চিঠি

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ

চিঠি

রুমকি আনোয়ার। লেখিকা।

রুমকি আনোয়ার ( বাংলাদেশ ) 

প্রিয়তমা ,
এ চিঠি যখন তুমি পাবে তখন কাঁধে পাঁচমনি বোঝা নিয়ে শত্রু ছাউনির দিকে এগুচ্ছি । তুমি তো প্রায় আমাকে খুনি বলতে চিঠি পেয়ে আজও হয়ত বলবে । তোমার ছবিটা আমার বুক পকেটে সঙ্গী হয়ে আছে । শান্তি যেখানে তিরোহিত , যুদ্ধ সেখানে অনির্বায । জানি বলবে তুমি ” তবে শান্তির শ্বেত কপোত উড়াও কেন ? ” প্রশ্নটা আমাকে যে ভাবায় না তা নয় । মাঝে মাঝে ভাবি হয়ত সময়ের প্রয়োজন মেটাতে এ যুদ্ধ কিংবা অহেতুক । সাম্রাজ্যবাদ – ইমপ্যারিয়ালিজম – পেটি বুর্জোয়া এগুলো আমাদের ভাবতে নেই । প্রতিনিয়ত মৃত্যু তাড়া করে চলে আমাদের । মৃত্যুর উল্লাসে যখন কেঁপে তখন মনে হয় আমি পৃথিবীর শাহেনশাহ্‌ । বড় জোর সাহসিকতার জন্যে একটা পদক আর কিছু নগদ কড়ি । গত কাল আমার হাতে মারা পড়েছে সদ্য কিশোর এক । না মেরে উপায় ছিল না খুব কাছাকাছি এসে পড়েছিলো । অপারেশন ডেজার্ট ফক্সের সেই রোমেলের কথা মনে হলো শত্রুকে দয়া দেখাতে নেই তাহলে থাক সে কথা । কিশোরের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের ছেলের কথা মনে হলো । রাতের খাবার খাওয়া হলো না । জানি তুমি কাঁদছো । সত্য বলতে কি যুদ্ধের প্রথম বোমাটা মানবতার উপর পড়ে । ধুয়ে মুছে নিয়ে যায় মানবতা । তখন আমাদের বুদ্ধি আমাদের মস্তিষ্কে থাকে না চলে যায় বুটে । একজন সৈনিকের বুটই । লেফট , রাইট , লেফট – লেফট , রাইট , লেফট জীবন সেখান থেকেই শুরু । যুদ্ধে ফান পার্ট থাকে । সে গুলো আরও ভয়ঙ্কর । আমাদের শিবিরের একটা নারী সৈনিক ধরা খেলো তাকে সম্ভোগ করে স্তন ছিড়ে নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় এটা আতঙ্কের জন্ম দেয় । জওয়ান লাড়কিরা ভয় পেয়ে যুদ্ধ থেকে যেন পিছিয়ে যায় । অ্যামেরিকা আর ভিয়েতনাম যুদ্ধে অ্যামেরিকার কিছু সৈন্য ধরা পড়ার পর ওদের জ্যান্ত টুকরো করা হয় । পরে তা দিয়ে কাবাব বানিয়ে খেয়ে ফেলে । এ দৃশ্য তখনকার টিভিতে দেখার পর সৈনিকদের মনোবল ভেঙ্গে গিয়েছিল । যুদ্ধ আমাদের পশুতে রূপান্তর করে । রক্ত হয়ে উঠে যেন প্রিয় পানীয় । তোমার সুধীর কাকু মারা পড়েছে তারই ভুলে । রাতে বিড়ি ধরিয়েছিল ক্যাপ্টেনের সাবধানবানী ভুলে গিয়েছিল গুলি সোজা বুক ভেদ করে চলে গেছে । মুখে তখনো তার ধরানো বিড়ি । মাথার উপর দিয়ে যুদ্ধ জাহাজ চলে যেতেই শুয়ে পড়লাম । খুব কাছেই আকাশ আলোকিত হলো । ভয় পেও না প্রিয়তম আমি সাবধানী আমি মরবো না । এ যুদ্ধ স্থায়ী হবে সুযোগ যদি হয় একবার আসবো । বাঙ্কারে আমি এখানে জোৎস্না নেমেছে অন্য সময়ে দু’জনে গান গেতাম । জোৎস্না যুদ্ধের জন্যে ভালো কিছু নয় । আমাদের ক্যাপ্টেন যুদান সিং প্রায়ই একটা কথা বলেন তা হচ্ছে প্রতি মুহুর্তে যুদ্ধের পটভূমি পালটায় । এই অনুকূলে তো এই প্রতিকূলে । এখন আমাদের এখন বৈরী সময় । টাইম ইজ দ্যা বেস্ট হান্টার তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি । চোখে ঘুম নিয়ে জেগে থাকা খুব কষ্টের এটা যে সোহাগ রাত নয় । আজ রাতের ডিউটি আমার । অনেক কিছুই লিখতে ইচ্ছে করে কিন্তু লেখা হয়ে উঠে না । দু দিন আগে আমরা অনেক সহযোদ্ধাদের হারিয়েছি । মুখ গুলো ভেসে আসতেই বিষণ্ণ বোধ করি আবার ভেতরে তাগিদ অনুভব করি প্রতিশোধ , চরম প্রতিশোধ । চিঠিটা আর ছবিটা তার বুক পকেটে ছিল তাতে রক্ত জমাট হয়ে আছে । সহযোদ্ধাদের চোখে কোন জল আসে নি । তারা কেবল তা জমা দিয়েছে তাদের ক্যাপ্টেন যুধান সিং এর কাছে । যুদ্ধে কখনো অশ্রু থাকতে নেই । আবার আরেকটি দিনের শুরু হবে তার বিকল্প দেয়া হবে অন্য কারো উপর ।

আরও পড়ুন -  ফারেবি ইয়ার পার্ট ৩ তে, অন্তরঙ্গ দৃশ্য রয়েছে ভারতী ঝাঁ এর, ঘুম উড়বে রাতের