কোভিড – ১৯ সংখ্যা বৃদ্ধি

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ    কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব শ্রী রাজেশ ভূষণের পৌরোহিত্যে আজ এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক বসে। এই বৈঠকে স্বাস্থ্যসচিব শ্রী ভূষণ ১২-টি রাজ্যের প্রধান সচিব, অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের সচিব ও ৪৬-টি জেলার কালেক্টর, পুর-কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন।   মূলত যেসব রাজ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সেই সব রাজ্যগুলি এদিনের বৈঠকে যোগ দেয় । এই রাজ্যগুলি হল – মহারাষ্ট্র, গুজরাট, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, জম্মু ও কাশ্মীর, কর্ণাটক, পাঞ্জাব এবং বিহার । এদিনের এই বৈঠকে নীতি আয়োগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সদস্য ডঃ ভি কে পল উপস্থিত ছিলেন ।

বৈঠকে কোভিড-১৯ বিষয়ে বিষদ তথ্য তুলে ধরা হয় এবং রাজ্যগুলিকে জানানো হয় যে ২০২০ সালের মে মাস থেকে দেশে সাপ্তাহিক কোভিড সংক্রমণ এবং প্রাণহানির ঘটনা ক্রমশই বৃদ্ধি পেয়েছে । এর মধ্যে এই মাসেই ৪৬-টি জেলায় সংক্রমণের হার ৭১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ৬৯ শতাংশ । মহারাষ্ট্রের ৩৬-টি জেলার মধ্যে ২৫-টি জেলা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে । গত ১ সপ্তাহে এখানে সংক্রমণের হার ৫৯.৮ শতাংশ ।

বৈঠকে এই রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির ক্ষতিগ্রস্থ জেলার বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করা হয় । এই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে কোভিড-১৯-এর জেরে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই ৪৫ বছরের বেশি বয়সী । গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, ৯০ শতাংশ লোক সচেতন । তবে, মাত্র ৪৪ শতাংশ লোক মাস্ক ব্যবহার করে থাকেন । একজন সংক্রমিত ব্যক্তি ৩০ দিনের মধ্যে ৪০৬ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে দিতে পারেন । কোনরকম বিধিনিষেধ ছাড়াই মাত্র ১৫ দিনেই শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ৫০ শতাংশ হ্রাস পায় এবং ভবিষ্যতে শারীরিক সক্ষমতার পরিমাণ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে । এই গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে “করোনার দ্বিতীয় ঢেউ” এর ধারনা তৃণমূল স্তরে প্রত্যেকের মধ্যে কোভিড সংক্রান্ত যথাযথ নিয়ম মেনে চলা, কোভিড সংক্রমণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ক্ষেত্রে শিথিলতা এনে দিয়েছে । এই কারণে বিগত ১৪ দিনে ৪৬-টি জেলায় ধারাবাহিকভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ সহ কন্টেনমেন্ট কার্যকর করা এবং সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের অনুসন্ধান চালানো হয়েছে । এতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ সম্ভবপর হচ্ছে ।

আরও পড়ুন -  Shreema Bhattacherjee: ব্রহ্মাণি রূপে শ্রীমা, দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়া রূপে

কোভিড অতিমারি নিয়ন্ত্রণ এবং সংক্রমণ প্রসার রোধ করার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে গৃহীত ৫-টি কৌশল –

১) তাৎপর্যপূর্ণভাবে পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি : রাজ্যগুলিকে দৃঢ়ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন যেসব জেলায় সংক্রমণের হার বেশি, সেখানে পরীক্ষার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে । আরটিপিসিআর পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি করতেও বলা হয়েছে । এমনকি ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় নজরদারি চালাতে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট চালাতেও বলা হয়েছে ।

