নাট্যব্যক্তিত্ব শাঁওলি মিত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। ৭৮ বছর বয়সে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পরলোক গমন করলেন এই শিল্পী। রবিবার, ১৬ ই জানুয়ারি,২০২২ তে দুপুর ৩:৪০ নাগাদ কলকাতায় বেহালার বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পারিবারিক রীতি অনুযায়ী তাঁর দেহ সৎকারের পূর্বে কাউকে মৃত্যুসংবাদ দেওয়া হয়নি। তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পরে সকলে জানতে পেরেছেন তিনি দেহ রেখেছেন। একই ভাবে তাঁর পিতা নাট্য কিংবদন্তি শম্ভু মিত্র এবং মাতা তৃপ্তি মিত্রের সময় মৃত্যু সংবাদ দেওয়া হয় শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পরে। তাঁর ইচ্ছে ছিল যে, পিতা-মাতার ন্যায় তাঁর মৃত্যু সংবাদও সৎকারের পর যেন প্রকাশ করা হয়। তাঁর ইচ্ছা মতোই হল সব।
দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলার রঙ্গমঞ্চ কাঁপিয়ে রেখেছিলেন শিল্পী শাঁওলি মিত্র। পঞ্চম বৈদিকে নাটকে মঞ্চে একের পর এক দুর্দান্ত অভিনয়ের দ্বারা টেক্কা দিয়েছেন সমকালীন শিল্পীদের। তাবড় তাবড় শিল্পীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে গেছেন রঙ্গমঞ্চের দুনিয়ায়। যুক্তিতর্ক কিংবা গল্পে অভিনয় করেন তিনি। শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বহু শিরোপা অর্জন করেন এই নাট্যশিল্পী। ২০০৩ সালে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন এবং পদ্মশ্রী খেতাব অর্জন করেন ২০০৯ সালে।
শুধুমাত্র নাট্যজগতের অভিনেত্রী হিসেবে থেমে থাকেননি তিনি।সিঙুর আন্দোলনের সময় শাঁওলি মিত্র প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।বাম সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে ছিলেন কৃষকদের সাথে লড়াইয়ে শামিল হয়েছিলেন। তারপর বাংলা অ্যাকাডেমির প্রধান পদে নির্বাচিত হন তিনি।হঠাৎ সেই পদে ইস্তফা দেন ২০১৮ সালে।
সময়ের সাথে সাথে শারীরিক দুর্বলতা এবং রোগ বাসা বাঁধতে থাকে তাঁর শরীরে। ক্রমশ অসুস্থতা গ্রাস করতে থাকে তাঁর শরীর। এর ফলে শিল্পী শাঁওলি মিত্র ২০২০ সালে একটি ইচ্ছাপত্র লেখেন। সেই ইচ্ছাপত্র লেখা ছিল তাঁর অসম্পূর্ণ ইচ্ছা গুলোর তালিকা।অর্পিতা ঘোষের ওপর তাঁর অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার দায়িত্ব দিয়ে যান তিনি।এর সঙ্গে আরও জানিয়ে যান, মৃত্যুর পর যেন তাঁর মরদেহ কারুর প্রকাশ্যে না আনা হয়। কেউ যেন তাঁর মৃতদেহের ওপর ফুল শ্রদ্ধাঞ্জলি না দেন।এর পাশাপাশি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা করাতেও নারাজ ছিলেন শিল্পী।
আজ দুপুরবেলা তাঁর মৃত্যুর পরে অতি গোপনে সিরিটি শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর মরদেহ এবং সেখানেই সম্পন্ন হয় তাঁর শেষকৃত্য। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অর্পিতা ঘোষ সহ পরিবারের গুটিকয়েক সদস্য। তাঁর মরদেহ দাহ করার পর তাঁর মৃত্যুসংবাদ সকলের প্রকাশ্যে আনা হয়।