শিরোনামঃ অনী

Published By: Khabar India Online | Published On:

শিরোনামঃ অনী। 

সোহিনী ঘোষ।

কলমেঃ সোহিনী ঘোষ।

আজ কাল নীরা বড্ড একা অনুভব করে। এতকাল যারা তার বন্ধু ছিল তারাও যেন আজকাল বড্ড দূরে সরে যাচ্ছে।

একাই ছিল এতকাল। একা মানে মানসিক দিক দিয়ে। আমরা প্রত্যেকটা মানুষই দিন শেষে একা। একান্ত ভাবে একা। যতই বলি আমার স্বামী, সন্তান, সংসার স্ত্রী বাবা মা ভাই বোন আছে। আসলে দেখবেন দিন শেষে আপনি কিন্তু একা। একটা সময় দেখবেন বড্ড ফেলনা আপনি। সংসারের বোঝা। যতদিন সংসারকে দিতে পারবেন ঠিক ততদিন বা তার কিছু পর পর্যন্ত আপনার মূল্য থাকবে। তারপর বড্ড বাড়তি আপনি। সেরকমই নীরাও একা। তার বয়সীরা সবাই সংসারকে আগলে বাঁচতে চায়।

কিন্তু নীরার ভাবনাধারা একটু আলাদা। সংসার সে মন দিয়ে করে। কিন্তু নিজেরও তো মন আছে একটা। সেই মনটাকে সে প্রাধান্য দিতে চেষ্টা করে। তাই সবার মন জুগিয়ে চলার পর বাকি সময়টা সে তার মনের কথা মতো চলে।

আরও পড়ুন -  Boris Johnson: বরিস জনসন পদত্যাগ করছেন

বন্ধুরা সরে গেছে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত নীরা আজকাল বড্ড একাকীত্ব অনুভব করে। সেই একার জীবনে একটুকরো আলো হল অরিন্দম। বয়স বেমানান। তাই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। কিন্তু এক অদ্ভুত টান। কি সেই টান কি চাওয়া কি পাওয়া। প্রায় তারা দেখা করে, ঘোরে বেড়ায় চুটিয়ে আড্ডা দেয়। যেন ষোড়শ বয়সী নীরা।

জীবনটাকে নতুন করে একদম নতুন করে অনুভব করতে চাইছে। প্রাণখোলা উদ্দামতায় আজ সে কৈশোর থেকে সদ্য যৌবনবতী। শরীরের বয়স বেড়েছে মন তার সদ্য স্নাতা যৌবনে পরিপূর্ণ। চারিদিকে সবুজের সমাহার। চোখে যেন রঙিন চশমা পড়েছে। ওই মুহূর্তটুকু সে মনে রাখে না তার বয়স ,সম্পর্ক, তার পিছুটান। বর্তমান সময়টাকে নিয়ে নীরা বাঁচতে জানে। পরমুহূর্ত তার কাছে মূল্যহীন।

আরও পড়ুন -  "আঁস্তা"

এই খুশির মুহূর্ত সে আগে অনুভব করেনি। হাত ধরে ঘুরে বেড়ায় অরিন্দমের সাথে। ফুচকা খাওয়া, নদীবক্ষে নৌকায় ভ্রমণ। বেরিয়ে পড়ে দূরে কোনো লং ড্রাইভে। সময়ে বাড়ি ফিরে আসবে সেরকমভাবে প্ল্যান করে। হঠাৎই রাস্তার ধারে একদল মহিলা পুকুরে শাপলা তুলছে। গাড়ি থামিয়ে যায় তাদের কাছে। শাপলাফুল গুলো দেখতে থাকে। আবার কোথাও বা গরম চা ধোঁয়া ওঠা।

দুজনে দাঁড়িয়ে পরে চা খায়। আবার গাড়ি চলতে থাকে। হঠাৎ যদি বৃষ্টি নামে গাড়ি থামিয়ে দুজন ভিজতে থাকে। নীরা ভেজে না ঠান্ডা লেগে যাবে। যাবে তো যাবে – যা খুশি হোক আমি ভিজবই। চারিদিকে কালো মেঘ ঠান্ডা বাতাস কি যে মনোরম পরিবেশ। সব কিছু থেকে অনেক অনেক দূরে নীরা আর অরিন্দম। তারপর বাড়ি এসে আবার সংসার। সব কাজে আজ বড্ড বেশি মন লাগে নীরার। অরিন্দমের গলা ছেড়ে গানের সাথে তাল মেলাতে নীরারও দু কলি গাওয়া এ যেন এক সিনেমার প্রেক্ষাপট। সিনেমাতো বাস্তবেরই এক রূপ। গলায় সুর যে থাকতেই হবে তার কি মানে?

আরও পড়ুন -  " রুনার স্মৃতি "

মন- মনের সেই আবেগ দিয়ে অরিন্দম নীরা গান করে। গান শেষে হেসে ওঠে। পাগল বলো আমরা। হ্যাঁ পাগলই হলাম নয় তো। জীবনের এই আনন্দ ঘেরা মুহূর্তের অনেক দাম জানতো নীরা।