মোল্লা জসিমউদ্দিনঃ মারণ ভাইরাস করোনা আবহে টানা দুবছর জনজীবন বিপর্যস্ত। ইতিপূর্বে কয়েক দফায় ভার্চুয়াল শুনানি কলকাতা হাইকোর্টে চললেও মাঝখানে করোনা স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে সশরীর শুনানি চলছিল। তবে করোনার নুতন ট্রেন্ড ওমিক্রন হামলায় জেরবার বিশ্ব।তাই নুতন বছরের চলতি সপ্তাহ থেকে পুনরায় কলকাতা হাইকোর্টে শুরু হয়েছে ভার্চুয়াল শুনানি। তবে ভার্চুয়াল শুনানির জন্য সমসাময়িক পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটেনি।যার জেরে নিম্ন আদালত গুলি তো দূর অস্ত,খোদ কলকাতা হাইকোর্টে।ভার্চুয়াল শুনানি স্বাভাবিক ছন্দে চলছেনা বলে আইনজীবীদের বড় অংশের অভিযোগ। চরম বিপাকে পড়ছেন বিচারপ্রার্থীরা।বুধবার সকালের দিকে কয়েক ঘন্টা কলকাতা হাইকোর্টের ভার্চুয়াল শুনানির জন্য মামলা নথিভুক্তিকরণ এর সার্ভার অত্যন্ত স্লো ছিল।এই মন্থর গতির জন্য সাম্প্রতিক সময়কালে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের বিচার পৌঁছে দিতে পাচ্ছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। পাশাপাশি হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস থেকে রিপোর্ট তলব করেছিলেন।গত বছর ২৪ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে হাইকোর্ট এর প্রশাসনিক বিভাগ কে প্রতিপক্ষ রেখে মঙ্গল সর্দার নামে এক ব্যক্তি ভার্চুয়াল শুনানিতে পরিকাঠামোগত প্রশ্ন রেখে মামলা দাখিল করেছেন।সেখানে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রিপোর্ট তলব করেছে হাইকোর্ট প্রশাসন বিভাগ থেকে। আদেশনামার দিন সওয়াল-জবাব পর্বে উঠে এসেছে রাজ্যের জেলা/মহকুমাস্তরের প্রায় সব আদালতে ভার্চুয়াল শুনানির কোন পরিকাঠামো নেই।এমনকি ল্যান্ড ট্রাইবুনাল, কোম্পানি ট্রাইবুনাল, সার্ভিস ট্রাইবুনাল গুলিতে নেই কোন ভার্চুয়াল শুনানির জন্য উন্নত পরিকাঠামো। কলকাতা হাইকোর্টেও ভার্চুয়াল শুনানির জন্য অনলাইন সিস্টেম নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের ট্রাইব্যুনাল গুলি ভার্চুয়াল শুনানিরে সম-উপযোগী।সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানান – ” মারণ ভাইরাস করোনার বাড়বাড়ন্ত টানা দু বছর অব্যাহত। সেখানে রাজ্য সরকারের উচিত অত্যন্ত দ্রুত গতিতে হাইকোর্ট সহ নিম্ন আদালত গুলিতে ভার্চুয়াল শুনানির জন্য অনলাইন সিস্টেম উন্নত করা”।মারণ ভাইরাস করোনা আবহে সবকিছুই একপ্রকার থমকে। তবে থমকে নেই বিচারপ্রক্রিয়া।সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের সুবিচার দিতে বরাবরই আন্তরিক বিচারপতিরা।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের অনলাইন সিস্টেমে ক্রমাগত বিভ্রাট দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের এক বিচারপতি। তিনি সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের বিচার দিতে পারছেন না, এই অনুতাপে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসের মাধ্যমে মামলার ভার্চুয়াল শুনানিতে অনলাইন সিস্টেমের সাথে যুক্তদের তীব্র ভৎসনা করেছিলেন।সেইসাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য।
এমনিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শুন্যপদ সংখ্যা অর্ধেকের বেশি।যেখানে বিচারপতি থাকার কথা ৭২ জন।সেখানে বর্তমানে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রয়েছেন ৩১ জন।এঁদের মধ্যে ২৯ জন স্থায়ী বিচারপতি এবং ২ জন অতিরিক্ত বিচারপতি রয়েছেন। অর্থাৎ ৪১ জন বিচারপতি নেই কলকাতা হাইকোর্টে।বর্তমান ৩১ জন বিচারপতির মধ্যে ডিভিশন বেঞ্চ এবং সিঙ্গেল বেঞ্চ ধরে সর্বমোট ২৩ টি এজলাসে চলে মামলার যাবতীয় শুনানি পর্ব।তবে নুতন করে কয়েকজন বিচারপতি নিয়োগ হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম কমিটির সুপারিশক্রমে। গত দুই বছর মারণ ভাইরাস করোনার বাড়বাড়ন্ত রুখতে ভার্চুয়াল শুনানির আয়োজন করে দেশের সমস্ত উচ্চআদালত ।গত ২০২০ সালের মে মাস থেকে শুরু হয়েছিল এই ভার্চুয়াল শুনানি।প্রতিদিন গড়ে অনলাইনে ‘মাইক্রোসফট টিম’ আপসে আইনজীবীরা ২০০০ এর মতো মামলা দাখিল করে থাকেন।সেই তুলনায় কলকাতা হাইকোর্টের ২৩ টি এজলাসে মাত্র ৩০০ টি মামলার শুনানি হয়।অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১৫০০ এর বেশি মামলা জমতে থাকে হাইকোর্টের দরবারে।
একাধারে প্রয়োজনীয় বিচারপতি না থাকা এবার সেই সাথে ভার্চুয়াল শুনানির সময়সীমা কমে যাওয়াতে এই মামলার পাহাড় ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।তবে নুতন অস্থায়ী বিচারপতি নিয়োগ হয়েছেন সম্প্রতি।সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানান -“প্রয়োজনীয় বিচারপতি নেই, । ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে অনলাইন সিস্টেমে লিংক বিভ্রাটে থমকে যাচ্ছে ভার্চুয়াল শুনানিপর্ব”।নেটের স্পীড অধিকাংশ সময় ঠিকঠাক সার্ভিস দেয়না বলে অভিযোগ আইনজীবীদের বড় অংশের।