পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার আভিযোগে এক শ্রীলঙ্কান নাগরিককে বর্বরভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, পিটিয়ে মেরে ওই লোকের মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেয় উন্মত্ত জনতা। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভুক্তভোগীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এ ঘটনা পাকিস্তানের জন্য লজ্জার বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গত শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরবর্তী শিয়ালকোট শহরে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসলামী আয়াতযুক্ত একটি পোস্টার ছিঁড়েছিলেন অভিযোগে শ্রীলঙ্কার ওই ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে এলাকাবাসী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ভুক্তভোগীর ওপর একদল জনতাকে আক্রমণ করতে দেখা যায়। এসময় তারা ধর্ম অবমাননাবিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলেন। আরেক ভিডিওতে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিতে দেখা যায়। এসময় ওই ব্যক্তির গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীদের কারও মধ্যেই পরিচয় গোপনের ইচ্ছা দেখা যায়নি, এমনকি কেউ কেউ জ্বলন্ত মরদেহের সঙ্গে সেলফিও তুলেছেন।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও টিভির খবর অনুসারে, নিহত ব্যক্তির নাম প্রিয়ান্থা কুমারা। তিনি স্থানীয় একটি কারখানায় ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন।
জেলা পুলিশ কর্মকর্তা ওমর সায়িদ মালিক জানান, কারখানার কর্মীরাই প্রিয়ান্থাকে পিটিয়ে গুরুতম জখম করেন, যার ফলে তার মৃত্যু হয়। উন্মন্ত কর্মীরা এসময় কারখানায় ভাঙচুর চালায় এবং রাস্তা বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনাকে লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এক টুইটে তিনি বলেছেন, শিয়ালকোটে কারখানায় ভয়াবহ হামলা এবং শ্রীলঙ্কান ব্যবস্থাপককে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা পাকিস্তানের জন্য লজ্জার দিন। আমি নিজে তদন্তের তত্ত্বাবধান করছি যেন কোনো ভুল না হয়। দোষীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
পাঞ্জাব পুলিশ এক টুইটে জানিয়েছে, এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে তারা এ পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি লোককে গ্রেফতার করেছে, যার মধ্যে ‘মূল সন্দেহভাজনও’ রয়েছে।
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে লঙ্কান গণমাধ্যম নিউজ ফার্স্ট জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানের ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণ এবং সুবিচারের দাবি জানিয়েছেন।
এক পাকিস্তানের কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপি’কে জানিয়েছেন, এ নিয়ে তারা লঙ্কান কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং তাদের আশ্বস্ত করেছেন, দোষীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে।