30 C
Kolkata
Saturday, April 20, 2024

তুই আমার বন্ধু হবি?

Must Read

তুই আমার বন্ধু হবি? ( সুফিয়া শিউলি )

কি করছিস?
এই তো, দেখতে পারছো না?
রেগে আছিস কেন ওমন?
বাহ! রাগ করলাম কোথায়, আমি কার ওপরে রাগ করবো? পরীক্ষার জন্য একটু ব্যস্ত ছিলাম; তাই বলে কি আমার গাছগুলোতে একটু জল দেয়ার জন্য কেউ এ বাড়িতে ছিলো না? দেখেছো গাছগুলোর কেমন ঝিমধরা চেহারা হয়েছে!
অহহঃ এই ব্যাপার, কেন, আমি তো গত পরশুই সব গাছে জল দিয়েছি।
মা, আমার আর রাগ বাড়িও না, জল দিলে এদের চেহারা এমন হবার কথা?
তা ঠিক, জল দিলে ঝিমধরা চেহারা হবার কথা নয়; কিন্তু মামনি, আমি তো তোমার গাছগুলোকে বেশ তরতাজাই দেখতে পাচ্ছি।
মা… ভালো হবে না কিন্তু! একেই তুমি আমার গাছের যত্ন নাওনি, তারপর আবার…!
হা হা হা ঠিক আছে তুই কাজ কর, আমি চুপচাপ দেখি। আসলে কি জানিস, আমি তোকে একটা কথা বলতে এসেছিলাম।
কি বলবে বলো।
তোর গোমড়া মুখটা স্বাভাবিক হোক, তারপর বলবো।
আমার মুখ এমনি থাকবে। তোমার ইচ্ছে হলে বলো, না হলে নাই!
ঠিক আছে বলবো না, গেলাম।
মা …মা…মা শোনো, কি বলবে, বলে যাও প্লীজ। না শোনা পর্যন্ত আবার মাথার মধ্যে ওটাই কাজ করবে; মা যেন কি বলতে চেয়েছিল……?
হুম জানি তো, কিন্তু প্রথমে যে খুব ভাব নিলি বড়?
মা……… আমার লক্ষী মা, বলো, যা বলবে।
যা বলবো তা এভাবে বলা যায় না; একটু মিষ্টি হাওয়ার পরিবেশ চাই সেজন্য। তোর মুখে মিষ্টি হাসি দেখতে চাই সেজন্য।
মা! কি ব্যাপার বলোতো, ঘটনা কি?
হুম… ঘটনা তো আছেই।
ওক্কে, এই নাও আমি দাত বের করে হেঁসে দিলাম… হা হা হা …এবার বলো।
তুই আমার বন্ধু হবি? বা বলতে পারিস, আমি কি তোর বন্ধু হতে পারি?
মা…! হা হা হা … তুমি কি বলছো?… আজ নতুন করে বুঝি এটা বলতে হবে? তুমি তো আমার বন্ধুই। আমি তোমাকেই তো সব মন খুলে বলি। তোমার সাথেই রাগ, অভিমান সব…সব করি। তোমার মতো বন্ধু কি আর আমার আছে?
তাই, সত্যি বলছিস?
সত্যি নাতো মিথ্যে?
কিন্তু তোর মধ্যে তো আমি বন্ধুত্বের কোন ব্যবহার আজকাল আর খুঁজেই পাচ্ছি না। আমিও তো তাই-ই ভাবতাম, আমি বুঝি তোর বন্ধুই; কিন্তু এখন দেখছি তুই আমাকে বেশ অনেক কিছুই লুকিয়ে লুকিয়ে চলিস। কলেজে উঠে কেমন যেন পর পর ব্যবহার করিস আমার সাথে।
মা! কি লুকোলাম আমি তোমার কাছ থেকে?
অনেক কিছুই; আমি নিজে বুঝতেছি কিন্তু কিভাবে তোকে বলবো সেটা বুঝতে পারছি না।
হুম ঠিক আছে, অত চিন্তা করতে হবে না তোমাকে আমাকে কিছু বলার জন্য। আর বোঝাবুঝি বাদ দিয়ে এখনই বলে ফেলো।
মা তারপরেও একটু দ্বিধায় ভুগছেন মনে মনে, আজকালকার ছেলেমেয়ে, কি কথার যে আবার কি মানে করে বসে। শেষে ভুলেই না আবার করে ফেলি?
কি হলো মা, কি অত ভাবছো? বললে বলো তো, এবার আমার কিন্তু রাগ হচ্ছে!
ঠিক আছে বলছি, তুই রোজ বিকেলে যখন টুইনওয়ান নিয়ে কোনার ঘরে জানালার কাছে বসে গান শুনিস, তখন আমি লক্ষ্য করেছি, প্রায় প্রতিদিন ব্লু কালার জিনস, রেড কালার শার্ট অথবা ব্লু কালারেই শার্ট পরা একটি ছেলে জানালার পাশের রাস্তাটায় কয়েকবার রাউন্ড দেয়। দেখতে বেশ ভালোই, যদিও একটু মেয়েলী ভাব আছে চলনে। কেন বলতো?
তো! কে কোথায় হাঁটে, তাঁর আমি কি জানি? তাতে আমার কি? আর তুমি এতো কিছু দেখার সময় পাও কি করে?
নাঃ আমি শুধু জানতে চাচ্ছি তুই ব্যাপারটা জানিস কি না?
