালবাসতে পারে?

আরও পড়ুন -  বড়দিন ও তার আগের দিনের নিরাপত্তা নিয়ে তৎপর কলকাতা পুলিশ

কি পেলাম আর কি পেলামনা জীবনে তার হিসাব আজ আর করিনা।হিসাবের খাতা আমার শূণ্য।যা পেয়েছিলাম আর যা পাইনি দুটোতেই ছিলো আমার আক্ষেপ!তাই হিসাবটা মিলাতে পারিনা।

আজ আমি সম্পূর্ণ একা।ছেলেমেয়ে উভয়ই বিদেশে।খুব ইচ্ছা করে তোকে একবার দেখতে……ইচ্ছা করে একবার তোকে ছুঁতে…..একবার তোকে জ……।কিন্তু আমি জানি তা আমি আর পারবো না কেননা আমাদের মাঝে থাকবে ওই লোকটি ….আমার স্বামী…. যেমন তার আর আমার মাঝে সর্বদা তুই থাকতিস ….।

ইতি

তোর আমি

নন্দা মুখার্জী রায় চৌধুরী। লেখিকা।