খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্রুত সিদ্ধান্তের কারণে ভারত দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে । ভারতে ২৮শে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি ১০ লক্ষে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৭৩১। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ লক্ষে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার, ব্রিটেনে ২৩ হাজার ৩৬১, ফ্রান্সে ৩৩ হাজার ৪২৪, ব্রাজিলে ২৯ হাজার ১২৯ এবং ইতালিতে ২৪ হাজার ৪৫৬। এই দেশগুলিতে প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যার ভিত্তিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ভারতের তুলনায় প্রায় ৪-৫ গুণ বেশি। ভারতের সঙ্গে এই দেশগুলির তুলনা একটি দেশের করোনা মোকাবিলায় সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণের নিরিখে এবং মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতি ১০ লক্ষে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে করা হয়েছে।
করোনা জনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে প্রতি ১০ লক্ষে ভারতে মৃত্যু হয়েছে ৯৮ জনের। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ লক্ষে এই সংখ্যা ৮১৩, ব্রাজিলে ৮০৫, ফ্রান্সে ৭৮০, স্পেনে ৯৫৫, ব্রিটেনে ৮৪৬ এবং ইতালিতে ৮৮৮। এই দেশগুলিতে করোনা জনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ভারতের তুলনায় ৮-৯ গুণ বেশি। ভারতের তুলনায় এইদেশগুলি অনেক বেশি উন্নত এবং এদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থাও অনেক আধুনিক। বর্তমানে ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা নিম্নমুখী।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ভারতে দৈনিক ভিত্তিতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ৯৭ হাজার ৮৯৪। এই সংখ্যা গত ২৬শে নভেম্বর কমে হয়েছে ৪৩ হাজার ১৭৪।
কেন্দ্রীয় সরকারের কালবিলম্ব না করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলেই সংক্রমণ হ্রাস করার ক্ষেত্রে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে। চীন গত ৭ই জানুয়ারী কোভিড-১৯ সম্পর্কে সমগ্র বিশ্বকে অবগত করেছিল। অবশ্য ভারতে গত ৮ই জানুয়ারী এক বিশেষ বৈঠক আয়োজিত হয় এবং সেখানে স্থির হয় ১৭ই জানুয়ারী থেকে সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমান যাত্রীদের স্ক্রিনিং বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। ভারতে আক্রান্তের প্রথম ঘটনা ঘটে গত ৩০শে জানুয়ারী। এর পরে, অবিলম্বে প্রায় সর্বত্রই স্ক্রিনিং পদ্ধতি চালু করা হয় এবং করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দেশে আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। পরবর্তীকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (হু)এই পদ্ধতি গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি এবারের দোল উৎসব থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখবেন কারণ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক জমায়েত এড়িয়ে চলার যে নিদান বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন তার প্রেক্ষিতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভারতে গত এপ্রিল মাসেই সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্কের ব্যবহার শুরু হয়। দেশে গত ২৪শে মার্চ লকডাউন কার্যকর করার উদ্দেশ্যই ছিল ভাইরাস সংক্রমণের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলা। সেইসঙ্গে লকডাউনের সময় মহামারী প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়। লকডাউনের সময় সুনির্দিষ্টভাবে ১৫ হাজার ৩৬২টি কোভিড স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে, প্রায় ১৫ লক্ষ ৪০ হাজার আইসোলেশন শয্যার ব্যবস্থা হয়েছে, ২ লক্ষ ৭০ হাজার অক্সিজেন বেডের ব্যবস্থা হয়েছে এবং ৭৮ হাজার আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে ৩২ হাজার ৪০০টি ভেন্টিলেটর সরবরাহ করে। এছাড়াও ৩ কোটি ৭০ লক্ষ এন৯৫ মাস্ক এবং ১ কোটি ৬০ লক্ষ পিপিই কিট সরবরাহ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং পরিস্থিতির জটিলতা উপলব্ধি করে সাধারণ মানুষকে আরও সতকর্তা অবলম্বনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, মাস্কের ব্যবহার এবং নিয়মিতভাবে হাত ধোয়ার ফলে ভাইরাস সংক্রমণ শৃঙ্খল ভেঙে ফেলে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বৈজ্ঞানিক মহলের পরামর্শ মেনে ভারতে তুলনামূলক অনেক দেশের আগেই আনলক পর্ব ঘোষণা করা হয়। সরকারের লক্ষ্যই ছিল সমস্ত কিছুর উর্ধ্বে উঠে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা। সরকারের সক্রিয় ও সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা উন্নত দেশগুলির তুলনায় কম রাখা সম্ভব হয়েছে। সূত্র – পিআইবি।