দেখো মা, কত জনেই তো বিকেলে হাঁটাহাঁটি করে। কে মেয়ের মতো, কে ছেলের মতো করে হাঁটে? কে লাল, নীল শার্ট পরে? এসব নিয়ে আমার কোন কৌতহল নেই। আর তুমি ভালো করেই জানো যে, তখন আমি শুধু গানই শুনি না, বইও পড়ি। আর গল্পের বই পড়তে থাকলে যে আমি সেখানে ডুবে যাই, সেটাও তুমি ভালো করেই জানো। কেন, তুমি নিজেও তো ডেকে আমার সাড়া পাও না বলে কতদিন রাগারাগি করেছো?
তাও তো ঠিক। আমি হয়তো একটু বেশিই ভেবে ফেলেছি। আর বলিস না, এই পাশের বাসার ভাবীদের সাথে গল্প আড্ডায় বসলে শুধু যত ভয়ধরা কথাবার্তা শুনতে হয়, তোদের এই বয়েসটা একটু ভয়ের, এই বয়েসের ছেলেমেয়েরা কখন কি করে তার ঠিক ঠিকানা থাকে না, এই বয়েসটাই ভুল করার বয়েস, তাই একটু চোখে চোখে রাখতে হবে, সবধানে থাকতে হবে ইত্যাদি এই আর কি; তা তুই আবার কিছু মনে করিস না যেন, কোন সমস্যা হলে আমাকে বলিস কিন্তু মামনি।
অক্কে মাম্মা, তুমি কোন চিন্তা করো না। তবে মা তোমার ঐ পাশের বাসার বান্ধবীদের সাথে একটু কম আড্ডা দিয়ে বাসায় বসে বসেই না হয় টিভি দেখলে, বই পড়লে? সেটাই খুব ভালো হবে তোমার জন্য, নতুবা তোমার মাথা তারা খেয়ে ফেলবে!
চুপ কর, পাকামি করিস না; ওরা বেশি বেশি বলে ঠিকই কিন্তু ভালোর জন্যই বলে, ক্ষতির জন্য নয়! যাই হোক বাদ দে, চা খাবি নাকি হরলিক্স দিবো? সাথে টোষ্ট চুবিয়ে চুবিয়ে খাবি?
মা! তুমি আমাকে চা দাও, আমি শিশুখাদ্য খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। আমি এখন কলেজে পড়ি। আর সাথে ফুলকপির পাকোরা কর। দারুণ হবে খেতে, তুমি আমি একসাথে বসে খাবো আমার এই বাগানে।
মা চলে যাচ্ছিলেন। হটাৎ মেয়ে ডাক দিলো, মা, ও…… মা শোনো, ঐ লাল-নীল মেয়ে মেয়ে চেহারার ছেলেটা আমার জন্যই রোজ হাঁটে … আমি বেশ এনজয় করি ব্যাপারটা…। শুধু আমার জন্য, আমাকে একটু দেখার জন্য কেউ এভাবে হাঁটছে … আহা, ভাবতেই অন্যরকম লাগে!
মানে! তুই ব্যাপারটা জানিস তাহলে? তবে একটু আগে মিথ্যে বললি কেন?
মেয়ে দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু এঁকে বলল, তুমি খুব ভালো মা আমার। আর তুমি আমার বন্ধু না? তাই মজা করলাম একটু।
হুম… আহারে মজার কি নমুনা! তা শুধু অন্যরকমই লাগে নাকি একটু হাহাকার, একটু বুকে ধুকপুক ধুকপুকও লাগে?
কি বললে? ধুকপুক ধুকপুক…? সেটা তো হয়নি মনে হয়, ঠিক আছে এবার বিষয়টা লক্ষ্য করবো তো! তুমি চা নিয়ে এসো, পান করতে করতে কথা বলি।
আবার পাকামি হচ্ছে? না থাক, তোকে আর বিষয়টা লক্ষ্য করতে হবে না। বাগানের কাজ কর, আমি চা, পাকোরা নিয়ে আসছি।
মা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন; ‘যাক বাবা বাঁচা গেছে ধুকপুক ধুকপুক করে না, তার মানে প্রেম- ট্রেম আসেনি এখোনো। তবে চোখে চোখে রাখতে হবে।’
মা চলে গেলে মেয়ে মুখ টিপে হাসতে হাসতে মনে মনে বলল, ‘মা তুমি নিজেকে খুব চালাক ভাবো না?’
……………………………………………।।

আরও পড়ুন -  গঙ্গা সংরক্ষণ ও সে বিষয়ে উৎসাহদান, পরিবেশ এবং সংস্কৃতি আমাদের দেশের উন্নয়নের ভিত্তি : রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ

Latest News

Monami Ghosh: ট্যাঙ্ক টপ-শর্টসে আইসক্রিম খেতে ব্যস্ত মনামী গরম থেকে রেহাই পেতে, দেখা মাত্র গলে জল নেটিভক্তরা

Monami Ghosh: ট্যাঙ্ক টপ-শর্টসে আইসক্রিম খেতে ব্যস্ত মনামী গরম থেকে রেহাই পেতে, দেখা মাত্র গলে জল নেটিভক্তরা।  মনামী ঘোষ (Monami...
- Advertisement -spot_img

More Articles Like This

- Advertisement -spot_img