খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, ওয়েবডেস্কঃ ‘সুবর্ণলতা’ একটি উপন্যাস হিসাবে, একটি ফিল্ম হিসাবে ও একটি সিরিয়াল হিসাবে সর্বত্র সফল। আশাপূর্ণা দেবী (Ashapurna Devi) রচিত ‘সুবর্ণলতা’ বাংলা টেলিভিশনে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। ট্রন ভিডিওটিক্স প্রাইভেট লিমিটেড প্রযোজিত সিরিয়াল ‘সুবর্ণলতা’ 2010 সালের 26 শে এপ্রিল সন্ধ্যা ছ’ টায় অন এয়ার হলেও পরবর্তীকালে স্লট পরিবর্তন করে রাত সাড়ে আটটার সময় দেখানো শুরু হয়েছিল। ‘সুবর্ণলতা’-র শেষ দৃশ্য 2012 সালের 16 ই জুন সম্প্রচারিত হয়। কিন্তু শেষ হয়েও ‘সুবর্ণলতা’ দর্শকদের মনে রেশ রেখে গিয়েছিল।
ফলে 2020 সালের মার্চ মাস থেকে যখন করোনা অতিমারীর কারণে ইন্ডাস্ট্রিতে লকডাউন ঘোষণা হয় ও শুটিং বন্ধ হয়ে যায়, সেই সময় দর্শকদের অনুরোধে পুনরায় সম্প্রচারিত হয় ‘সুবর্ণলতা’। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ‘সুবর্ণলতা’-র শেষ দৃশ্য। ধারাবাহিকের শেষ দৃশ্যে সুবর্ণলতার মৃত্যু তার স্বামী ও পরিবারকে অনুভব করিয়েছিল তার অপরিহার্যতা। কিন্তু আপামর বাঙালি ‘সুবর্ণলতা’-য় বারবার কেন মজে থাকেন? আসলে সুবর্ণলতা সেই অপরাজেয় নারীসত্ত্বার নাম, যা বাঙালির ঘরে ঘরে বিভিন্ন রূপে রয়েছেন। বাল্যকালে ঠাকুমার উদ্যোগে সুবর্ণলতার বিয়ে হয়ে যায়। তার মা সত্যবতী মেয়ের বিয়ে আটকাতে না পেরে সংসার ত্যাগ করে চলে যান। এরপর থেকেই সুবর্ণলতার মূল কাহিনীর শুরু। সুবর্ণলতা একা অথৈ জলে পড়েও হারতে শেখেনি। স্বামীর অত্যাচার সত্ত্বেও স্বাধীনতা-পূর্ব যুগের নারী হয়ে সুবর্ণ প্রতিবাদ করতে শিখেছিল। বাঙালি নারীকে রান্নাঘরের হাতা-খুন্তির বেড়ি ও চার দেওয়ালের বদ্ধ জীবন থেকে বার করে আনতে চেয়েছিল সুবর্ণ। কিন্তু সুবর্ণর অকালপ্রয়াণ হয়। তার ইচ্ছা সঞ্চারিত হয়েছিল তার মেয়ে বকুলের মধ্যে।
একবিংশ শতকেও প্রতিদিন কতশত সুবর্ণলতা তাদের কাহিনী লেখার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোথাও যেন সমাজের শিকল তাকে আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। সুবর্ণলতার কাহিনী অনেকাংশেই আশাপূর্ণা দেবীর কাহিনী। সারাদিন ঘরের কাজ করে রাতে হ্যাজাক জ্বালিয়ে লিখতে বসতেন আশাপূর্ণা। লিখতে লিখতে কখন ভোর হয়ে যেত, খেয়াল থাকত না। ক্লান্ত আশাপূর্ণার ছুটি মিলত না পরের দিনের সংসারের কাজ থেকে ঠিক যেরকম সুবর্ণলতা ছুটি পায়নি। সুবর্ণলতার প্রতিটি অক্ষর আশাপূর্ণার জীবন, শুধু পরিণতিটা বোধ হয় একটু আলাদা।
View this post on Instagram