ভারতীয় নৌ বাহিনীর বিমান বিভাগকে প্রেসিডেন্টস কালার প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দের ভাষণ

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ   বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতীয় নৌ বাহিনীর বিমান বিভাগ দেশ সেবার কাজে নিযুক্ত। ১৯৫৩ সালের ১১ই মে ভারতীয় নৌ বাহিনীর প্রথম এয়ার স্টেশন আইএনএস গড়ুর উদ্বোধন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বিভাগ তার কাজ শুরু করে। সেই দিন থেকে আজও নৌ বাহিনীর বিমান বিভাগ তার কর্তব্য পালনে অবিচল। ১৯৬১ সালে বিমান বহনে সক্ষম আইএনএস বিক্রান্ত বাহিনীতে যুক্ত হওয়ায় নৌ বাহিনী আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং গোয়ার মুক্তিযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গত বছর আমরা গোয়ার মুক্তিযুদ্ধের ৬০ বছর উদযাপন করেছি। নৌ বাহিনীর বিমান বিভাগ ১৯৬২ এবং ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে আইএনএস বিক্রান্তের বিমান যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, তা আজও আমাদের স্মৃতিতে অমলিন হয়ে রয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের সময়ও নৌ বাহিনীর বিমান বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এই বিভাগ সেই সময় কড়া নজরদারী চালায়।

১৯৮০ সালে আইএনএস বিরাট এবং ২০১৩ সালে আইএনএস বিক্রমাদিত্য বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সমুদ্রে নজরদারীর কাজে আমরা আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেছি। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি বিমান বহনে সক্ষম নতুন বিক্রান্তের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়েছে, যা ভারতীয় নৌ বাভারতীয় নৌ বাহিনীর বিমান বিভাগকে প্রেসিডেন্টস কালার প্রদানের এই অনুষ্ঠানে আপনাদের মধ্যে থাকতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত বলে অনুভব করছি। ভারতীয় নৌ বাহিনীর বিমান বিভাগের জাতিকে সেবা করার গৌরবজ্জ্বল ৬৮টি বছর পূরণ করা আসলেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

আরও পড়ুন -  Kim Jong Un: পরমাণু অস্ত্র নয়, দেশের খাদ্য সংকট নিয়ে বললেন কিম

এই সাফল্য অর্জনের জন্য আমি প্রাক্তন এবং বর্তমান সব আধিকারিক এবং নাবিকদের অভিনন্দন জানাই। শান্তিপূর্ণ অবস্থায় এবং যুদ্ধের সময় জাতিকে যে ব্যতিক্রমী যে পরিষেবা আপনারা দিয়েছেন, তারই স্বীকৃতি হিসেবে আজ প্রেসিডেন্টস কালার দেওয়া হচ্ছে। নৌবাহিনীর বিমান বিভাগের উৎকৃষ্ট পেশাদারিত্ব রয়েছে। অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে এই বিভাগ তার দায়িত্ব পালন করে থাকে। নৌ বাহিনীর বিমান বিভাগের প্রতিটি সদস্যকে আমি শুভেচ্ছা জানাই।
হিনীর জন্য যথেষ্ট গর্বের বিষয়। এর ফলে এই অঞ্চলের অন্যান্য নৌ বাহিনীর থেকে ভারতীয় নৌ বাহিনী যে আলাদা সেটি প্রমাণিত। পৃথিবীতে মাত্র তিনটি নৌ বাহিনীর বিমান বিভাগ রয়েছে। বিগত সাত বছর ধরে এই বিভাগের পরিচালন সংক্রান্ত অসামান্য যেসব তথ্য রয়েছে, তা যথেষ্ট গর্বের।

নৌ বাহিনীর বিমান বিভাগের মানবিক সাহায্য এবং বিপর্যয়ে ত্রাণ সহায়তার কাজে যুক্ত হওয়ার যথেষ্ট নজির রয়েছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, সম্প্রতি মে মাসে ঘূর্ণিঝড় তাউকতের ফলে মুম্বাইয়ের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় নৌ বাহিনীর বিমান বিভাগ সহনাগরিকদের ত্রাণের ব্যবস্থা করে। প্রতিবেশী বিভিন্ন রাষ্ট্রে এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে এই বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ সাহায্য করে এসেছে।

আরও পড়ুন -  ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ইতিহাস

ভারতীয় নৌ বাহিনী আঞ্চলিক বিভিন্ন অঙ্গীকার পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যার মধ্য দিয়ে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বন্ধু ও সহযোগী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় হয়। আমাদের সামুদ্রিক প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অংশীদারদের কোভিড আউটরিচ কর্মসূচীর আওতায় নৌ বাহিনী নানা ধরণের সহযোগিতা করেছে। অপারেশন ‘সমুদ্র সেতু’ এবং ‘মিশন সাগর’–এর মতো কর্মসূচীর বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সঙ্কটের মুহুর্তে ভারতীয় নৌ বাহিনীর দ্রুত ও যথাযথ ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘পছন্দসই নিরাপত্তার অংশীদার’ এবং ‘প্রথম সাড়া দেওয়া’ –র ভূমিকা ভারত যথাযথভাবে পালন করছে।

আমাদের সামুদ্রিক সীমানার সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি বিশেষ সাফল্যের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। আমাকে বলা হয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী সক্রিয়ভাবে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নৌবাহিনীর বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ অধিগ্রহণ পরিকল্পনা থেকে এটি স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমান বিভাগও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। বিমান পরিবহণ প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নৌবাহিনীর বিমানবহরেও অত্যাধুনিক, দেশীয় সমরাস্ত্র, সেন্সর, ডেটা লিঙ্ক ব্যবস্থা যুক্ত করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা বাড়ানোর জন্য হিন্দুস্তান এয়্যারোনটিক্স লিমিটেডের দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হাল্কা ওজনের ডর্নিয়ের এবং চেতক হেলিকপ্টার সম্প্রতি বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুন -  শৈশবের আনন্দ

নৌবাহিনীর বিমান বিভাগের কর্মীরা কতটা অনুপ্রাণিত, সেটি এই বিভাগ শুরু হওয়ার পর এর উড়ান সংক্রান্ত চিত্তাকর্ষক পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় । এই বিভাগে মহিলাদের কাজের সুযোগ দেবার ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে রয়েছে। আমি শুনেছি বিভাগের ১৫০ জন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল অফিসারদের মধ্যে ৮৪ জন, অর্থাৎ ৫০%র বেশি মহিলা। ৪০০ জন পর্যবেক্ষকের মধ্যে ৭৫ জনই মহিলা। আমি এও জেনেছি বিমান চালানোর জন্য আপনারা মহিলা পাইলট নিয়োগ করেছেন, এই প্রবণতা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর।

এই বিশেষ অনুষ্ঠানে দেশের জন্য কাজ করার সময় নৌবাহিনীর বিমান বিভাগের যে সব সদস্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, তাঁদের আমার শ্রদ্ধা জানাই। আমরা তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের কাছে চিরঋণী হয়ে থাকবো।

আমি আরো একবার নিরলসভাবে দেশসেবার জন্য নৌবাহিনীর বিমান বিভাগের সব প্রাক্তনী এবং কর্মরতদের অভিনন্দন জানাই। সব পুরুষ এবং মহিলাদের তাঁদের নিঃস্বার্থ ও একনিষ্ঠ সেবা বজায় রাখার জন্য আবেদন জানাই। আপনাদের ভবিষ্যৎ সাফল্যমণ্ডিত হোক।

ধন্যবাদ,

জয় হিন্দ!

সূত্রঃ পিআইবি।