প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ ইন্ডিয়া এনার্জি ফোরামের উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছেন

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেদ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চতুর্থ ইন্ডিয়া এনার্জি ফোরাম সেরা উইকে উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছেন। এবছরের এই ফোরামের বিষয় “পরিবর্তনশীল বিশ্বে ভারতে জ্বালানীর ভবিষ্যৎ।”

এই উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারত, শক্তিতে ভরপুর। ভারতের জ্বালানীর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ও সুরক্ষিত। তিনি এবিষয়ে আরো ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন, জ্বালানীর ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে। জ্বালানীর চাহিদা এক তৃতীয়াংশ কমে গেছে। মূল্যের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে প্রভাব পড়েছে। প্রথম সারির আন্তর্জাতিক প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে আগামী কয়েক বছর বিশ্বজুড়ে জ্বালানীর চাহিদার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে এই সব সংস্থাগুলি যে পূর্বাভাস দিচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, জ্বালানী ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারত অগ্রগণ্য উপভোক্তা হতে চলেছে। ভারতে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে জ্বালানীর ব্যবহার প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে।

প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারত বিমান পরিবহণের ক্ষেত্রে বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ এবং দেশের অভ্যন্তরে বিমান পরিবহণের এদেশের বাজার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ৬০০টি ভারতীয় উড়ানের থেকে ২০২৪ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ১২০০।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারত বিশ্বাস করে জ্বালানী ক্ষেত্র নির্ভরশীল এবং আয়ত্ত্বাধীন হওয়া প্রয়োজন। যখন আর্থসামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে, সেই সময় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনসাধারণের জ্বালানীর ক্ষেত্রের সাহায্যে ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে এবং সহজ জীবনযাত্রার দিকে আরো এগোনো যাবে। এই প্রসঙ্গে তিনি সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এগুলি ভারতের গ্রামাঞ্চলে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির নাগরিকদের এবং মহিলাদের পক্ষে সুবিধাজনক হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারতের জ্বালানী পরিকল্পনাটি শক্তি ক্ষেত্রে সাম্য নিশ্চিত করে। এক্ষেত্রে স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এর অর্থ আরো জ্বালানীর মাধ্যমে ভারতীয়দের জীবনযাত্রা উন্নত করা। কিন্তু কার্বন নিঃসরণ কম হবে। তিনি এপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ভারতের জ্বালানী ক্ষেত্র উন্নয়ন কেন্দ্রিক, শিল্পবান্ধব এবং পরিবেশ সচেতন। আর তাই পুর্ননবিকরণযোগ্য জ্বালানীর উৎসের বিষয়ে ভারত, সব থেকে সক্রিয় রাষ্ট্র।

আরও পড়ুন -  NATO: ন্যাটো প্রধান কি বললেন ? ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা

প্রধানমন্ত্রী এপ্রসঙ্গে ভারতের নানা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলির ফলে পরিবেশ বান্ধব জ্বালানীর ক্ষেত্রে ভারত আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। গত ৬ বছরে ১ কোটি ১০ লক্ষ স্মার্ট এলইডি স্ট্রীট লাইট লাগানো হয়েছে এবং ৩৬ কোটির বেশি এলইডি বাল্ব বিতরণ করা হয়েছে। এলইডি বাল্বগুলির দাম এক দশমাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এগুলির মাধ্যমে প্রায় ৬ হাজার কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ-এর সাশ্রয় হয়েছে। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে বছরে ৪ কোটি ৫০ লক্ষ টন কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ কমানো হয়েছে। তার ফলে গ্রীণ হাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমেছে। এগুলির মধ্যদিয়ে আমরা বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য দায়বদ্ধ। তিনি বলেছেন, ২০২২ সালের মধ্যে পুর্ননবিকরণযোগ্য জ্বালানী উৎপাদনের ক্ষমতা ১৭৫ গিগাওয়াট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই ক্ষমতা ৪৫০ গিগাওয়াটে বৃদ্ধি করা হবে। বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলির তুলনায় ভারতে যথেষ্ট কম কার্বন নিঃসরণ হয়। এর সঙ্গে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাবো।

