কিংবদন্তি পেলে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, ২০০০ সালের আগেই আফ্রিকার কোনো দেশ বিশ্বকাপ জিতবে। মরক্কোই কি সেই স্বপ্নের দেশ হতে চলেছে? কাতার বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের বিদায়ের যন্ত্রণার মধ্যেই পেলের পূর্বাভাস ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছ। মরক্কোর ২৬ জনের ফুটবল দলের মধ্যে ১৬ জনের জন্ম অন্য দেশে।
কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে হারিয়ে আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে ইতিহাস গড়ে সেমিফাইনালে চলে গেল মরক্কো। মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রাগরাগি বলেছিলেন, সময় এসেছে আফ্রিকার দেশগুলির উচ্চাশা তৈরি করার। আমরা কেন বিশ্বকাপ জেতার কথা ভাবব না? তখন সেই উক্তিতে অনেকে ভুরু কুঁচকে তাকালেও পর্তুগালকে হারানোর পরে মরক্কোবাসীর সেই স্বপ্ন ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় মরক্কো। এরপরই টুইট করেন শকিরা। লিখেন, দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের জন্য গাওয়া তার বিখ্যাত গানের সেই লাইন, ‘দিস টাইম ফর আফ্রিকা!’
জার্মানির ফুটবল তারকা মেসুত ওজিলের টুইট, গর্বিত! কী দুর্দান্ত দল! আফ্রিকার জন্য কী অসাধারণ কৃতিত্ব। আধুনিক ফুটবলে যে রূপকথাও সম্ভব, তা দেখে তৃপ্তি হচ্ছে। এই জয় অসংখ্য মানুষকে শক্তি ও আশা দেবে।
পর্তুগালকে বিদায় করে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেওয়াকে তাই অঘটন বলার ওপায় নেই। গ্রুপ পর্বে বেলজিয়ামকে হারিয়েছে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ড্র করেছে। শেষ ষোলোতে থামিয়েছে স্পেনের যাত্রা।
প্রাক্তন স্কটিশ উইঙ্গার প্যাট নাভিন তাই মরক্কোকে নিয়ে বলেছেন, এটা ঐতিহাসিক, একবারেই অপ্রত্যাশিত। ভুলে গেলে চলবে না, ওরা সুন্দর ফুটবলও খেলেছে। হ্যাঁ, ওরা রক্ষণাত্মক ছিল। তবে ওদের সামর্থ্যের কথাও বলতে হবে। ওরা যখন সুন্দর ফুটবল খেলেছে, সেটা মিডফিল্ড থেকে শুরু হয়েছে।
দেশের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কৃতিত্বের শরিক হওয়ার পরে দলের খেলোয়াড় সোফিয়ান আমরাবাতে বলছিলেন, এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য! আমি প্রচণ্ড গর্বিত। আমরা ১০০০ শতাংশ এই কৃতিত্বের দাবিদার। আমরা হৃদয় দিয়ে লড়াই করেছি। আমাদের মানুষের জন্য, দেশের জন্য খেলেছি।
মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রাগরাগি ম্যাচ শেষে বলেন, আমরা দেখিয়েছি আমরা কী করতে পারি। এখন আর এটা অলৌকিক কিছু নয়, ইউরোপে অনেকে বলতে পারে এটা অলৌকিক কিন্তু আমরা পর্তুগাল, স্পেন, বেলজিয়ামকে হারিয়েছি, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ড্র করেছি কোনো গোল হজম না করে।
কোচ ওয়ালিদ রাগরাগির জন্ম প্যারিসে। তিনি নিজে এই মিশ্র সংস্কৃতিকে তুলনা করছেন ‘মিল্কশেক’ তৈরির সঙ্গে। বিশ্বকাপের মাঝে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, নানা দেশের নানা ফুটবল সংস্কৃতি, শৈলির মিশ্রণ ঘটেছে এই দলে। সেই মিশ্র, বৈচিত্রময় সংস্কৃতির দলই চমকে দিচ্ছে বিশ্বকে।
ছবিঃ সংগৃহীত।