জাতির উদ্দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত ২’০, (১৭তম পর্ব) অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। প্রিয় দেশবাসী, আজ বিজয়া দশমী অর্থাৎ দশেরা উৎসব! এই পবিত্র পার্বণ উপলক্ষে সমস্ত দেশবাসীকে আমার শুভ কামনা! দশেরার এই পরব অসত্যকে পরাজিত করে সত্যের জয়! একই সঙ্গে সংকটকে অতিক্রম করে ধৈর্য্যর জয়ের উৎসব। আজ আপনারা অত্যন্ত সংযমের সঙ্গে মর্যাদার সঙ্গে পরব, উৎসব পালন করছেন এবং সেই জন্যই আমরা যে লড়াই করছি তাতে জয় অনিবার্য। আগে দুর্গা মন্ডপে মায়ের দর্শনের জন্য এমন ভীড় হয়ে যেতো একদম মেলার মতো সমারোহ হয়ে যেতো কিন্তু এবারে তেমন হতে পারেনি। আগে দশেরার দিনও বড়ো বড়ো মেলা হতো কিন্তু এবারে তার চেহারা একেবারেই আলাদা। রামলীলার উৎসবেরও একই রকম আকর্ষণ ছিলো কিন্তু সেখানেও কিছু না কিছু প্রতিবন্ধকতা এসেছে। আগে নবরাত্রির সময় গুজরাটের গর্বার ধুন চারদিক ছেয়ে থাকতো এবার সব বড় বড় আয়োজন বন্ধ। আগামী দিনে আরও অনেক পরব,উৎসব আসছে, ঈদ, শরৎ পূর্ণিমা, বাল্মিকী জয়ন্তী আছে এরপর ধনতেরাস, দেওয়ালি, ভাই ফোঁটা, ছঠ মাইয়ার পুজো গুরু নানক দেবজির জন্মজয়ন্তীও আসছে৷ করোনার এই সংকটে আমাদের সংযমের সঙ্গে, মর্যাদার সঙ্গে, সব সামলে নিতে হবে।

বন্ধুরা, যখনই উৎসবের কথা ওঠে, প্রস্তুতি শুরু হয়,প্রথমেই মাথায় আসে বাজার কবে যেতে হবে? কি কি কেনাকাটা করতে হবে? সব থেকে বড়ো কথা বাচ্চাদের এ নিয়ে বিশেষ উৎসাহ থাকে – এবারে এই পরবে নতুন নতুন কি হবে! উৎসবের জৌলুস আর বাজারের চমক একে অপরের সঙ্গে জুড়ে থাকে। কিন্তু এবারে যখন আপনারা বাজারে যাবেন “ভ্যোকাল ফর ল্যোকাল ” নিয়ে আপনার শপথ মনে রাখবেন। বাজারে যাইই কিনবেন স্থানীয় জিনিস পত্রকে বেশি গুরুত্ব দেবেন।

বন্ধুরা, উৎসবের এই হুল্লোড় মজার মাঝে লকডাউনের সময়ের কথাও মনে রাখতে হবে। সমাজের যে বন্ধুদের ছাড়া আমরা মুশকিলে পড়ে যাই যেমন সাফাই কর্মী, বাড়িতে যাঁরা কাজকর্ম করেন সেই ভাই বোনেরা, এলাকার সব্জি বিক্রেতা, দুধ বিক্রেতা, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বন্ধুরা- আমাদের জীবনে এঁদের কি অবদান, লকডাউনের সময় আমার সেটা খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছি। এই কঠিন সময়ে আমাদের সব্বার সঙ্গে তাঁরা ছিলেন আর এখন এই উৎসবের সময়ে আমাদের খুশির সময়ে এঁদেরকে সঙ্গে নিতে হবে। আমার আবেদন, যতোটা সম্ভব এঁদের আপনাদের খুশির সঙ্গী করে নেবেন, নিজেদের পরিবারের সদস্য হিসেবেই এদের ভাবুন, দেখবেন আপনার সেই খুশি কতটা বেড়ে যাবে।

বন্ধুরা, এ সময় দুঃসাহসী সেনাদের কথাও মনে রাখতে হবে, এই উৎসবের সময়েও তাঁরা সীমান্ত রক্ষায় ব্যস্ত রয়েছেন, ভারতমাতার সেবা ও সুরক্ষায় ব্রতী রয়েছেন এঁদের মনে রেখে আমাদের উৎসব উদযাপন করতে হবে। ভারতমাতার এই বীর ভাই বোনেদের জন্য বাড়িতে একটা প্রদীপ জ্বালাবেন।

আমি বীর সেনাবাহিনীকে বলতে চাই আপনারা হয়তো সীমান্তে রয়েছেন, কিন্তু সারা দেশ আপনাদের সঙ্গে আছে, আপনাদের জন্য প্রার্থনা করছে। আমি সেই সব পরিবারের লোকজনদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাচ্ছি যাদের সন্তানেরা সীমান্তে রয়েছেন। দেশসেবার প্রয়োজনে কর্তব্যরত প্রত্যকটি মানুষ যাঁরা নিজেদের পরিবার সংসার থেকে দূরে রয়েছেন তাঁদেরকেও আমার আন্তরিক কৃতঞ্জতা।

