খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ গণেশ পুরাণ হল সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ। এটি একটি উপপুরাণ (অপ্রধান পুরাণ)। এই পুরাণের উপজীব্য বিষয় হল হিন্দু দেবতা গণেশের পৌরাণিক উপাখ্যান এবং গণেশের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এছাড়া গণেশ-সংক্রান্ত সৃষ্টিতত্ত্ব, রাজাবলি, রূপক-কাহিনি, যোগ, ধর্মতত্ত্ব ও দর্শনতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে।
গণেশ পুরাণ দুটি বৃহদায়তন ‘খণ্ড’ বা বিভাগে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডটির নাম ‘উপাসনাখণ্ড’। এই খণ্ডে ৯২টি অধ্যায়ে ধর্মতত্ত্ব ও ভক্তিতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ডটির নাম ‘ক্রীড়াখণ্ড’। ১৬৫টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত এই খণ্ডে বর্ণিত হয়েছে পৌরাণিক উপাখ্যান ও রাজাবলি। এই পুরাণের অনেকগুলি পাঠান্তর পাওয়া যায়। মধ্যযুগের শেষ পর্যায়ে (খ্রিস্টীয় ১৩শ থেকে ১৮শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে) দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামি শাসনকালটি ছিল এক রাজনৈতিক সংঘর্ষের যুগ। এই সময়েই এই পুরাণ রচিত ও পরিমার্জিত হয়। সকল প্রধান পুরাণের বৈশিষ্ট্য ও উপাখ্যানগুলি এই পুরাণে সন্নিবেশিত হয়েছে। বেইলির মতে, অন্যান্য সকল পুরাণের মতো রচনাকালের পরিবেশ অনুসারে এই পুরাণেও সাংস্কৃতিক বিষয় এবং সাংস্কৃতিক প্রয়োজন ও সভ্যতার প্রতিফলন ঘটেছে।
মুদ্গলপুরাণ, ব্রহ্মপুরাণ ও ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ গ্রন্থ তিনটির মতো গণেশপুরাণ গ্রন্থটিও গণেশ-সংক্রান্ত একটি বিশ্বকোষতুল্য গ্রন্থ। উল্লেখ্য, ব্রহ্মপুরাণ ও ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ হল মহাপুরাণ এবং গণেশপুরাণ ও মুদ্গলপুরাণ হল উপপুরাণ। এই চার পুরাণগ্রন্থের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু পৃথক পৃথক। ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ গ্রন্থে গণেশকে বলা হয়েছে ‘সগুণ’ (সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই ত্রিগুণ সহিত এবং সাকার)। ব্রহ্মপুরাণ গ্রন্থে গণেশকে বলা হয়েছে ‘নির্গুণ’ (সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই ত্রিগুণ রহিত এবং নিরাকার)। গণেশপুরাণ গ্রন্থে গণেশকে একাধারে সগুণ ও নির্গুণ বলা হয়েছে এবং আরও বলা হয়েছে যে, সগুণ গণেশ নির্গুণ গণেশের আদি রূপ। মুদ্গলপুরাণ গ্রন্থে গণেশকে ‘সম্যোগ’ (পরম সত্য ও আত্মার বিমূর্ত সমন্বয়) রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।
গণেশ পুরাণ হিন্দুধর্মের গাণ্যপত্য সম্প্রদায়ের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ। এই সম্প্রদায়ে গণেশকে প্রধান দেবতা রূপে পূজা করা হয়। সূত্র – সংগৃহীত।