খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ
পরিচয়
রোসমেরী উইলসন
বিশু নাপিতের ছোটো মেয়ে জন্ম থেকে অন্ধ। রাত্রিতে একদিন বাড়ি এসে বিশে তার বৌকে আড়ালে ডেকে বলে ,”বৌ, ছোটোটা আমাদের মেয়ে না রে, সবাই বলতিছে ও রাক্ষসী। গিলে খেতি চায় আমাদের। ওকে কাল নিয়ে যাবি তেনার(ওঝার) কাছে। মা রক্ত চায়…”
সারারাত বৌ চোখের পাতা এক করতে পারেনি। আগের মেয়েটিকে বাঁচাতে পারেনি, স্কুল ফেরত কারা যেন তুলে নিয়ে গিয়েছিল। শুকিয়ে যাওয়া কান্নার জল তখনো মড়া মেয়ের মুখে, যখন বাড়ি এল তাকে নিয়ে ভোর ভোর সবাই মিলে। বিশের বৌ জানে এ পৃথিবী সব মেয়েমানুষের নয়, বিশেষ করে গায়ে গতরে দেখতে সুন্দর হলে গরীবের মেয়েদের জন্য কেউ লড়ার তাগিদ দেখায় না গ্রামের দিকে। প্রথম মেয়ের দাহকাজ শেষ হলে শহরের কিছু মহিলা এসে অনেক বুঝিয়েছিল বিশুর বৌকে প্রতিবাদ করতে। বিশুর বৌ করেনি, কারণ লড়াই শুরুতে যারা প্রতিবাদী আওয়াজ তোলে, তারা অনেকেই হারিয়ে যায়। বিশের বৌ জানে সবাই নিজেকে মহান করতে চায়, মানুষের জন্য তারা সবাই আসে না। কিন্তু বিশুকে বাঁচতে হবে, বিশুর বৌকে মাঠেঘাটে কাজে বেড়াতে হবে।
আট ক্লাস অবদি পড়েছে বিশুর বৌ। বিশুর কথা শোনার পর সারারাত ছোটো মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে কাটিয়েছে। মাস্টারমশায় শিখিয়েছিলেন মানুষের পেটে মানুষ হয়। তবে তার পেটে কি করে রাক্ষসী জন্মায়?
এই ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। রফিকুল মাস্টারের এখন অবসর জীবন, তবু তাঁর কত কত ছাত্র চারিদিকে। রফিকুল মাস্টারের একমাত্র মেয়ে জন্মান্ধ রেশমা এবার স্কুলপাশ দিয়েছে। রেশমাকে নিয়ে রফিকুলের স্বপ্নের শেষ নেই। তবে রফিকুল মাঝেমধ্যে ভাবে রেশমাকে এবার সত্যটা জানানো দরকার। জানানো দরকার তাকে যে মানুষ মানুষেরই বাপ হয়, সেখানে জাতপাত ধর্ম সবকিছু তুচ্ছ। পোকামাকড়ের মত তারা, যারা সন্দেহ করে রফিক বিশুর মেয়ের বাপ নয়। এরা আসলে স্বার্থপর ও মূর্খ। এখন সময় হয়েছে রেশমাকে নিয়ে জোড়গলায় সে বলবে এই সমাজকে বিশু নয়, রফিকুল জন্ম না দিলেও সেই আসলে রেশমার বাপ।