খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ মহামান্য রাষ্ট্রপতি পুতিন,
মহামান্য রাষ্ট্রপতি শী,
মহামান্য রাষ্ট্রপতি রামাফোসা,
মহামান্য রাষ্ট্রপতি বোলসোনারো,
সবার আগে আমি ব্রিকস-এর সফল সঞ্চালনের জন্য রাষ্ট্রপতি পুতিনকে শুভেচ্ছা জানাই। আপনার নির্দেশনায় এবং উদ্যোগের ফলে বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময়েও ব্রিকস তার কাজের গতি অক্ষুণ্ণ রাখতে পেরেছে। আপনার নিজের বক্তব্য রাখার আগে আমি রাষ্ট্রপতি রামাফোসা-কে জন্মদিন উপলক্ষে শুভকামনা জানাতে চাই।
মহামান্যগণ,
এবছর শীর্ষ সম্মেলনের মূল ভাবনা ‘বিশ্ব সুস্থিরতার জন্যে ব্রিকস অংশীদারিত্ব, মিলিত নিরাপত্তা এবং উদ্ভাবক প্রগতি’ এটি যত না প্রাসঙ্গিক ততটাই দূরদর্শী। বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ‘জিও-স্ট্র্যাটেজিক’ পরিবর্তন আসছে। এর ফলে সুস্থিরতা, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হতে থাকবে। আর এই তিনটি ক্ষেত্রেই ব্রিকস-এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে।
মহামান্যগণ,
এবছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭৫ তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আমরা সমস্ত দেশের শহীদ সৈনিকদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছি। ওই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারত থেকেও ২.৫ মিলিয়নেরও বেশি বীর যোদ্ধা ইউরোপ, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন সমরপ্রাঙ্গণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এবছর রাষ্ট্রসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠারও ৭৫ তম বর্ষপূর্তি।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের এক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রূপে ভারত শুরু থেকেই ‘মাল্টি লেটারেলিজম’-এর দৃঢ় সমর্থক। ভারতীয় সংস্কৃতিতেও গোটা বিশ্বকে একটি পরিবার রূপে মনে করা হয়, সেজন্যেও আমাদের মতো দেশের পক্ষে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মতো প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন করা অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রতি আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি ও দায়বদ্ধতা অটল রয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সমস্ত পিস কিপিং অপারেশনকে সবচাইতে বেশি ভারতীয় বীর সৈনিকরাই শহীদ হয়েছেন। কিন্তু আজ এই মাল্টি লেটারেল ব্যবস্থা একটি অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে।
‘গ্লোবাল গভর্ন্যান্স’-এর যে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। এর মূল কারণ হলো এই সংস্থাগুলিকে সময়োপযোগী পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি। রাষ্ট্রসঙ্ঘ আজও ৭৫ বছর পুরনো বিশ্বের মানসিকতা এবং বাস্তবিকতার ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়ে চলেছে।
ভারত মনে করে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সুরক্ষা পরিষদেও অনেক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা আমাদের ব্রিকস সহ-সদস্যদের সমর্থন প্রত্যাশা করি। রাষ্ট্রসঙ্ঘ ছাড়া অন্য অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থাও আজকের বাস্তবিকতা অনুসারে কাজ করছে না। যেমন বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠন( ডব্লিউটিও) , আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল ( আইএমফ) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠানগুলিতেও সংস্কার আনতে হবে।
মহামান্যগণ,