বন্ধুরা, আমরা যখন স্থানীয় পণ্যের জন্য সোচ্চার হচ্ছি, দুনিয়াও আমাদের লোকাল প্রোডাক্টের ফ্যান হয়ে উঠছে,আমাদের অনেক স্থানীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক খাদির কথা। দীর্ঘদিন ধরে খাদি সাদাসিধে জীবনধারনের প্রতীক ছিল, কিন্তু আজ খাদি, পরিবেশ-বান্ধব পোষাক হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। স্বাস্থ্যের দিকে থেকে এটি একটি বডি ফ্রন্ডলি ফেব্রিক, যে কোন আবহাওয়ায় পরার পোষাক। আজ খাদি ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়ে উঠছে,খাদির জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে বিশ্বের অনেক জায়গায় খাদি তৈরি হচ্ছে। মেক্সিকোর ওহাকা এমন এক জায়গা। এই এলাকায় এমন কিছু গ্রাম আছে, যেখানকার গ্রামবাসীরা খাদি বোনার কাজ করছেন। এখন ওখানকার খাদি ওহাকা খাদি নামে খ্যাত। ওহাকায় কি করে খাদি পৌঁছে গেলো সে কাহিনিও কম আকর্ষণীয় নয়। মার্ক ব্রাউন নামে মেক্সিকোর এক তরুণ, গান্ধীর ওপর একটা ফিল্ম দেখেছিলেন। ব্রাউন সেই ফিল্ম দেখে বাপুর দর্শনে এতোটাই প্রভাবিত হলেন যে ভারতে বাপুর আশ্রমে এসে হাজির হলেন এবং বাপুর দর্শন অত্যন্ত গভীর ভাবে অনুধাবন করলেন। তাঁর উপলব্ধি হলো খাদি শুধুমাত্র একটা বস্ত্র নয় একটা জীবন পদ্ধতি! এর সঙ্গে গ্রামীণ অর্থনীতি ও স্বয়ম্ভরতার দর্শন জুড়ে আছে। ব্রাউন এর দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হলেন। সেখান থেকে ব্রাউন ঠিক করে নিলেন যে তিনি মেক্সিকো গিয়ে খাদির কাজ শুরু করবেন। তিনি মেক্সিকোর ওহোকায় গ্রামীণ অধিবাসীদের খাদির কাজ শেখালেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ দিলেন এবং আজ ‘ওহোকা খাদি’ এক ব্র্যাণ্ড হয়ে উঠেছে। এই প্রজেক্টের ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে ‘ দ্য সিম্বল অফ ধর্ম ইন মোশন ’. এই ওয়েবসাইটে মার্ক ব্রাউনের খুব আকর্ষণীয় সাক্ষাৎকারও পাওয়া যাবে। তিনি বলছেন যে শুরুর দিকে মানুষ খাদি নিয়ে সন্দিহান ছিল, কিন্তু শেষে এতে তাদের আগ্রহ বাড়ল আর এর বাজার তৈরি হয়ে গেল। তিনি বলছেন যে এটা রামরাজ্যের সঙ্গে জুড়ে থাকা ভাবনা যে আপনি যখন মানুষের প্রয়োজন মেটান তখন মানুষও এসে আপনার সঙ্গে যুক্ত হয়।

বন্ধুরা, দিল্লীর কনট প্লেসে খাদি স্টোরে গান্ধী জয়ন্তীতে এবার এক দিনে এক কোটি টাকার বেশি কেনাকাটা হয়েছে। এইভাবে করোনার সময় খাদির তৈরি মাস্কও খুব পপুলার হচ্ছে। গোটা দেশে অনেক জায়গায় স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী এবং অন্যান্য সংস্থা খাদির মাস্ক তৈরি করছে। উত্তর প্রদেশের বারাবাঙ্কিতে একজন মহিলা রয়েছেন, সুমন দেবীজী। সুমন জী স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীতে নিজের সঙ্গী মহিলাদের সঙ্গে খাদির মাস্ক বানানো শুরু করেন। ধীরে-ধীরে ওঁর সঙ্গে অন্য মহিলারাও যুক্ত হতে থাকেন, এখন তাঁরাও একসঙ্গে হাজার-হাজার খাদি মাস্ক তৈরি করছেন। আমাদের স্থানীয় স্তরে উৎপাদিত পণ্যের মহত্ত্ব হচ্ছে যে সেগুলোর সঙ্গে প্রায়শই একটা গোটা দর্শন জুড়ে থাকে।

আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন আমাদের নিজের জিনিস নিয়ে গর্ব হয় তখন দুনিয়াতেও সেটা নিয়ে আগ্রহ বাড়ে। যেমন আমাদের অধ্যাত্ম, যোগ, আয়ুর্বেদ গোটা দুনিয়াকে আকৃষ্ট করেছে। আমাদের অনেক খেলাধুলোও দুনিয়াকে আকৃষ্ট করছে। আজকাল আমাদের মলখম্ব-ও অনেক দেশে প্রচলিত হচ্ছে। আমেরিকায় চিন্ময় পাটনকর আর প্রজ্ঞা পাটনকর যখন নিজেদের বাড়ি থেকেই মলখম্ব শেখানো শুরু করলেন তখন ওঁদের কোনো আন্দাজ ছিল না যে এতটা সাফল্য পাবেন তাঁরা। আমেরিকায় আজ অনেক জায়গায় মলখম্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চলছে। বড় সংখ্যায় আমেরিকার যুবক-যুবতীরা এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, মলখম্ব শিখছেন। আজ জার্মানি, পোল্যাণ্ড, মালয়েশিয়া, এমন প্রায় কুড়িটা দেশেও মলখম্ব খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। এখন তো এটার ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু করা হয়েছে, যেখানে অনেক দেশের প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। ভারতে তো প্রাচীন কাল থেকে এমন অনেক খেলাধুলো আছে যেগুলো আমাদের অন্তরে এক অসাধারণ বিকাশ ঘটায়। আমাদের মন, দেহর ভারসাম্যকে এক নতুন স্তরে নিয়ে যায়। কিন্তু সম্ভবতঃ আমাদের নতুন প্রজন্মের যুব বন্ধুরা মলখম্বের সঙ্গে ততটা পরিচিত নয়। আপনারা অবশ্যই ইন্টারনেটে এটা নিয়ে সার্চ করে দেখুন।

আরও পড়ুন -  তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন, প্রণব পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়

বন্ধুরা, আমাদের দেশে কতরকম মার্শাল আর্টস রয়েছে। আমি চাইব যে আমাদের যুব বন্ধুরা সে ব্যাপারে জানুক, সেগুলো শিখুক, আর সময়ের নিরিখে উদ্ভাবনও করুক। যখন জীবনে বড় চ্যালেঞ্জ থাকে না, তখন ব্যক্তিত্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচয়ও বাইরে বেরিয়ে আসে না। তাই সর্বদা নিজেকে নিজে চ্যালেঞ্জ করতে থাকুন।

আমার প্রিয় দেশবাসী, বলা হয় যে ‘লার্নিং ইজ গ্রোয়িং’. আজ মন কি বাতে আপনাদের পরিচয় এমন এক ব্যক্তির সঙ্গে করাব, যাঁর মধ্যে এক অদ্ভূত পাগলামি রয়েছে। এই পাগলামি অন্যদের সঙ্গে বই পড়া আর শেখার আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার। উনি পোন মোরিয়প্পপন। পোন মোরিয়প্পন তামিলনাড়ুর তুতুকুড়িতে থাকেন। তুতুকুড়ি পার্ল সিটি অর্থাৎ মুক্তার শহর হিসাবেও পরিচিত। এটা কোনো সময় পাণ্ডিয়ন সাম্রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। এখানকার অধিবাসী আমার বন্ধু পোন মোরিয়প্পন চুল কাটার পেশায় যুক্ত আর একটা সেলুন চালান। খুব ছোট একটা সেলুন। উনি এক অদ্ভূত এবং প্রেরণাদায়ক কাজ করেছেন। নিজের সেলুনের একটা অংশকেই গ্রন্থাগার বানিয়ে দিয়েছেন। যদি কোনো ব্যক্তি সেলুনে নিজের সুযোগের অপেক্ষা করার সময় এখানে কিছু পড়েন, আর যা পড়লেন তা নিয়ে অল্প কিছু লেখেন, তাহলে পোন মোরিয়প্পন জী ওনাকে ছাড় দেন – মজার ব্যাপার না!

আসুন তুতুকুড়ি যাই, পোন মোরিয়প্পন-জীর সঙ্গে কথা বলি,

প্রধানমন্ত্রীঃ পোন মোরিয়প্পন-জী ভোরাকম্ম, কেমন আছেন আপনি?
পোন মোরিয়প্পনঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী-জী, নমস্কার।
প্রধানমন্ত্রীঃ নমস্কার, নমস্কার, আপনার এই যে গ্রন্থাগারের ভাবনা, সেটা কেমনভাবে এল?
পোন মেরিয়াপ্পানের উত্তরের অনুবাদঃ আমি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। তারপর আমার পারিবারিক পরিস্থিতির জন্য আর পড়া হয়নি। যখন আমি লেখাপড়া শেখা লোকজনদের দেখি, আমার তাদের থেকে নিজেকে ছোটো মনে হয়। তখন আমার মনে হয় যদি একটি গ্রন্থাগার গড়ে তুলি, তাহলে ভাল হয়, বহু মানুষের উপকার হতে পারে। এটাই আমার অনুপ্রেরণা ছিল।
প্রধানমন্ত্রী:- আপনার কোন বই সবচেয়ে পছন্দের?
পোন মেরিয়াপ্পানঃ আমার থিরুকুরুল খুব প্রিয়।

