‘সব সাগর বারবার গঙ্গাসাগর একবার’। বারোমাসই গঙ্গাসাগর জুড়ে দর্শনার্থীদের ঢল দেখা যায়। তবে সারা বছরের তুলনায় পৌষ মাসে তুলনামূলক অনেক বেশি ভক্তের সমাগম ঘটে গঙ্গাসাগরে। পৌষ মাসে পৌষ পার্বণ উপলক্ষে বেশ কয়েকদিন ধরে মেলা বসে, উৎসব চলে এবং সাথে গঙ্গাসাগরে স্নান করেন আগত সকল পুণ্যার্থীরা। ছুটে আসেন গঙ্গাসাগরে কপিল মুনির আশ্রম দর্শন তথা পুণ্যের উদ্দেশ্যে। এ বছর আগামী ৮ই জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা। চলবে ১৬ই জানুয়ারি পর্যন্ত।
গতবার করোনা পরিস্থিতির বাড়বাড়ন্তের কারণে সংক্রমণের আশঙ্কায় ই- স্নানের ব্যবস্থা করার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেইমতোই ই- স্নানের ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য সরকার। তারপরেও সেখানে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীদের ভিড় হয়েছিল। তবে এবার প্রায় ত্রিশ লক্ষ পুণ্যার্থীর আগমন ঘটতে পারে গঙ্গাসাগরে এমনটাই অনুমান করা হচ্ছে প্রশাসনের তরফ থেকে। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে কড়া পুলিশি নজরদারি। সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি আকাশে উড়বে ড্রোন। এই পাশাপাশি, নবান্নে কন্ট্রোল রুম থেকে চলবে মনিটরিং।
গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। পূণ্যার্থীদের কথা মাথায় রেখে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে। আউট্রাম ঘাট থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত প্রায় ২০০০ টি বাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কচুবেড়িয়া থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত রাখা হয়েছে ২০০ টি বাস। স্থলপথের পাশাপাশি জলপথে থাকছে ১০০ টি লঞ্চ এবং ৩০থেকে ৪০ টি ভেসেলের ব্যবস্থা।
পাশাপাশি থাকছে ই-স্নান তথা ই-পুজোর ব্যবস্থাও। গঙ্গাসাগর মেলার বিভিন্ন পয়েন্টে স্যানিটাইজেশন টানেলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে পুণ্যার্থীদের উদ্দেশ্যে। মেলা প্রাঙ্গণে রাখা হবে মাস্ক এবং স্যানিটাইজার। জরুরী কালীন পরিষেবার ভিত্তিতে, গঙ্গাসাগরে করা হচ্ছে অস্থায়ী কোভিড হসপিটাল। এর পাশাপাশি, ডায়মন্ডহারবার হাসপাতালে বাড়ানো হচ্ছে কোভিড বেড। থাকছে ২০০টি এম্বুলেন্স, তিনটি ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স এবং একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। সব মিলিয়ে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি বর্তমানে রয়েছে তুঙ্গে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ড. পি উলঙ্গানাথান বলেন, ‘এই বছর আমরা নতুন উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যেই এগুলির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এনিয়ে পুণ্যার্থীদের কাছে প্রচার করা হবে। পাশাপাশি কোভিড সর্তকতা নিয়েও প্রচার করা হবে।’
প্রসঙ্গত, গতবার কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকে সাগরে নেমে ডুব দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তার পরিবর্তে ই – স্নান ছাড়াও নদীর জল পাইপ লাইনের মাধ্যমে নিয়ে গিয়ে অস্থায়ী বাথরূম তৈরী করে স্নানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে এবার আরও একধাপ এগিয়ে তৈরি হলো ব্যবস্থাপনা। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী,ড্রোনের মাধ্যমে জল ছেঁটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এই অভিনব পদ্ধতিতে পূর্ণ স্নানের ভীড় কিছুটা হলেও এড়ানো যাবে।