ভারতীয় সুরমহলের কিংবদন্তি সুরেশ্বরী লতা মঙ্গেশকরের অকাল প্রয়াণে শোকাকুল সারা পৃথিবী। সুরের আতশবাজি ছিলেন তিনি। দরদ মাখা কণ্ঠে তাঁর অভূতপূর্ব গানগুলি চুপিসারে কান্না নিয়ে হাজির হচ্ছে। রবিবার সকাল সকাল ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে মহাপ্রয়াণ স্বদেহী সরস্বতীর। ১৯৪৮ সালের যুগান্তকারী গান ‛দিল মেরা তোরা’ ছিল তাঁর জীবনের প্ৰথম মাইলস্টোন। এর পরে লতাজিকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এক লহমায় ভারতীয় চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত ইতিহাসের সবচেয়ে আইকনিক গায়িকা হয়ে উঠেছিলেন।
১৯২৯ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশকে আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন মঙ্গেশকর। ১৯৪২ সালে ১৩ বছর বয়সে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি এবং সাত দশকেরও বেশিদিনের ক্যারিয়ারে প্রাথমিকভাবে হিন্দি এবং মারাঠিতে গান গাইলেও ৩৬টিরও বেশি ভারতীয় ভাষায় এবং কয়েকটি বিদেশী ভাষায়ও লতাজির সুরেলি কণ্ঠস্বর জেগে উঠেছিল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সুর ও তাল সহ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আদর্শ কণ্ঠস্বরী হিসেবে রয়ে গেছেন লতা জি। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি লন্ডনের আলবার্ট হলে নিজের সুরের দ্বারা রোশনাই করেন।
“ভারতের নাইটিঙ্গেল” হিসেবে পরিচিত লতাজি বেশ কয়েকটি সম্মান পেয়েছিলেন। যথাক্রমে ১৯৮৭ সালের দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, ২০০১ সালের জাতির প্রতি তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত রত্ন পুরস্কারও লাভ করেন তিনি। ২০০৭ সালে ফ্রান্স তাঁকে অফিসার অফ দ্য লিজিয়ন অফ অনার প্রদান করে। ছয় দশকেরও বেশি গৌরবময় কর্মজীবনে, লতা মঙ্গেশকর তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৫টি বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার, চারটি ফিল্মফেয়ার সেরা মহিলা প্লেব্যাক পুরস্কার, দুটি ফিল্মফেয়ার বিশেষ পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড সহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার অর্জন করেছেন তাঁর অতুলনীয় কণ্ঠের সুরের জন্য।
I consider it my honour that I have always received immense affection from Lata Didi. My interactions with her will remain unforgettable. I grieve with my fellow Indians on the passing away of Lata Didi. Spoke to her family and expressed condolences. Om Shanti.
— Narendra Modi (@narendramodi) February 6, 2022
তাঁর অকাল প্রয়াণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষায়, “দয়ালু এবং যত্নশীল লতা দিদির চলে যাওয়াতে আমি ব্যথিত। একটি অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হলো তাঁর প্রয়াণে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁকে ভারতীয় সংস্কৃতির একজন অকুতোভয় হিসেবে স্মরণ করবে, যার সুরেলা কন্ঠে মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করার অতুলনীয় ক্ষমতা ছিল।”
তিনি বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় ৩০,০০০ টিরও বেশি গান গেয়েছিলেন। বাংলা ভাষায় তাঁর গাওয়া গানের সংখ্যা ছিল ১৮৫ টি। বাংলার সিনে-বিশ্ব তাঁর গানেই জমে উঠেছিল। ‛প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’, ‛রঙ্গিলা বাঁশিতে’র মতো গানগুলি সত্যিই স্তব্ধ করে দেয় শত কোলাহল। তাঁর সুর তাঁর তাল অনন্য। এছাড়াও ‛তু জাহান জাহান চালেগা’, ‛ইনহি লোগো নে’, ‛দেখা এক খোয়াব’র মতো হিন্দি ভাষার গানগুলি সারা বিশ্বে এক কিংবদন্তি অঙ্কন করে গেছে।