সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় কে একবার রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন তাকে, তিনি কেন এত বছর বিয়ে করেননি। কোন মনের মানুষ ছাড়াই কীভাবে তিনি এতোগুলো বছর পার করে এলেন। তার সাবলীল উত্তর ছিল যে তিনি যার প্রেমে পরতেন তিনি বিবাহিত থাকতেন।
তার জীবনের আফসোস যে তিনি কোনদিনও অবিবাহিত কোন ব্যক্তির প্রেমে পড়ে উঠতে পারেননি। মজার ছলে তিনি জানান যে,যদি এখন কোন খালি ব্যক্তি থাকেন তার সঙ্গে তিনি প্রেম করতে রাজি আছেন।
বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্ম হয় অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের। তারা দশ বোন ছিলেন। জীবনে কোনদিনও ইলেকট্রিক লাইট দেখেননি তখন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। তার খুব ইচ্ছে হয় একদিন কলকাতা দেখার। কলকাতায় এসে ভয়ানক জীবনসংগ্রামের মুখোমুখি হয়েছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়।
অনেক সংগ্রামের মধ্যে থেকেও কিভাবে অভিনয় জগতে পা রাখেন তিনি? তিনি যখন স্কুলে যেতেন ভানু ব্যানার্জি তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতেন। একদিন ভানু ব্যানার্জি নিজেই তাকে ডাকেন। ভানু ব্যানার্জি শুনেছিলেন তিনি বাংলাদেশের মেয়ে।
তিনি উদ্বাস্তুদের নিয়ে বাঙাল ভাষায় একটি নাটকের জন্য সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে বলেন। তখন থেকে তার অভিনয়ের যাত্রা শুরু। জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে টলিউডে প্রথম কাজ করেন তিনি। সারাদিন অভিনয় করে কুড়ি টাকার মোটে উপার্জন করতেন তিনি।
পাশের বাড়ি বলে একটি সিনেমার মাধ্যমে তিনি সিনেমা জগতে হাতে খড়ি। জীবনে প্রথম সিনেমা সুপার ডুপার হিট হয় তার। ৫০ টাকা ঘর ভাড়া দিয়ে তারা কুড়ি পঁচিশ জন একটি ছোট ঘরে থাকতেন। তারপর একদিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমার জন্য তার কাছে যাওয়া হয় যদিও পরিচালক তাকে দেখে বলেছিলেন যে তিনি করতে পারবেন না।
অভিনেত্রী পরিচালকের পা ধরে কান্নাকাটি করে সেই চরিত্রটির করার আবদার জানান। তারপর সেই ছবি হয়ে ওঠে একটি মাইলস্টোন। উত্তম কুমার তার চোখের দিকে তাকালেই ডায়লগ ভুলে যেতেন। তাই কোনদিনও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় চোখের দিকে তাকাতেন না শটের আগে।
জাদু ছিল তার চোখে।
এতগুলো বছর তিনি কাটিয়ে ফিরলেন মনের মানুষ ছাড়া। কোনদিনও একা অনুভব করেননি তিনি?