বড়িশা ক্লাবের এ বছরের পুজোর থিম ‘ভাগের মা’। শিল্পী রিন্টু দাসের দ্বারা বড়িশা ক্লাবে এই ভাবনা রূপ পেয়েছে। সাম্প্রদায়িকতার বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে পুজো মন্ডপের সাজসজ্জা।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সাথেও সম্পর্কযুক্ত এবারের বড়িশা ক্লাবের পুজোর থিম। যে ইতিহাস রাজা বল্লাল সেনের রাজত্বকালের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।পুজো কমিটির সদস্য সপ্তর্ষি জানার তরফ থেকে জানা গিয়েছে, ১২০০ সাল বাংলার সিংহাসন দখল করেছিলেন রাজা বল্লাল সেন। এক রাতে তিনি স্বপ্নে মহিষমর্দিনী দশভূজাকে দেখেন। স্বপ্নে দেবী আদেশ দেন ঢাকার নিকটবর্তী এক জঙ্গল থেকে দেবী দশভুজার বিগ্রহ উদ্ধার করে নিয়ে আসতে। দেবীর আদেশ অনুযায়ী রাজা উদ্ধার করেন সেই বিগ্রহটি। বিগ্রহটি আচ্ছাদিত বা ঢাকা থাকার কারণে তিনি এর নামকরণ করেন “ঢাকেশ্বরী” এবং “ঢাকেশ্বরী” মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকেশ্বরী মন্দির ঢাকায় অবস্থিত হলেও দেবী ঢাকেশ্বরীর আদি বিগ্রহটি এখন কলকাতার কুমোরটুলির অঞ্চলে দুর্গাচরণ স্ট্রিটে ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দিরে পূজিত হচ্ছেন । ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় অন্য সবকিছুর সঙ্গে মায়ের আদি বিগ্রহটি চলে আসে কলকাতায়। কয়েকলক্ষ মানুষের সাথে মা-ও উদ্বাস্তু হয়ে চলে আসেন কলকাতায়। এত বছর পরেও ভিটে-মাটি হারানোর অতীতের স্মৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে। পুনরায় উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কা সকলের মনের জাগ্রত হয়েছে। কিন্তু সবার একটাই চিন্তা যে এবার তাহলে মা উদ্বাস্তু হয়ে কোন খানে ভাগ পাবেন। মায়ের ঠাঁই এবার কোন স্থানে হবে? তবে এবারও বদলে যাবে কি মায়ের ঠিকানা? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে এবার বড়িশা ক্লাবের ভাবনায় ফুটে উঠেছে ‘ভাগের মা।‘
তাঁদের চোখে-মুখে ছিল একরাশ হতাশা, উদ্বাস্তু হওয়ার বেদনা এবং মূল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার যন্ত্রণা। তারপর স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও দেশব্যাপী আতঙ্ক এবং অস্থিরতা। এবারেও ছিন্নমূল এবং উদ্বাস্তু হওয়ার আতঙ্ক গ্রাস করতে শুরু করেছে আমাদের মনে। ঠিক মতো নথি-কাগজ না দেখালে, এবারেও কি সন্তানদের কোলে নিয়ে আগের মতোই ভিটে-মাটি ছাড়তে হবে মায়েদের? ডিজিটাল ভারতে দাঁড়িয়ে কেন ফের উসকে উঠছে দেশভাগের স্মৃতি? কোথায় যাবেন তাহলে মায়েরা? মায়ের ভাগ তাহলে কার থাকবে? পূর্ববঙ্গের না পশ্চিমবঙ্গের? না উদ্বাস্তু জীবনই ভবিতব্য।” এখানকার পুজোর উদ্বোধন করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরিশা ক্লাবের এবারের পুজোর থিম মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে আপ্লুত করেছে।