দরকচা দিন

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ

দরকচা দিন

মায়া হরিণের পিছে ছুটছি সবে।
হঠাৎ করে কয়দিন যাবৎ লকডাউন হবে হবে করে আজ বেশ কড়াকড়ি লকডাউন শুরু হয়েছে।রাস্তায় গলিতে মোড়ে পুলিশ র‍্যাব বাহিনীর টহল চলছে।
বিকাল চারটা।বসে আছি গুলশান এক ও দুই এর মাঝামাঝি গ্রামীণফোনের অফিসে।বান্ধবীর আগের অফিসের ফোন নং বদলাবে(Transfer) নিজের নামে।
বেশ সময় লাগছে।
ঝকঝকে তকতকে অফিস।মাস্ক মুখে থাকায় ব্রেনে অক্সিজেন কম যায় আর সেন্ট্রাল এসির বাতাসে যে কেহই নীরবতার এই মেঘলা লকডাউন দিনে একটা ঘোরের মধ্যে প্রবেশ করে।আমিও ব্যাতিক্রম নই।ঘোর বলছিলো ,একদিন ভোর আসবেই।
আসার সময় চার রিক্সা বদলে আসতে হলো। ওর(বান্ধবীর) টাকার কিছু শ্রাদ্ধ হলো বৈকি!লোকজন কম, খুব ফাঁকাফাঁকা রাস্তাঘাট।করোনার চেয়ে ব্ল্যাক ফাংগাস বা হোয়াইট ফাংগাস ভয়ে ভীত সবে।বর্ডার এরিয়া থেকে এই ব্যাধি বাংলার ঘরেঘরে ছড়িয়ে যাচ্ছে।সামনে কোরবানি উৎসব। ভারতীয় গরু ও ব্যবসায়ীদের চলাচল বেশি হবে ভেবেই হয়ত এই লকডাউন।
এছাড়া ঘরেঘরে করোনা রোধেও এই ব্যবস্থা। তবে পোষাক কারখানাগুলো খোলা।অনেকেই বেশ জটিল ভাবে পাশফাস বের করে অফিসে যাচ্ছেন।রিক্সাচালকদের জন্য মায়া হচ্ছে,এই শ্রেণির লোক,যারা দিন আনে দিন খায় তাদের বেশ সমস্যা বৈকি। যাত্রী না পেয়ে পেয়ে ত্রিশ টাকার ভাড়া তারা পঞ্চাশ ষাট টাকা হাকছে।
তবে এইমেঘলা দিনটা কাঁচাপাকা লাগছে।এমন মন কেমন করা দিনের ভাজে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে,ইচ্ছে করে নদীর বুকে ভেসে বেড়াতে,ইচ্ছে করে বনের ধারে টিনের চালাঘরে চায়ের ভাড়ে ঠোঁট ভেজাতে।অথচ করোনার জ্বরে লকডাউন, শাটডাউন, শকডাউনও।তিন রিক্সা পালটে বিকাল পাঁচটার দিকে ঘরে ফিরতে বাধ্য হলাম।তাইতো পাকাকলা কচকচে হলে তাকে বলে দরকচা।দিনটাও ঠিক তাই,দরকচা একটা দিন।

আরও পড়ুন -  ঝুলন চাঁদের মাঠ

কলমি, লালশাকে মুখ রাঙাতে ইচ্ছেগুলো ছুটে আসে মফস্বলের স্বজন ঘরে দইবড়া হাতে।
পল্লিতে বর্ষা মওসুমে সবুজ হওয়া শাখায় পাতায় বাতাসের গুঞ্জনধ্বনিতে কান পাততে।
কিন্তু কেনো ইচ্ছেগুলো পোকায় খাওয়া,কুঁকড়ে যাওয়া ডালপালায় নুয়ে থাকে
ঘরবন্দী, স্বল্প আঁচে, স্বল্প শ্বাসে, বাঁচার আশে।বর্ষাকেয়া,কদম,জুঁই শাখে কান্না ভেজা প্রভাত হতে গভীর রাতে, শোক বিলাতে।বর্ষাভেজা ফেসবুকের ইস্টিশনগুলোয় বিজ্ঞাপনগুলো ঝুলতে থাকে স্বজনহারা আর্তনাদে।
গাঘেঁষা জোঁকের মত মৃত্যু চোষক মুখে দাঁড়িয়ে থাকে দ্বারেদ্বারে প্রাচীর ঘেরা ইমারতে।
আমরা থাকি আতংক হাতে,পালাক্রমে বাঁচার আশে,মৃত্যুর সাথে।
ইচ্ছেগুলো মাছির মত ফানুস হয়ে উড়তে থাকে…

আরও পড়ুন -  ঠোঁট নাড়ছে ভোর


জেবুননেসা হেলেন ( বাংলাদেশ )।