” রুনার স্মৃতি “

Published By: Khabar India Online | Published On:

” রুনার স্মৃতি “

কলমেঃ সোহিনী ঘোষ।

সোহিনী ঘোষ

রাতে হটাৎ ঘুম ভেঙে গেল রুনার। মেঘ ডাকছে খুব জোরে, তাড়াতাড়ি উঠে জানালার দিকে তাকালো, আলোর ঝলকানি আকাশ ছেয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে কি প্রচন্ড আওয়াজ।

মেঘের ডাককে ছোট থেকে খুব ভয় পেত রুনা। মা’কে জড়িয়ে ধরতো। বড় হবার পরও সেই ভয় তেমনভাবে কাটেনি। কিন্তু আজ মা ও নেই আর ভয়ে জড়িয়ে কুঁকড়ে যাবার অবস্থাও নেই।

এখন সে প্রৌঢ়, একদম একা। নিজের ক্ষমতায় সে বড় চাকরি পেয়েছে। সারাজীবন একাই থেকে গেছে।

মনের মানুষকে তেমনভাবে কাছে পাওয়া হয়নি। হয়তো কিছু খামতি ছিল রুনার। কিন্তু খামতিটা ঠিক কোথায় আজও বুঝে উঠতে পারেনি।

স্বাধীনচেতা নয় সে তবে আত্মনির্ভরশীল আত্মমর্যাদা সম্পন্ন নারী সে। নিজের ভালোলাগাকে প্রাধান্য দিয়েছে মা-বাবা মারা যাবার পর থেকে। সময় দিয়েছে নিজেকে। একান্তে সময় কাটিয়েছে নিজের সঙ্গে। সবচেয়ে ভালো বন্ধু তার সে নিজে।

জানালার কাছে এসে দাঁড়ায় রুনা। দূরে রাস্তা দেখা যায়। ৫ তলার উপরে থাকে ফ্ল্যাটে। সামনে খোলা মাঠ। অনেক গাছ সারি দিয়ে আছে রাস্তার ধারে। বৃষ্টিতে আর মেঘের আলোয় যেন অপূর্ব লাগছে। প্রকৃতি যেন নিজেকে সুন্দর রূপবতী করে তুলেছে। সামনের মাঠের সবুজ ঘাস জলের ছোঁয়ায় যেন খিলখিল করে হাসছে। আর গাছ গুলো মাতাল হাওয়ায় আর বৃষ্টির ছোঁয়ায় নতুন প্রাণের পরশ পেয়েছে।

আরও পড়ুন -  এক টুকরো বেঁচে থাকা

দেখতে দেখতে মনে পড়ে যায় সৌম্যর কথা। সৌম্য তার ভালোলাগা আর ভালোবাসাও ছিল। তবে তা অতীত। হারিয়ে গেছে সে সব দিন।

ঝুম বৃষ্টিতে অফিস থেকে ফেরার পথে দাঁড়িয়ে থাকতো সৌম্য রুনার ছুটির অপেক্ষায়। তারপর দুজনে বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে হাঁটতে থাকতো হাত ধরে। রাস্তার ধারে লোকেরা আড় চোখে হয়তো বা দেখত।

তাতে কি? রুনা সৌম্য অদম্য ভালোবাসায় বৃষ্টির সময় কাটাত একেবারে নিজেদের মতো করে। হাঁটতে হাঁটতে কোনো এক চায়ের দোকানে চা খেত। বৃষ্টি ভেজা দুটো মানুষ। অনেকেই অবাক দৃষ্টিতে দেখত তাদের।

আগে অন্য ফ্ল্যাটে থাকতো রুনা, বাবা মায়ের সাথে। মাঝে মধ্যে আসত সৌম্য। বৃষ্টির সন্ধ্যায় একাত্ম হতে কার না মন চায়। তবে খুব একটা সুযোগ হয়নি।

আরও পড়ুন -  প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এর কাছে আর্জি জানালেন শোয়েব আখতার, কঠিন সময়ে ভারতের পাশে থাকুন

নতুন ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে রাস্তার মনোরম শোভা যেন বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে পুরোনো দিন গুলোকে। ফিরে পেতে ইচ্ছে করছে সে সব দিন। কিন্তু সৌম্য? সৌম্য কি মনে রেখেছে রুনাকে?

ফোন করলে তেমনভাবে সারা দেয় না। আর মেসেজ সে তো ignore যেন। কোথায় হারিয়ে গেল সেই সব দিন। আজ যদি সেই আগের দিনগুলো হত। ওই গাছের সারি দেওয়া রাস্তায় নেমে পড়ত দু’জনে। বৃষ্টি ভিজে মেঘের আলোয় আলোকিত হত। দুটো চোখ জলে ভিজে আসে।

একা আর একা। অফিস ফেরত রান্না, ঘর গোছানো বাকি সময় ওই জানালা। সব ঘর দিয়েই নানা ভাবে প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে পাওয়া যায়। দাম দিয়ে সে জন্যই কিনেছে যাতে একাকীত্বের সময়টুকু ওই প্রকৃতি তাকে সঙ্গ দেয়। মনে পড়ে সেই দিন বৃষ্টি ভিজে কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফেরা। খুব কাছাকাছি আসা। বাইরে বৃষ্টির শব্দ আর ঘরে হালকা নীল আলো সাথে রবীন্দ্রসংগীতের মিষ্টি সুর। পরিবেশকে যেন অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। চা খেতে খেতে মাঝে মাঝে ব্যালকনিতে দাঁড়াতো দু-জন। বৃষ্টি দেখতো, অঝোরে বৃষ্টি।

আরও পড়ুন -  নারী রূপেণ সংস্থিতা, দুর্গা রূপেণ সংস্থিতা

মন যেন কি চাইছে। দূরে দূরে আরো দূরে চলে যেতে একদম অন্য আকাশের দুটি তারা হতে। বৃষ্টি থামার পর সৌম্য চলে যায়। পড়ে থাকে স্মৃতি। অনেকবারই তারা মিলেছে – মিলিত হয়েছে দুটি নয়ন দুটি মন। এক হয়েছে মন প্রাণ।

কোথায় গেল সৌম্য? কি এমন খামতি ছিল রুনার? সৌম্য দূরে দূরে শুধু স্মৃতিই সার হয়ে রইল। বৃষ্টির মুহূর্তে বড্ড মনে পড়ছে সৌম্যকে। হঠাৎ ফোন হাতে নিয়ে ফোন করবে ভাবল – ঘড়িতে রাত তিনটে। নাহ থাক।

যদি অসুবিধায় ফেলে সেই ভেবে রুনা ফোনটা রেখে দিল। একা আবারও সেই চোখ মেলে অনুভব করতে থাকল প্রকৃতিকে। ভালোবাসাকে বড্ড অনুভব করতে ইচ্ছে করছে আজকাল।