“প্রাচীর”

Published By: Khabar India Online | Published On:

“প্রাচীর”

সোহিনী ঘোষ

কলমে: সোহিনী ঘোষ।

কিছু বছর হল অবসর নিয়েছেন সূর্য। কর্মসূত্রে বাইরে বাইরে কেটেছে বেশিরভাগ সময়। বিয়ের পর পর প্রায়ই বৌকে নিয়ে যেত। কাজের সূত্রে কোয়ার্টার পাওয়া দিব্যি কাটত জীবন। সন্তান হবার পর থেকে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতে হয়েছে রূপাকে।

সন্তান নিয়ে বিদেশ বিভুঁয়ে ভরসা পায় নি বাড়ির লোক। সারাদিন কাজে থাকবে স্বামী বৌ কি করে একা ছোট বাচ্চা নিয়ে থাকবে? সে সব ভেবে …. তাছাড়া ছেলে বড় হলে স্কুল পড়াশুনা বার বার অদল বদল হবে। এসব ভেবে থেকে যেতে হয়েছে শ্বশুরবাড়ি।

সন্তান সামলে , সংসার সামলে দিনগুলো কেটে গেছে একাকীত্বে নিঃসঙ্গতায়। মন খারাপে পাশে পায় নি স্বামীকে। কোনো অভিলাষই পূর্ণ হয় নি রূপার। অর্থ আর সংসার দুটোই বেশ ছিল কিন্তু স্বামী…. স্বামী তো ন-মাসে ছ-মাসে হয়তো তিন-চারদিনের ছুটিতে আসত।

আরও পড়ুন -  Pooja Hegde: নায়িকা এবার পূজা যশের বিপরীতে

দু-জনেই একা একা নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। স্বামী বাড়ি এলে প্রথমদিকে ভাল লাগতো আনন্দ হত। পরের দিকে টানটাই কেমন কেটে গিয়েছিল। বেশিদিন থাকলে মন কষাকষি চলত বেশিরভাগ। কাছে আসা তেমন আর হত না।

সংসারের একঘেয়েমিতে রূপার সবকিছু হারিয়ে গেছে মন থেকে। কিন্তু সূর্য – সে তো…. দুজনের চাওয়া পাওয়া কোথায় যেন ইগোতে গিয়ে ঠেকেছে। মাঝখানে এক পাঁচিল উঠেছে। সেটা যেন ডিঙানো যাচ্ছে না। চেষ্টাও করে নি।

ছুটিতে এসেছে ভালোমন্দ খেয়েদেয়ে ক’দিন বিশ্রাম করে আবার কাজে। লক্ষ্য এখন সন্তানকে বড় করা।

আরও পড়ুন -  অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পবন সিং করলেন এমন কাজ কাজল রাঘওয়ানিকে নিয়ে, Bhojpuri Video

অবসরপ্রাপ্ত সূর্য আজ অনেক চেষ্টা করছে মানিয়ে নিতে কিন্তু যে দূরত্ব তৈরী হয়েছে এত বছরে তা এ কদিনে কাটবে না।

আর সূর্য নিজেকে নিয়েই মত্ত থেকেছে, চাকরি ,নেশা এসব। তবে খুব সুন্দর আঁকত। এখনো সে আঁকে। অবসরের টাকায় নিজের একটা আলাদা ঘর করেছে। আঁকা নিয়েই থাকে সারাদিন। নিজের ঘরে চা/কফির বন্দোবস্ত করেছে। একাই সে চা/কফি করে খায়। নিজের মনের মত করে থাকে। ছেলে বড় হয়ে গেছে।

বৌ একা থাকে বনিবনা হতে চায় না সূর্যের সাথে। সন্ধ্যের পর একটু নেশাতেও পায় সূর্যকে। অভ্যেসে পরিণত হয়ে গেছে। অফিস ফেরত বন্ধুদের আড্ডায় প্রায়ই পানে মেতে উঠত।

আরও পড়ুন -  Nobel Award: নোবেলজয়ীরা পাবেন বাড়তি অর্থ, ২০২৩ সালের

রূপা ঠিক যেন মেনে নিতেই পারে না সূর্যকে। সবেতেই দুজনের দুজনকে অপছন্দ। ইগো দুজনকে দুভাবে একাকী করে তুলেছে। সূর্য আপন খেয়ালে চলে – চেষ্টা করে রূপাকে নিয়ে নতুন করে বাঁচতে। কিন্তু যে দেওয়ালটা তৈরী হয়েছে সেই দেওয়াল টপকানোর সাধ্যি কারোরই নেই।

এভাবেই হয়তো বাকি দিনগুলো কেটে যাবে। যৌবনে রোজগার আর রূপা সংসার করতে গিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। শেষ জীবনে অর্থ আর সময় থাকলেও সেই যৌবনের রঙিন দিন আর ফিরে আসবে না। শরীরের সাথে সাথে মনের মৃত্যু হয়েছে। বেঁচে আছে আত্মা। কেবল বাকি দিনগুলো সমাজের চোখে স্বামী স্ত্রী হয়ে কাটাবে বলে।