খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ কৃষি ও কৃষক কল্যাণের জন্য বাজেট প্রস্তাব যথাযথ বাস্তবায়নের উপর আয়োজিত ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দিয়েছেন
কৃষি ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়নে বেসরকারি সংস্থাগুলির আরও অংশীদারিত্বের উপর গুরুত্ব আরোপ
ক্ষুদ্র কৃষকদের ক্ষমতায়ন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য : প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কৃষি ও কৃষক কল্যাণে বাজেট প্রস্তাব যথাযথ বাস্তবায়নের উপর আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তব্য রেখেছেন। এই ওয়েবিনারে কৃষি, দুগ্ধ শিল্প, মৎস্যচাষ, সরকারি, বেসরকারি ও সমবায় ক্ষেত্রের অংশীদার, গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য যেসব ব্যাঙ্ক তহবিল যোগান দেয় তাদের প্রতিনিধিরা ছাড়াও কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী এই ওয়েবিনারে অংশ নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ক্ষুদ্র চাষীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থাকে নানা সমস্যা থেকে মুক্ত করার জন্য ক্ষুদ্র চাষীদের ক্ষমতায়নের ওপর নজর দেওয়া হচ্ছে। এবারের বাজেটে কৃষি ক্ষেত্রে ১৬ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণের সংস্থান করা হয়েছে। পশু পালন, দুগ্ধ শিল্প ও মৎস্যচাষের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের পরিকাঠামোর জন্য ৪০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে। ক্ষুদ্র চাষে বরাদ্দ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। ২২টি পচনশীল সামগ্রীকে অপারেশন গ্রিন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও, ই-ন্যামের আওতায় আরও ১ হাজারটি কৃষি বাজারকে যুক্ত করা হয়েছে। ভারতে কৃষি কাজ পরবর্তী ক্ষেত্রে বিপ্লব নিয়ে আসা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থার সংস্কার এবং একবিংশ শতাব্দীর সময়োপযোগী মূল্য-শৃঙ্খলে আরও বেশি কৃষি পণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কৃষি সংক্রান্ত প্রতিটি ক্ষেত্র – খাদ্যশস্য, সব্জি, ফল, মাছ ইত্যাদির প্রক্রিয়াকরণের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এর জন্য কৃষকদের নিজের গ্রামের কাছে উৎপাদিত সামগ্রী সঞ্চয় করে রাখার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। মাঠ থেকে প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে উৎপাদিত সামগ্রী পৌঁছনোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই কাজে কৃষি পণ্য উৎপাদক সংগঠনের ভূমিকার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। দেশের কৃষকরা যাতে তাঁদের উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রির জন্য আরও নতুন নতুন সুযোগ পান, তার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আমাদের কৃষি ক্ষেত্রে সম্প্রসারণের প্রয়োজন, যাতে আন্তর্জাতিক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বাজারে এইসব সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া যায়। গ্রামের কাছে কৃষি-ভিত্তিক শিল্প ক্লাস্টার তৈরি করতে হবে, যাতে গ্রামের মানুষ কৃষি সংক্রান্ত শিল্পে কাজ পেতে পারেন”। জৈব চাষের ক্লাস্টার ও রপ্তানি-নির্ভর শিল্প ক্লাস্টার এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের গ্রাম থেকে কৃষি-ভিত্তিক সামগ্রী শহরে নিয়ে যাওয়ার পর প্রক্রিয়াকরণের কাজ করতে হবে। তিনি ‘এক জেলা, এক পণ্য সামগ্রী’ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এর ফলে দেশের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছবে।
প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, বিশ্বের মৎস্য উৎপাদনশীল রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ভারত অন্যতম হলেও প্রক্রিয়াজাত মাছের আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় পণ্য খুবই কম পাওয়া যায়। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে। এর জন্য বিভিন্ন সংস্কার করা হচ্ছে। সরকার উৎপাদন-ভিত্তিক উৎসাহ খাতে ১১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এর ফলে, তৈরি খাবার, রান্না করা খাবার, প্রক্রিয়াজাত ফল, শাকসব্জি, সামুদ্রিক খাদ্য ও মোজারেলা চিজ উৎপাদনে উৎসাহ তৈরি হবে। অপারেশন গ্রিনস্ প্রকল্পের আওতায় সমস্ত শাকসব্জি ও ফলমূল পরিবহনের জন্য ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। গত ৬ মাসে ৩৫০টি কিষাণ রেল চলাচল করেছে। প্রায় ১ লক্ষ মেট্রিক টন ফল ও শাকসব্জি এই ট্রেনগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠানো হয়েছে। সারা দেশের জন্য কিষাণ রেল হিমঘরের কাজ করছে।
শ্রী মোদী বলেছেন, আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে দেশ জুড়ে বিভিন্ন জেলায় ফলমূল ও শাকসব্জি প্রক্রিয়াকরণের জন্য ক্লাস্টার তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রাইম মিনিস্টার মাইক্রো ফুড প্রসেসিং এন্টারপ্রাইজেস আবগ্রেডেশন স্কিমের আওতায় লক্ষ লক্ষ মাইক্রো ফুড প্রসেসিং ইউনিটকে সাহায্য করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র চাষীদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ট্র্যাক্টর, ফসলের অবশিষ্টাংশ জমি থেকে তোলার যন্ত্র সহ অন্যান্য কৃষি কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র যাতে স্বল্প মূল্যে পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। দেশ জুড়ে সয়েল হেলথ কার্ডের সুবিধা সব কৃষকরা যাতে পান, তার জন্য কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এর ফলে, শস্যের ফলন বৃদ্ধি পাবে।
কৃষি ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলির গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজকর্ম বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কৃষকদের কাছে এমন সুযোগ এনে দিতে হবে, যাতে তাঁরা শুধু ধান ও গম চাষের ওপর নির্ভরশীল না থাকেন। স্যালাডে ব্যবহৃত শাকসব্জির জৈব চাষ ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন ফসলের উৎপাদনের ওপর প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন। সামুদ্রিক শৈবাল ও মৌমাছি থেকে পাওয়া মোম চাষের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, এর ফলে আমাদের মৎস্যজীবী ও মৌ-চাষীদের অতিরিক্ত আয় বৃদ্ধি হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলিকে কৃষকদের আস্থা অর্জনে এগিয়ে আসতে হবে।
চুক্তি-ভিত্তিক চাষের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শ্রী মোদী বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে ভারতে এই ব্যবস্থা চলে আসছে। কিন্তু, চুক্তি চাষের ফলে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক স্বার্থই নয়, জমির প্রতি দায়বদ্ধতা পূরণকেও নিশ্চিত করতে হবে।
দেশে কৃষি কাজে যৌথ উদ্যোগের উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেচ ব্যবস্থা থেকে বীজ রোপণ, কৃষি কাজ ও কৃষকের রোজগার — প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বাঙ্গীণ প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কৃষি ক্ষেত্রের সঙ্গে নতুন উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে হবে এবং এই কাজে যুবক-যুবতীদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। বছরের পর বছর ধরে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা কৃষক, রাখাল, মৎস্যজীবীদের মধ্যে সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। গত এক বছরে ১ কোটি ৮০ লক্ষ কৃষককে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে। কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণদানের পরিমাণ গত ৬-৭ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। সমবায়গুলিকে শক্তিশালী করার জন্য ১০ হাজার কৃষি পণ্য উৎপাদক সংগঠনকে সাহায্য করা হচ্ছে। সূত্র – পিআইবি।