সন্ত্রাসবাদ আজ বিশ্বের সামনে সব থেকে বড় সমস্যা। মিলিতভাবে সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবিলা করা ছাড়াও সন্ত্রাসবাদের সমর্থন ও সাহায্য প্রদানকারী দেশগুলিকেও দোষী সাব্যস্ত করা এবং এই সমস্যার সুসংগঠিত পদ্ধতিতে মোকাবিলা করার পথ খোঁজার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে রাশিয়ার সভাপতিত্বকালে ব্রিকস-এ সন্ত্রাস প্রতিরোধী রণকৌশলকে অন্তিম রূপ দেওয়া হয়েছে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। ভারত তার সভাপতিত্বের কার্যকালে এই সন্ত্রাস প্রতিরোধী রণকৌশলকে প্রয়োগ করবে এবং এই অভিযানকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
মহামান্যগণ,
কোভিড পরবর্তী বিশ্বের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে ব্রিকস দেশগুলিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের এই দেশগুলিতে বিশ্বের ৪২ শতাংশেরও বেশি জনসংখ্যা বসবাস করে এবং আমাদের দেশগুলি বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রধান ইঞ্জিনগুলির অন্যতম। ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধির অনেক সুযোগ এবং সম্ভাবনাও রয়েছে।
আমাদের পারস্পরিক সংস্থাগুলি এবং ব্যবস্থা সমূহ যেমন ব্রিকস ইন্টার ব্যাঙ্ক কো-অপারেশন মেকানিজম, নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক, কনটিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারেঞ্জমেন্ট এবং কাস্টমস কো-অপারেশন ইত্যাদিও কোভিড পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতির পুনর্গঠনে আমাদের অবদানকে কার্যকরি করে তুলতে পারে।
ভারতে আমরা ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানের মাধ্যমে একটি ব্যাপক সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আত্মনির্ভর এবং স্থিতিস্থাপক ভারত কোভিড পরবর্তী অর্থনীতির ক্ষেত্রে ‘ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার’ হয়ে উঠতে পারে। এই মনোভাবই হলো এই অভিযানের মূলভাবনা। আর আত্মনির্ভর ভারত ‘গ্লোবাল ভ্যালু চেইনস’- এর ক্ষেত্রেও একটি শক্তিশালী অবদান রাখতে পারে। এর উদাহরণ আমরা কোভিড-১৯ উদ্ভুত সঙ্কটের সময়েও দেখেছি, যখন ভারতীয় ফার্মা শিল্পের উৎপাদন সামর্থ থাকার ফলে আমরা ১৫০টিরও বেশি প্রয়োজনীয় ঔষধ পাঠাতে পেরেছি।
আমি আগে যেমন বলেছি, আমাদের ভ্যাক্সিন উৎপাদন এবং সরবরাহ ক্ষমতাও এভাবে মানবতার হিতে সুফলদায়ক হবে। ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন, চিকিৎসা এবং পরীক্ষানিরীক্ষা সম্পর্কিত ‘ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি এগ্রিমেন্টস্’-এর ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছে। আমরা আশিকরি ব্রিকসের অন্যান্য সদস্য দেশও এই প্রস্তাবকে সমর্থন করবে।
আমাদের ব্রিকস সভাপতিত্বের সময়কালে ভারত ডিজিটাল স্বাস্থ্য এবং পরম্পরাগত ঔষধ যোগানের ক্ষেত্রে ব্রিকস সহযোগিতা বৃদ্ধির কাজ করবে। এই কঠিন বছরটিতেও রাশিয়ার সভাপতিত্বে সদস্য দেশগুলির জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেমন ব্রিকস ফিল্ম ফেস্টিবল্ আর ব্রিকস সদস্যবৈজ্ঞানিক এবং নবীন রাজনীতিবিদদের নিয়ে আয়োজিত বেশ কিছু আয়োজিত বৈঠক। সেজন্য আমি রাষ্ট্রপতি পুতিনকে হার্দিক অভিনন্দন জানাই।
মহামান্যগণ,
২০২১-এ ব্রিকসের ১৫ বছর পূর্ণ হবে। বিগত বছরগুলিতে আমরা যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেগুলির পর্যালোচনা করার জন্য আমাদের যোগ্য প্রতিনিধিরা একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেন। ২০২১-এ আমাদের সভাপতিত্বের সময় আমরা ব্রিকসের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে ইন্ট্রা-ব্রিকস সহযোগিতাকে আরও মজবুত করার চেষ্টা করবো। আমরা ইন্ট্রা-ব্রিকস ঐক্যবদ্ধতা বৃদ্ধি এবং এর উদ্দেশ্যসাধণের জন্য কার্যকরী সংস্থাগত ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করবো। আমি আরেকবার রাষ্ট্রপতি পুতিনকে এই সফল আয়োজনের জন্য এবং তাঁর সভাপতিত্বকালে সকল প্রচেষ্টার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি।
ধন্যবাদ। সূত্র – পিআইবি।