প্রধানমন্ত্রী:- আপনার সাথে কথা বলে আমার খুব ভালো লাগলো, আপনাকে অনেক শুভ কামনা জানাই।
পোন মেরিয়াপ্পানঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমারও আপনার সাথে কথা বলে ততটাই ভাল লাগছে।
প্রধানমন্ত্রী:- অনেক শুভ কামনা।
পোন মেরিয়াপ্পানঃ ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী জি।
প্রধানমন্ত্রী:- ধন্যবাদ।
আমি এতক্ষন পোন মেরিয়াপ্পানের সাথে কথা বলছিলাম। দেখুন কিভাবে উনি লোকের কেশসজ্জার পাশাপাশি তাঁদের জীবনকেও সাজিয়ে তোলার ব্যবস্থা করেছেন। থিরুকুরুলের জনপ্রিয়তার কথা শুনে খুব ভালো লাগলো। থিরুকুরলের জনপ্রিয়তা সম্বন্ধে আজকে আপনারা সবাই শুনলেন। আজ ভারতের সমস্ত ভাষায় থিরুকুরল পাওয়া যায়। সুযোগ পেলে অবশ্যই পড়া উচিত। জীবনের চলার পথে এটা একপ্রকারের পথপ্রদর্শক।

বন্ধুরা, আপনারা জেনে খুশি হবেন যে ভারতে এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা জ্ঞানের প্রসারের জন্য নানাভাবে উদ্যোগী। এঁরা সবসময় চেষ্টা করেন যাতে সকলে লেখাপড়া করে। যেমন মধ্যপ্রদেশের সিংরোলির শিক্ষিকা উষা দুবে। তিনি নিজের স্কুটিকেও একটি মোবাইল লাইব্রেরীতে পরিণত করেছেন। উনি প্রতিদিন নিজের চলমান গ্রন্থাগারটি নিয়ে কোন গ্রামে হাজির হয়ে যান ও বাচ্চাদের পড়ান। বাচ্চারা ভালোবেসে ওনাকে বইদিদি বলে ডাকে। এই বছর আগস্ট মাসে, অরুণাচলে নিরজুলির রায়ো গ্রামে একটি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর গ্রন্থাগার বানানো হয়েছে। এখানকার মীনা গুরুং ও দিবাং হোসাই যখন জানতে পারেন যে এখানে কোনো গ্রন্থাগার নেই, তখন তারা এর তহবিল তৈরির জন্য এগিয়ে আসেন। আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন এই লাইব্রেরীর জন্য সদস্য হবার কোন প্রয়োজন নেই। যে কেউ, দুই সপ্তাহের জন্য বই নিয়ে যেতে পারেন, শুধু পড়ে ফেরত দিলেই হবে। এই লাইব্রেরী সপ্তাহে সাত দিন, চব্বিশ ঘণ্টাই খোলা থাকে। স্থানীয় অভিভাবকরা খুব খুশি এই দেখে যে তাদের সন্তানেরা বই পড়ায় ব্যস্ত, বিশেষ করে যখন স্কুলগুলিও অনলাইন ক্লাস আরম্ভ করে দিয়েছে। চন্ডীগড়ে একটি অসরকারি সংগঠন চালান সন্দীপ কুমার। তিনিও একটি মিনি ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার বানিয়েছেন। গরীব বাচ্চাদের জন্য এখানে বিনামূল্যে বই দেওয়া হয়। এছাড়াও, গুজরাটের ভাবনগরের দুটি সংস্থার ব্যাপারে জানি যারা খুব ভালো কাজ করছে। তাদের মধ্যে একটি হল ‘বিকাশ বর্তুল ট্রাস্ট। এই সংস্থাটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন ছাত্রছাত্রীদের অনেক সাহায্য করে। এই ট্রাস্ট ১৯৭৫ থেকে কাজ করে চলেছে এবং তাঁরা পাঁচ হাজারটি বইয়ের পাশাপাশি ১৪০টিরও বেশী ম্যাগাজিন এখানে রেখেছেন। এমনই একটি সংস্থা হল “পুস্তক পরব”। এটি একটি উদ্ভাবনী প্রকল্প, যেটি সাহিত্যের বইয়ের সঙ্গে অন্যান্য বইও বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। আধ্যাত্মিক বিষয়, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা এবং অন্য আরো অনেক বিষয় সম্পর্কিত বই এই লাইব্রেরীতে রয়েছে। যদি এই ধরনের আরো অন্যান্য প্রচেষ্টার সম্বন্ধে আপনারা অবহিত হন, তবে আমার অনুরোধ যে তা অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাগ করে নেবেন। এই উদাহরণ বই পড়া বা গ্রন্থাগার খোলাতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এটা সেই নতুন ভারতের ভাবনারও প্রতীক যেখানে সমাজের বিকাশের জন্য প্রতিটি ক্ষেত্র ও প্রতিটি স্তরের মানুষ নতুন নতুন উদ্ভাবনী উপায় গ্রহণ করছেন। গীতায় বলা হয়েছে,