শ্রী মোদী বলেছেন, বিগত ৬ বছরে ভারতে সংস্কারের কাজ দ্রুত গতিতে চলেছে। জ্বালানী ক্ষেত্রে অনেক যুগান্তকারী সংস্কার নেওয়া হয়েছে। ২০১৯এর ফেব্রুয়ারীতে উত্তোলন এবং লাইসেন্স নীতির ক্ষেত্রে সংস্কার আনা হয়েছে। রাজস্বের পরিবর্তে উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে আরো স্বচ্ছতা এবং পদ্ধতিগত দিক থেকে সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সংশোধনাগারের ক্ষমতা ২৫০০ থেকে বাড়িয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে বছরে ৪০০০ লক্ষ মেট্রিকটন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সরকার, দেশে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা “এক দেশ, এক গ্যাস গ্রিড” গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। যার মাধ্যমে গ্যাস ভিত্তিক অর্থনীতির দিকে ভারত এগোচ্ছে।

আরও পড়ুন -  Afghan Women: মার্কিন সহায়তা দাবি, আফগান নারী শিক্ষায়

প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, অপরিশোধিত তেলের দাম আরো যুক্তিযুক্ত হওয়া প্রয়োজন। তেল এবং গ্যাস ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও নমনীয় বাজার গড়ে তোলার জন্য একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেছেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বাজারে গ্যাসের মূল্যে সমতা আনার জন্য এমাসের গোড়ায় প্রাকৃতিক গ্যাস বিপণন সংস্কার কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে নিলামের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে আরো স্বাধীনতা পাওয়া যাবে। এবছরের জুন মাসে ভারতের প্রথম স্বয়ংক্রিয় জাতীয় স্তরে গ্যাস ব্যবসার প্ল্যাটফর্মের সূচনা করা হয়েছে। গ্যাসের বাজার দর নির্ধারণের জন্য এর ফলে সাধারণ একটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশ আত্মনির্ভর ভারতের দিকে এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেছেন, আত্মনির্ভর ভারত, আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে গতির সঞ্চার করবে। জ্বালানীর সুরক্ষার বিষয়টি এই উদ্যোগের কেন্দ্রে রয়েছে। ভারতের এই উদ্যোগের ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। সঙ্কটের এই সময়ে ভারতে তেল ও গ্যাসের সরবরাহ শৃঙ্খলে বিনিয়োগ আসছে। অন্য ক্ষেত্রগুলিতেও একই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, ভারত, আন্তর্জাতিক স্তরে জ্বালানী সংস্থাগুলির সঙ্গে কৌশলগত এবং সর্বাঙ্গীন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির পারস্পরিক সুবিধের কথা বিবেচনা করে, প্রতিবেশী প্রথম নীতি অনুসরণ করে জ্বালানী করিডর গড়ে তোলা হয়েছে।

আরও পড়ুন -  ভারতে দৈনিক নতুন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজারের নিচে

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সূর্যের আলো মানব জাতির প্রগতিকে যেমন আরো উজ্জল করে তুলেছে, যেভাবে সূর্য দেবতার রথ যেমন সাতটি ঘোড়া চালায়, ভারতের জ্বালানীর পরিকল্পনাতেও সেই রকম সাতটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। এগুলি হল –

১) গ্যাসভিত্তিক অর্থনীতির দিকে অগ্রগতির জন্য আমাদের উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করা

২) মূলত পেট্রোলিয়াম ও কয়লা সহ জীবাশ্ম জ্বালানীর পরিবেশ বান্ধব ব্যবহার

৩) জৈব জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে দেশীয় সম্পদের ওপর আরো বেশি নির্ভর করা

৪) ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫০ গিগাওয়াট পুর্ননবিকরণযোগ্য জ্বালানীর লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো

৫) কার্বন মুক্ত পরিবহণ ব্যবস্থার দিকে এগোনোর জন্য বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো

৬) হাইড্রোজেন সহ নতুন নতুন জ্বালানীর ব্যবহার বাড়ানো

৭) সমস্ত জ্বালানীর ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাল উদ্ভাবন পদ্ধতিতে নিয়ে আসা

শ্রী মোদী বলেছেন, বিগত ৬ বছর ধরে জ্বালানী নীতির এই বিষয়গুলির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারত এনার্জি ফোরাম – সেরা সপ্তাহ শিল্প, সরকার এবং সমাজের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলবে। তিনি আশাবাদী আরো উন্নত জ্বালানীর ভবিষ্যৎ পাওয়ার জন্য এই সম্মেলনের আলোচনাগুলি ফলপ্রসু হবে। সূত্র – পিআইবি।