২) সংক্রমিতদের কার্যকরীভাবে আলাদা করে রাখা এবং সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা অন্য ব্যক্তিদের অনুসন্ধান চালানো : পরীক্ষার পর যদি করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দ্রুত আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা করা এবং ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা অন্য ব্যক্তিদের অনুসন্ধান চালানো উচিত । এর পাশাপাশি এও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে সংক্রমণ ধরা পড়ার প্রথম ৭২ ঘন্টার মধ্যে ওই ব্যক্তির ঘনিষ্ঠভাবে সংস্পর্শে আসা গড়ে অন্তত ৩০ জনের অনুসন্ধান চালানো, তাদের পরীক্ষা করা এবং বিচ্ছিন্ন করে রাখা উচিত । স্বাস্থ্যসচিব ছোট ছোট আকারে কন্টেনমেন্ট জোন তৈরি করা সহ কন্টেনমেন্টের নিয়ম কঠোরভাবে বলবৎ করার কথা এদিনের বৈঠকে তুলে ধরেন ।

আরও পড়ুন -  Governor of West Bengal: নতুন গর্ভনর সিভি আনন্দ বোস, পশ্চিমবঙ্গে

৩) সরকারি এবং বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার পুনরুজ্জীবন : সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো শক্তিশালী করে তোলা এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের ক্লান্তি ও একঘেয়েমিভাব কাটানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ।এমনকি করোনায় মৃত্যুর হার সুনির্দিষ্টভাবে হ্রাস করা প্রয়োজন । এই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যগুলিকে আইসিইউ ক্ষেত্রে পরিষেবা প্রদানের জন্য স্ট্যান্ডার্ড ন্যাশনাল ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল বা মানসম্মত জাতীয় চিকিৎসা বিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে ।

৪) কোভিড সংক্রমণ রোধে যথাযথ আচরণ সুনিশ্চিতকরণ : বাজার, আন্তঃ দেশীয় বাসস্ট্যান্ড, স্কুল, কলেজ, রেলস্টেশন ইত্যাদির মতো জনবহুল এলাকায় কোভিড আচারণবিধি কার্যকর করার জন্য নজর দিতে হবে । এক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ অবশ্যই প্রয়োজন । পাশাপাশি এই কোভিড আচারণবিধি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে বিভিন্ন নেতা, সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রধানদের প্রচার চালানো উচিত ।

রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে যারা এই আচারণবিধি মেনে চলবে না, তাদের জন্য জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে অন্য মানুষের কাছে সুনির্দিষ্ট বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয় । হোলি, সব-ই-বরাত এবং ইস্টারের মতো উৎসবগুলিতে বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে থেকে নিঃশব্দে উদযাপন করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে । রাজ্যগুলিকে অবহিত করা হয়েছে যে, কোভিড আচারণবিধি মেনে চললে অন্তত ৭০ শতাংশ সংক্রমণ প্রসার কম করা যাবে ।

আরও পড়ুন -  তেজসে চেপে আকাশে পা প্রধানমন্ত্রীর

৫) জেলাগুলিতে বিপুল সংখ্যক টিকাকরণের লক্ষ্য স্থির করা : যেসব জেলাগুলিতে করোনা সংক্রমণে বেশিরভাগ খবর মিলেছে, সেই সব জায়গায় সংক্রমণ প্রসার রোধের কৌশল হিসেবে নির্দিষ্ট বয়সী জনগোষ্ঠীর সার্বিক টিকাকরণে বিশেষ নজর দিতে হবে । পুনরায় বলা হয়েছে যে দেশে টিকার কোন ঘাটতি নেই । রাজ্যগুলি সমস্ত জেলায় সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমের সাহায্যে টিকাকরণ প্রক্রিয়া চালাতে পারে এবং টিকার অভাবের আশঙ্কায় আগে থেকে টিকা বাফার স্টক করে রাখার কোন প্রয়োজন নেই । রাজ্যগুলির হাতে যে পরিমাণ টিকা রয়েছে, তা পুরো ব্যবহার করতে হবে । চেন্নাই, মুম্বাই, কলকাতা এবং কর্নল-এ চারটি জিএমএসডি ডিপোয় প্রয়োজনীয় টিকা মজুত রয়েছে ।

রাজ্যগুলিকে এক থেকে দেড় মাসের জন্য টিকা মজুত করে রাখা এবং পরিকাঠামো ব্যবস্থাপনার আগাম পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে । কারণ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় প্রশাসনকে যাতে কোনরকম সমস্যায় না পড়তে হয় । একটি জেলার অব্যবহৃত টিকা যাতে অন্যক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়, তার জন্যও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । সূত্র – পিআইবি।