“ন হি জ্ঞানেন সদৃশং পবিত্র মিহ বিদ্যতে”
অর্থাৎ সংসারে জ্ঞানের সমান পবিত্র আর কিছুই নয়। আমি জ্ঞানের এই প্রসারকারী, এমন মহান প্রয়াসের উদ্যোগী সকল মহানুভবদের হার্দিক অভিনন্দন জানাই।

আরও পড়ুন -  Governor: মোদি সরকার, ১২ রাজ্যপাল বদলাল

আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন পরই সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলজির জন্মজয়ন্তী ৩১শে অক্টোবর, আমরা সবাই “রাষ্ট্রীয় একতা দিবস” রূপে পালন করব। আগেও “মন কি বাত”- এ আমরা সর্দার প্যাটেলকে নিয়ে বিস্তারিত ভাবে কথা বলেছি। তাঁর বিরাট ব্যক্তিত্বের অনেক দিক নিয়ে আমরা চর্চা করেছি। খুব কম মানুষই পাওয়া যাবে যাদের ব্যক্তিত্বে একই সঙ্গে অনেকগুলি উপাদান বিদ্যমান – মতাদর্শগত গভীরতা, নৈতিক সাহস, রাজনৈতিক মেধা, কৃষিক্ষেত্রে গভীর জ্ঞান এবং রাষ্ট্রীয় একতার প্রতি সম্পূর্ণ আবেগ। আপনারা কি সর্দার প্যাটেল এর বিষয়ে একটা কথা জানেন যা ওঁর রসবোধের স্বভাবকে প্রতিফলিত করে? একটু সেই লৌহ পুরুষের ছবি কল্পনা করুন যিনি ভারতীয় রাজন্যবর্গের সঙ্গে কথা বলছিলেন, পূজনীয় বাপুর জনআন্দোলনের ব্যবস্থাপনা করছিলেন এবং একই সঙ্গে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন। আর এসবের মধ্যেও ওঁর সেন্স অফ হিউমার সম্পূর্ণ স্বমহিমায় থাকত। বাপু সরদার প্যাটেল সম্পর্কে বলেছিলেন, “তাঁর মজার কথাবার্তা আমাকে এত হাসাতো যে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যেত। এমনটা দিনে একবার নয় অনেকবার হতো।” এ থেকে আমাদের একটা বিষয় শেখার আছে। পরিস্থিতি যতই বিরূপ হোক না কেন নিজের রসবোধের স্বভাবকে বাঁচিয়ে রাখুন। তা আমাদের হালকা তো রাখবেই, এবং আমরা নিজেদের সমস্যার সমাধানও বার করতে পারবো। সর্দার সাহেব সেটাই তো করেছিলেন!

আমার প্রিয় দেশবাসী, সর্দার প্যাটেল নিজের সম্পূর্ণ জীবন দেশের সংহতির জন্য সমর্পণ করেছেন। উনি ভারতীয় জনমানসকে স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। উনি স্বাধীনতার সঙ্গে কৃষকদের বিষয়গুলিকে যুক্ত করার কাজ করেছেন। উনি ভারতীয় রাজন্যবর্গকে আমাদের রাষ্ট্রের সঙ্গে একাত্ম করার কাজ করেছেন। এটি প্রতিটি ভারতীয়ের মনে বিবিধতার মধ্যে ঐক্যের মন্ত্র জাগরূক করে তুলেছিল।

বন্ধুরা, আজ আমাদের কথা, আমাদের ব্যবহার, আমাদের কাজের মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে সেইসব বিষয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে যা আমাদের “এক” করে। যা দেশের এক অংশে বসবাসকারী নাগরিকদের মনে অন্যত্র বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য স্বাভাবিকতা ও একাত্মতার জন্ম দিতে পারে – আমাদের পূর্বপুরুষরা শতবর্ষ ধরে যে প্রয়াস নিরন্তর করে এসেছেন। এখন দেখুন, কেরলে জন্মগ্রহণ করে পূজনীয় আদি শঙ্করাচার্য জি ভারতের চারদিকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ মঠ স্থাপন করেছিলেন। উত্তরে বদ্রিকাশ্রম, পূর্বে পুরী, দক্ষিণে শৃঙ্গেরি আর পশ্চিমে দ্বারকা। উনি শ্রীনগর যাত্রাও করেছিলেন, সেই কারণেই সেখানে একটি “শঙ্করাচার্য হিল” আছে। তীর্থযাত্রা নিজে থেকেই ভারতকে একসূত্রে গাঁথে। জ্যোতির্লিঙ্গ এবং শক্তিপীঠের শৃঙ্খল ভারতকে একসূত্রে বাঁধে। ত্রিপুরা থেকে শুরু করে গুজরাট পর্যন্ত, জম্মু-কশ্মীর থেকে শুরু করে তামিলনাড়ু পর্যন্ত আমাদের আস্থার কেন্দ্র আমাদের “এক” করে। ভক্তি আন্দোলন পুরো ভারতে এক বড় জনআন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে, যা ভক্তির মাধ্যমে আমাদের ঐক্যবদ্ধ করেছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও সেই বিষয়গুলি এমনভাবে মিশে গেছে যেখানে একতার শক্তি রয়েছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানের আগে বিভিন্ন নদীকে আবাহন জানানো হয়। সেখানে সুদূর উত্তরের সিন্ধু নদী থেকে শুরু করে দক্ষিণ ভারতের জীবনদায়িনী কাবেরী নদী পর্যন্ত শামিল হয়। প্রায়শই আমাদের এখানে লোকেরা স্নান করার সময় পবিত্র চিত্তে একতার মন্ত্রই উচ্চারণ করেন,

“গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী
নর্মদে সিন্ধু কাবেরী জলেস্মিন সন্নিধিং কুরু”।
একইভাবে শিখদের পবিত্র স্থানে “নান্দের সাহিব” এবং “পাটনা সাহিব” গুরুদ্বার শামিল হয়। আমাদের শিখ গুরুরাও নিজেদের জীবন ও সৎ কাজের মাধ্যমে একতার ভাবনাকে প্রগাঢ় করেছেন।

গত শতকে, আমাদের দেশে ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকারের মত মহান ব্যক্তিত্বরা ছিলেন, যাঁরা সংবিধানের মাধ্যমে আমাদের সবাইকে এক সূত্রে বেঁধেছিলেন।

বন্ধুরা,
ইউনিটি ইজ পাওয়ার, ইউনিটি ইজ স্ট্রেংথ,
ইউনিটি ইস প্রোগ্রেস, ইউনিটি ইজ এমপাওয়ারমেন্ট,
ইউনাইটেড উই উইল স্কেল নিউ হাইটস
এমনিতে এরকম অনেক শক্তি মজুত রয়েছে যারা নিরন্তর আমাদের মনে সন্দেহের বীজ বপন করে যাওয়ার চেষ্টা করে, দেশকে ভাগ করার প্রয়াসী। দেশও এই অশুভ শক্তিদের প্রত্যেক বার যোগ্য জবাব দিয়েছে। অনবরত আমাদের সৃজনশীলতার দ্বারা, প্রেমের দ্বারা, প্রত্যেক মুহূর্তের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ছোট থেকে ছোট কাজে এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের সুন্দর রঙগুলিকে সামনে আনতে হবে। একতার নতুন রঙ তাতে রাঙাতে হবে এবং প্রত্যেক নাগরিককেই রাঙাতে হবে। এই বিষয়ে, আমি, আপনাদের সবাইকে, একটি ওয়েবসাইট দেখতে অনুরোধ করছি- ekbharat.gov.in। এতে, জাতীয় সংহতির লক্ষ্যে আমাদের এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকরকম প্রয়াস দেখা যাবে। এটার একটি আকর্ষণীয় বিভাগ আছে- আজকের বাক্য। এই সেকশনে আমরা, রোজ একটি বাক্যকে, বিভিন্ন ভাষায় কিভাবে বলে এটা শিখতে পারি। আপনিও এই ওয়েবসাইট-এ লিখুন, যেমন ধরুন, প্রত্যেক রাজ্য এবং সংস্কৃতিতে আলাদা-আলাদা খাদ্যাভ্যাস রয়েছে। এই রান্নাগুলি স্থানীয় নানা উপাদান, অর্থাৎ সবজি এবং মশলার সাহায্যে বানানো হয়। আমরা কি এই স্থানীয় খাবারের রন্ধন প্রণালীগুলি রেসিপিগুলি আঞ্চলিক উপাদানের নামের সঙ্গে, এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত ওয়েবসাইটে ভাগ করে নিতে পারি? একতা ও রোগ প্রতিরোধ-কে বাড়ানোর জন্য এর থেকে ভাল উপায় আর কি হতে পারে?

বন্ধুরা, আমি এই মাসের ৩১ তারিখে কেবাড়িয়ায় ঐতিহাসিক স্ট্যাচু অফ ইউনিটি-তে অনুষ্ঠিত হতে চলা প্রচুর আয়োজনে সামিল হওয়ার সুযোগ পাব। আপনারাও অবশ্যই এর সঙ্গে যুক্ত হবেন।

আমার প্রিয় দেশবাসী, ৩১ অক্টোবর আমরা বাল্মীকি জয়ন্তীও পালন করব, আমি মহর্ষি বাল্মীকিকে আমার প্রণাম জানাচ্ছি এবং এই বিশেষ উৎসব উপলক্ষে সকল দেশবাসীকে আমার আন্তরিক শুভকামনা জানাচ্ছি। মহর্ষি বাল্মীকির মহান চিন্তাগুলি কোটি-কোটি মানুষকে প্রেরণা যোগায়, শক্তি প্রদান করে। উনি কোটি-কোটি গরীব-দুঃখী এবং দলিতদের জন্য বিশাল বড় আশার আলো। ওঁদের ভেতরে উনি আশা এবং বিশ্বাসের সঞ্চার করেন। উনি বলেন- যে কোন মানুষের ইচ্ছাশক্তি যদি তার সঙ্গে থাকে, তাহলে সে যে কোন কাজ সহজেই করতে পারে। এই ইচ্ছাশক্তিই অনেক যুবক যুবতীকে অসাধারণ কাজ করার শক্তি দেয়। মহর্ষি বাল্মীকি আশাবাদী চিন্তার ওপর জোর দিয়েছেন, তাঁর কাছে সেবা এবং মানুষের গৌরবের স্থান সবার ওপর। মহর্ষি বাল্মীকির আচার, বিচার এবং আদর্শ আজ নতুন ভারত গড়ার আমাদের সঙ্কল্পকে প্রেরণা এবং দিশা দেখায়। আমরা মহর্ষি বাল্মীকির প্রতি সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকব কারণ উনি পরবর্তী বহু প্রজন্মের পথপ্রদর্শনের জন্য রামায়ণের মত মহাকাব্য রচনা করেছিলেন। ৩১ অক্টোবর আমরা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে হারিয়েছিলাম। আমি তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি।

