32 C
Kolkata
Friday, May 3, 2024

দুগ্গা দুগ্গা

Must Read

খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ

দুগ্গা দুগ্গা

-কি রে! ট্রেনের সময় হয়ে গেল। তৈরী হসনি এখনো?

মায়ের ডাকে পালক পিছনে ফিরে ঘড়ির দিকে তাকায়। সত্যি, অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। বাইরে দশমীর বিসর্জনের ঢাকের আওয়াজ আসছে। কৈলাসে মায়ের ফিরে যাবার তোড়জোড় চলছে পুরোদমে। পুজোর কদিন পালক মা বাবার সাথে গ্রামে ঠাকুরদার বাড়িতে আসে। হৈ হৈ করে প্রতিবার পুজোর কদিন ভাই বোনদের সাথে কাটায়। শুধুই কি ভাইবোন! পুজোর বাড়ি মানে হাজার রকম লোকের আনাগোনা লেগে থাকে। আসে পাড়ার প্রতিবেশীরা সব, আত্মীয় স্বজনেরা। পুজোর দিনগুলো শরতের মেঘের মত কিভাবে যে চলে যায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

-তুই কি এখানেই থাকবি? ফিরবি না!

মা তাড়া লাগায়। পালক মায়ের চোখে চোখ রাখতে পারে না, নিজের কাছেই লজ্জা পায়। সে নিজেও নিশ্চিত না কাউকে কি দেখতে চায় সে যাবার আগে। মন বলছে এসব পাত্তা না দেওয়া উচিত, সামনেই পরীক্ষা ফাইনাল ইয়ারের। কিন্তু মানুষের মন তো সব শাসন শোনে না। পালকের মনটাও অবোঝের মত বারবার ঘরবার করে চলছে। কেন যেন মনে হচ্ছে একবার দেখা হোক, আসবে সে ঠিক।

আরও পড়ুন -  দিল্লি নেতাদের সঙ্গে ঘনঘন ফোন, অবশেষে পদবদল নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন দিলীপ

পঞ্চমীতে বাবাই আলাপ করিয়ে দিয়েছিল, এ হল আমাদের পাড়ার পরিমল কাকুর ছেলে তূর্য। প্রতিবার পূজোতে ওরা বেড়াতে যায়। এবার যায়নি। প্রথম দেখাতে তূর্যকে বিশেষ কিছুই মনে হয়নি পালকের। বরং প্রথম প্রথম ছেলেটাকে গায়ে পরা ও অত‍্যন্ত বিরক্তিকর লাগত। মন্ডপের বাইরে পালক যখন আলপনা দিচ্ছে, তূর্য নিজেই এগিয়ে এসে বলে রংগুলো ভালো নির্বাচন করা হয়নি। পালকের মনে মনে রাগ হলেও মুখে সেদিন কিছুই বলেনি। শুধুই কি আলপনা, ষষ্ঠীতে পালক যখন সেজেগুজে সন্ধ্যায় বেড়িয়েছে, তূর্য হঠাৎ করেই সবার মধ্যে বলে বসে -‘এই গোলাপি লিপস্টিকটা তোমাকে মানাচ্ছে না একদম!’ সেই শুরু। পালক বিরক্ত হয়ে বলে -‘তা কোন রংটা মানাবে?’ তূর্য উত্তর দেয়নি। অষ্টমীর সকালে অঞ্জলির পরে হঠাৎই সবার অলক্ষে পালকের হাতটা নিজের হাতে নিয়ে একটা গিফটের প‍্যাকেট দেয়। ঘরে খুলে পালক দেখে একটা মেরুন রঙের লিপস্টিক আর ছোট্ট চিরকুট। তাতে লেখা ‘ভালোবাসি’।

আরও পড়ুন -  টেট দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্ত চলবে দিতে হবে অগ্রগতি রিপোর্ট, জানালো সুপ্রিম কোর্ট

এরপর বহু বার আসতে যেতে চোখাচুখি হয়েছে। টুকটাক যেটুকু কথা হয়েছে জেনেছে তূর্য কলকাতায় একটা মেসে থেকে চাকরির চেষ্টা করছে, কয়েকটা টিউশনি করলেও কার্যত বেকার এখন। ভরসা করে তূর্যকে তাই হ‍্যা না কিছুই বলেনি সে। তবু আজ ফেরার সময় যেন মন আর মানছে না। তবে কি সেও মন দিয়ে ফেলেছে তূর্যকে! মাথায় হাজার একটা দ্বিধাবোধ অস্হির করে তোলে পালককে। অথচ সকাল থেকে একবারও তূর্য আসেনি মন্ডপে।

আরও পড়ুন -  "চাওয়া পাওয়া"

নিয়ম মেনে সময়মত বাড়ির সামনে ট‍্যাক্সি এসে দাঁড়ায়। পালক জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখে দুগ্গা মাও লরিতে উঠে পড়েছে। মনে মনে দুগ্গা মায়ের দিকে তাকিয়ে আবদার জানায় মনস্কামনা পূরণের। এতক্ষণে একটা বড় ব‍্যাগ নিয়ে তূর্য পালকের বাবার সাথে হাজির। কি আশ্চর্য! পালকের মা মেয়ের অবস্থা দেখে নিজেই বলেন ও আমাদের সাথে ফিরবে, ওর আমাদের ট্রেনেই আজ ফেরার টিকিট। তুই আর ফেরার পথে ওকে নিয়ে ঝামেলা করিস না প্লিজ।

পালক লরির দিক তাকায়, দুগ্গা মা চোখের কোণে জল নিয়ে যেন পালকের দিকে তাকিয়ে হাসছে। পালক টুক করে হাতটা তুলে কপালে ঠেকায়। ট‍্যাক্সি স্টার্ট দেয়। পালকের মা হাত জোড় করে চোখ বুজে বিড়বিড় করে ওঠেন ‘দুগ্গা দুগ্গা’।


রোসমেরী উইলসন ( কবি )

Latest News

Web Series: শরীরের খেলা শুরু বাসর রাতেই, নেটজগতে কাঁপছে এই ওয়েব সিরিজ

Web Series: শরীরের খেলা শুরু বাসর রাতেই, নেটজগতে কাঁপছে এই ওয়েব সিরিজ।  Web Series টি ১৮+ উদ্ধের জন্য। ওয়েব সিরিজ!...
- Advertisement -spot_img

More Articles Like This

- Advertisement -spot_img