খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ
আমি ও তিমিরকান্তি
গ্রামের নাম আনন্দপুর, বাড়ির নাম খুশির ডিঙা,
সেখানেই তিমিরকান্তির তিন পুরুষের আধছেঁড়া সংসার
জাতে কায়স্থ, ভাতে গরিব,
মাঝেমধ্যে খাবার জোটে,
মাঝেমধ্যে মহাশূন্যে উড়ে যায় দিন-রাতের জ্বলন্ত খিদে।
সাধ থাকলেও জলজীবিকার তেমন উপায় ছিল না পরিবারে,
এমনকি গলায় পৈতে ঝুলিয়ে সহজ ধর্ম ব্যবসার
জন্মগত সমান অধিকার ছিল না তাদের।
আমার সঙ্গে একই স্কুলে, একই ক্লাসে পড়ত তিমিরকান্তি।
একসঙ্গে অনেকগুলো মাটি চাপা বছর পার করেছি আমরা
কত সকাল, কত বিকেল, কত মধ্যরাত পার করেছি !
যৌথ বিশ্বাসে গ্রামভারতের গভীরে নেমেছি দু’জনে।
আমার কোন অভিযোগ নেই,
নতুন কোন তরঙ্গ-ক্ষোভ নেই
আমি পারতাম না, তিমিরকান্তি পারত
অসামান্য কেরামতি দেখিয়ে প্রথম হত চিরনতুন পরীক্ষায়।
একদিন যখন আমাদের অবাধ যৌবন কড়া নাড়ল মাথায়
তরুণ মাছের মত চঞ্চল প্রেম আসল শরীরে
আমরা ছুটলাম চাকরির জন্য।
পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিনে ছুটল দরখাস্ত
আমাদের কারোর কোটা ছিল, কারোর পয়সা ছিল,
কারোর ছিল রাজনৈতিক দাদা-দিদির হাঁটু পর্যন্ত লম্বা হাত
তিমিরকান্তির কিছুই ছিল না।
অথচ সাপের ফনার মত বেড়েছে জনসংখ্যা,
বেকারত্ব বেড়েছে, জাতিদাঙ্গা বেড়েছে রাস্তায় রাস্তায়।
তিমিরকান্তি এমএ, পিএইচডি;
সহজ সমাজবোধের জন্য শুধু যোগ্য চাকরি নয়
অভ্যস্ত হাতের বাইরে চলে যায়
পিওনের চাকরি অথবা দারোয়ানের চাকরি।
তিমিরকান্তির চাকরি হয়নি, তিমিরকান্তিদের চাকরি হয়না।