আরও পড়ুন -  স্বর্গ সুন্দর

আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ কাশ্মীরের পুলওয়ামা পুরো দেশের পড়াশোনাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। আজ যখনই দেশের বাচ্চারা নিজেদের হোম ওয়ার্ক করে, নোট বানায়, সেই সময় কোথাও-না-কোথাও এর পেছনে পুলওয়ামার বাসিন্দাদের করা কঠিন পরিশ্রম থাকে। কাশ্মীর উপত্যকা পুরো দেশের প্রায় ৯০% পেন্সিল আর শ্লেটে ব্যবহৃত কাঠের বারের চাহিদা পুরণ করে। আর এর একটা বড় ভাগ পুলওয়ামার থেকে আসে। এক সময়ে, আমরা বিদেশ থেকে পেন্সিলের জন্য কাঠ আমদানি করতাম, কিন্তু এখন আমাদের পুলওয়ামা এই ক্ষেত্রে, দেশকে আত্মনির্ভর করছে। বাস্তবে, পুলওয়ামার এই পেন্সিল, শ্লেটের চাহিদাগুলি কম করতে সাহায্য করছে। উপতক্যার চিনারের কাঠে উচ্চ আদ্রভাব এবং নমনীয়তা থাকে, যা পেন্সিল তৈরির ক্ষেত্রে সহায়ক। পুলওয়ামায়, উকখু কে পেন্সিল গ্রাম নামে ডাকা হয়। এখানে, পেন্সিল স্লেট নির্মাণের বেশ কিছু ইউনিট আছে, যারা রোজগার করতে সাহায্য করছে, এবং এগুলোতে প্রচুর সংখ্যায় মহিলারা কাজ করেন। বন্ধুরা, পুলওয়ামার এই নিজস্ব পরিচয় তখনই তৈরি হয়েছে যখন এখানকার লোকেরা কিছু নতুন করার জন্য তৈরি ছিলেন, কাজ করার জন্য ঝুকি নিয়েছিলেন এবং নিজেদের তাতে যুক্ত করেছিলেন। এরকম কর্মঠ মানুষদের মধ্যে একজন ‘মঞ্জুর আহমেদ আলাই’। আগে মঞ্জুর ভাই সামান্য এক কাঠ কাটার মজদুর ছিলেন। মঞ্জুর ভাই নতুন কিছু করতে চাইছিলেন, যাতে ওঁর পরবর্তী প্রজন্মকে দারিদ্র্যে বসবাস না করতে হয়। উনি পূর্বপুরুষের জমি বিক্রি করে দেন এবং আপেল উডেন বক্স অর্থাৎ আপেল রাখার কাঠের বাক্স তৈরি করার ইউনিট শুরু করেন। তারা নিজেদের ছোট ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন,তখন মঞ্জুর ভাই জানতে পারলেন যে পেন্সিল তৈরিতে পপ্লার উড অর্থাৎ চীনার গাছের কাঠের ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। এই তথ্য জানার পর মঞ্জুর ভাই নিজের শিল্পোদ্যোগের পরিচায়ক রূপে কিছু বিখ্যাত পেন্সিল ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট কে পপ্লার কাঠের বাক্স সরবরাহ করতে শুরু করেন। মঞ্জুর- জীর এটা খুবই লাভজনক মনে হয় আর ওঁর আয়ও ভালো রকম বাড়তে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে উনি এরপর পেন্সিল, শ্লেট তৈরির যন্ত্র নিয়ে নেন আর এরপর তিনি দেশের বড় বড় কোম্পানি কে পেন্সিল শ্লেট এর সাপ্লাই শুরু করে দেন। মঞ্জুর ভাইয়ের ব্যবসার টার্নওভার আজ কোটিতে পৌঁছে গেছে। আর উনি প্রায় 200 লোকের জীবিকা সংস্থানও করে দিয়েছেন। আজ মন কি বাত এর মাধ্যমে সমস্ত দেশবাসীর তরফে, আমি মঞ্জুর ভাই সহ, পুলওয়ামার পরিশ্রমী ভাই-বোনেদের আর ওঁর পরিবার-পরিজনদের প্রশংসা করছি- আপনারা সবাই, দেশের তরুণ প্রজন্মদের শিক্ষিত করার জন্য নিজেদের মূল্যবান অবদান রাখছেন।

