খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, ওয়েবডেস্কঃ একদা কোন এক নারীকে দেখে কবি লিখেছিলেন ‘চুল তার কবেকার, অন্ধকার বিদিশার নিশা মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য। আধুনিক কবিরা এমন কবিতা লিখতে গেলে সামনে কোন নারীকে খুঁজে পেতে তাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। একথা বলাই যায় কারণ এক ঢাল লম্বা চুল এখন খুঁজলে খুব একটা পাওয়া যায় না। তার দোষ অবশ্য আমরা নিজেরাই। নিজেরা নানান রকম বাজারচলতি কেমিক্যাল ব্যবহার করে আমাদের মাথায় টাক ফেলে দিচ্ছে। এদিকে পকেট গড়ের মাঠ হচ্ছে আর মাথাও। একটু যদি পুরোনো দিনে ফিরে যান তাহলে দেখতে পাবেন আমাদের মা ঠাকুমার মাথাভর্তি চুল ছিল, তারা কিন্তু বাজারচলতি এত নামিদামি প্রোডাক্ট ব্যবহার করতেন না। খুব সাধারণ জীবন যাত্রায় তারা অভ্যস্ত ছিলেন। টাটকা শাকসবজি খেয়ে তাদের মাথা ভর্তি চুল থাকতো। তাই মাথাভর্তি চুল আনার জন্য চলুন ব্যবহার করি মা ঠাকুমার আমলের কয়েকটি সহজ পাঁচটি টিপস। প্রথমত, নারকেল তেল – এখনকার মহিলারা মাথায় তেল মাখতে ভুলেই গেছেন। তেল মেখে রাস্তায় বেরোলে দেখতে বাজে লাগবে, সেই জন্য তারা মাথায় তেল মাখেন না। কিন্তু না মেখে মেখে যে মাথায় টাক পড়ে যাচ্ছে সেদিকে বোধহয় কারো লক্ষ্য নেই। যেই মুহূর্তে মাথায় টাক পড়তে শুরু করল সেই মুহূর্তে ছুটে যাওয়া বিউটি পার্লারের পথে। সেখানে গিয়ে টাকা পয়সা খরচ করে আরও খানিকটা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া। এর থেকে যদি পুরনো আমলের একটি কথা মাথায় রাখেন তখন দেখবেন মাথায় কত চুল। মা ঠাকুমারা স্নানের পর নারকেল তেলের টিনের ডিব্বা থেকে একটু তেল নিয়ে ব্রহ্মতালুতে মাসাজ করতেন। এইটুকুতেই তাদের মাথা ভর্তি চুল ছিল। আপনি সব দিন যদি নাও পারেন সপ্তাহে তিনদিন চুলে ওয়েলিং করা ভীষণ প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বাজারের যেকোন ব্র্যান্ডেড কোম্পানির ভালো নারকেল তেল নিয়ে চুলের গোড়ায় গোড়ায় ভালো করে ম্যাসাজ করুন। এতে চুল ভেতর থেকে পুষ্টি লাভ করবে এবং চুল ওঠা বন্ধ হবে।
দ্বিতীয়ত, মাথা পরিষ্কার রাখা – আমরা অনেকেই ভাল করে শ্যাম্পু করি না। শ্যাম্পু করার সময় কোন রকম কিপটেমো করা যাবে না। সপ্তাহে অন্তত দুদিন খুব ভালো করে মাথা পরিষ্কার করতে হবে। নোংরা মাথায় অনেক রকমের ফাংগাল ইনফেকশন হতে পারে। যার জন্য মাথা থেকে প্রচুর পরিমাণে চুল উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে বাড়িতে শ্যাম্পু তৈরি করতে পারেন রিঠা, আমলকি পাউডার, শিকাকাই পাউডার অন্তত সাত-আট ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ভাল করে ছেঁকে নিয়ে এই তরল ভালো করে মাথায় ঘষে ঘষে শ্যাম্পু করতে পারেন। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে বাজারচলতি সম্পর্কে সামান্য জলের সঙ্গে মিশিয়ে তবে মাথায় ভালো করে ঘষবেন।
তৃতীয়ত, সপ্তাহে দুদিন হেয়ার প্যাক – সপ্তাহে দুদিন অন্তত চুলের খাদ্য দেওয়া ভীষণ প্রয়োজন। এর জন্য আপনাকে উপযুক্ত হেয়ার প্যাক বানাতে হবে। এই হেয়ার প্যাক বানানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন কাঁচা ডিম। তবে যাদের ডিমের সমস্যা আছে তারা নাও দিতে পারেন। কাঁচা ডিম টকদই একটা পাকা কলা সামান্য মধু অ্যালোভেরা জেল চাইলে এই সমস্ত উপাদানকে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালো করে ম্যাসাজ করে, অন্তত এক ঘণ্টা রাখার পরে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
চতুর্থত, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন – চুল ভালো রাখতে গেলে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া মানে কিন্তু সবসময় দামী দামী খাবার খাওয়া একদমই নয়। আপনি সারাদিনে অন্তত যে কোনো একটা মরসুমী ফল খেতে পারেন। আপেল, পেয়ারা, লেবু যা খুশি সারাদিনে একটি আমলকি আপনাকে খেতে হবে। আমলকি চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। সারাদিনের সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। সবুজ শাকসবজি চুলের জন্য ভীষণ উপকারী। কারিপাতা ফোটানো জল যদি মাঝেমধ্যে খেতে পারেন তো এটিও আপনার চুলের জন্য ভীষণ ভালো। ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ যোগ ব্যায়াম এবং শরীরে অক্সিজেন যত বৃদ্ধি পাবে অর্থাৎ ব্লাড সার্কুলেশন যত বৃদ্ধি পাবে, ততো আপনার চুল সুন্দর এবং সতেজ ও পুষ্টিকর হয়ে উঠবে।
পঞ্চমত, কয়েকটি জরুরি টিপস
১) রাতে শুতে যাওয়ার সময় চুল ভালো করে আঁচড়ে নিয়ে ভালো করে বেঁধে শুতে হবে।
২) বাইক বা গাড়িতে যদি জানলার ধারে বসে কোথাও বেড়াতে যান তাহলে চুল খুলে রাখবেন না, চুল খুলে রাখলে কিন্তু চুলে প্রচন্ড পরিমাণের জোট করবে এবং যার ফলে আঁচড়ানোর সময় চুল প্রচন্ড পরিমানে ছিঁড়ে যেতে পারে।
৩) চুলে কোন রকম খারাপ কেমিক্যাল অর্থাৎ খারাপ শ্যাম্পু বা কেমিক্যালযুক্ত হেয়ার সিরাম অথবা কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত নয়।