আমার প্রিয় দেশবাসী, লকডাউন এর সময় প্রযুক্তি ভিত্তিক পরিষেবা সরবরাহর অনেক ব্যবহার হয়েছে আমাদের দেশে, আর এখন এমনটাও নেই যে শুধু বড় প্রযুক্তি আর লজিস্টিক সংস্থা-ই এটা করতে পারবে। ঝাড়খন্ডে এই কাজ মহিলাদের একটি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী করে দেখিয়েছে। এই মহিলারা কৃষকদের ক্ষেত থেকে সবজি আর ফল নিয়ে সোজা ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। এই মহিলারা ‘আজীবিকা ফার্ম ফ্রেশ” নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেন যার মাধ্যমে মানুষ খুব সহজেই সবজি আনাতে পারেন। এই সমগ্র প্রচেষ্টায়, কৃষকরা নিজেদের সবজি ও ফলের জন্য ভালো দাম পান, আর মানুষেরা পেতে থাকেন টাটকা সবজি। ওখানে ‘আজীবিকা ফার্ম ফ্রেশ” অ্যাপ এর ধারণা খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। লকডাউনে এরা ৫০ লক্ষ টাকারও বেশি ফল ও সবজি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। বন্ধুরা, কৃষি ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হতে দেখে, আমাদের যুব সম্প্রদায় বহু সংখ্যায় এর সঙ্গে জুড়তে শুরু করেছেন। মধ্যপ্রদেশের বড়ওয়ানীর অতুল পাটীদার নিজের এলাকায় চার হাজার কৃষককে ডিজিটাল মাধ্যমে সংযুক্ত করেছেন। এই কৃষকরা অতুল পাটীদারের এই বৈদ্যুতিন প্ল্যাটফর্ম ফার্ম কার্ডে মাধ্যমে, চাষের জিনিস, যেমন, সার, বীজ, কীটনাশক, ফাংগিসাইড ইত্যাদির হোম ডেলিভারি পাচ্ছেন, অর্থাৎ, কৃষকদের দরকারি জিনিস, তাঁরা ঘরে বসেই পাচ্ছেন। এই ডিজিটাল প্লাটফর্মে আধুনিক কৃষি উপকরণও ভাড়ায় পাওয়া যায়। লকডাউন এর সময় এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে কৃষকদের হাজার হাজার প্যাকেট ডেলিভারি করা হয়েছে, যাতে তুলো আর সবজির বীজও ছিল। অতুলজী আর ওঁর দলের সদস্যরা , কৃষকদের প্রযুক্তিগত দিক থেকেও সচেতন করছে, অনলাইন পেমেন্ট আর কেনাকাটা করতে শেখাচ্ছেন।

বন্ধুরা, এই সময়ে মহারাষ্ট্রের একটি ঘটনা আমার নজরে আসে। ওখানে একটি কৃষি পণ্য উৎপাদক সংস্থা , ভুট্টা চাষ করে এমন কৃষকদের থেকে ভুট্টা কেনে। এই সংস্থা কৃষকদের, দামের অতিরিক্ত বোনাসও দেয়। কৃষকদের একটু আশ্চর্য লাগায় তারা কোম্পানিকে এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। কোম্পানি বলেন যে ভারত সরকার যে নতুন কৃষি আইন বানিয়েছে, তার জন্য কৃষকেরা ভারতের যেকোনো জায়গায় ফসল বিক্রি করতে পারছেন আর তারা ভাল দাম পাচ্ছেন। তাই তারা ভাবলেন যে এই বাড়তি লাভ কৃষক বন্ধুদের সঙ্গেও ভাগ করে নেওয়া উচিত, এতে ওঁদেরও অধিকার আছে। আর তাই তাদের বোনাস দেওয়া হয়েছে। বন্ধুরা, বোনাস এখন যদিও ছোট, কিন্তু এই সূচনা অনেক বড়। এর থেকে আমরা জানতে পারি যে, নতুন কৃষি আইন প্রাথমিক স্তরে, কিভাবে কৃষকদের সুবিধার্থে পরিবর্তন আনার সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ মন কি বাত এ, দেশবাসীর অসাধারণ উপলব্ধি, আমাদের দেশ, আমাদের সংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন দিক নিয়ে আপনাদের সবার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলাম। আমাদের দেশ প্রতিভাবান মানুষে ভরপুর। যদি আপনিও এরকম মানুষদের কথা জানেন, তবে তাঁদের সম্পর্কে বলুন, লিখুন আর তাঁদের সাফল্য ভাগ করে নিন। আপনাকে আর আপনার পুরো পরিবারকে আসন্ন উৎসবের অনেক শুভেচ্ছা। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন আর উৎসবের সময় তো বিশেষভাবে মনে রাখবেন- মাস্ক পরতে হবে, হাত সাবান দিয়ে বারবার ধুতে হবে, দুই গজ এর দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
বন্ধুরা, আগামী মাসে আবার আপনাদের সঙ্গে ‘মন কি বাত’ হবে। অসংখ্য ধন্যবাদ। সূত্র – পিআইবি।