খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ ২৮ দিনের মধ্যে শহরাঞ্চলের স্বচ্ছতার সমীক্ষার পঞ্চম পর্বের কাজ শেষ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার ২০শে আগস্ট বেলা ১১টার সময় ২০২০ স্বচ্ছ সর্বেক্ষণের ফলাফল ঘোষণা করবেন। দেশজুড়ে বার্ষিক স্বচ্ছতা সমীক্ষার এটি পঞ্চম পর্ব। ‘স্বচ্ছ মহোৎসব’ প্রকল্পে দেশের শ্রেষ্ঠ শহর ও রাজ্যগুলিকে মোট ১২৯টি পুরস্কার দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছ ভারত মিশন-নগর প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত কয়েকজন সুবিধাভোগী, স্বচ্ছাগ্রহী, সাফাইকর্মীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করবেন- এঁরা দেশের নানা অংশ থেকে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ ২০২০ ফলাফল সম্বলিত ড্যাশবোর্ডটিরও উদ্বোধন করবেন। বিশ্বে সর্ববৃহৎ স্বচ্ছতার সমীক্ষা, এই স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ ২০২০তে ৪২৪২টি শহর, ৬২টি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, ৯২টি গঙ্গা তীরবর্তী শহরের জন্য ১ কোটি ৭ লক্ষ নাগরিক যোগ দেন।
কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক বৃহস্পতিবার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। এই প্রকল্পে বিপুল সংখ্যক নাগরিক যাতে অংশ নিতে পারেন তার জন্য তাঁদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার মানসিকতা তৈরী করা হয়েছে । এর ফলে দেশের বিভিন্ন শহরের নাগরিকদের মধ্যে শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি হয়েছে।
২০১৬র জানুয়ারি মাসে দেশের ৭৩টি বড় শহরে কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক স্বচ্ছ সর্বেক্ষণের সমীক্ষা চালায়। ২০১৭র জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৩৪টি শহরে স্বচ্ছ সর্বেক্ষণের সমীক্ষা চালানো হয়। ২০১৮তে ৪ হাজার ২০৩টি শহরে এবং ২০১৯এ ৪ হাজার ২৩৭টি শহরে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। ২০১৯এ এই প্রক্রিয়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে ২৮ দিনের মধ্যে করা হয়েছিল- যা একটি রেকর্ড।
২০২০র স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ পরিচালনার সময় সরকার ত্রৈমাসিক পরিচ্ছন্নতার মূল্যায়ণের জন্য স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ লীগ চালু করে। বিভিন্ন শহর এবং নগরাঞ্চলে প্রতিনিয়ত মূল্যায়ণ ও স্থিতিশীল কর্মতৎপরতা নিশ্চিত করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। প্রতি তিন মাস অন্তর এই মূল্যায়ণের প্রাপ্ত ফলাফলের ২৫ শতাংশ এ বছরের চূড়ান্ত স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ ফলাফলে যুক্ত হবে।
নাগরিক ও বিভিন্ন শহরের মধ্যে স্বচ্ছ সর্বেক্ষণে অংশ নেওয়ার প্রবণতা নাগরিক সহ সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে সাধারণ নাগরিকদের নিজের শহরে পরিচ্ছন্নতার দায়বদ্ধতা প্রতিফলিত হচ্ছে। স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ আজ স্বচ্ছতাকে উৎসাহ ও গর্বের বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছে। মাইশুরু শহর প্রথম সমীক্ষায় সবথেকে পরিচ্ছন্ন শহরের মর্যাদা পায়। তার পরের ৩ বছর অর্থাৎ ২০১৭,২০১৮,২০১৯এ যথাক্রমে ইন্দোর শহর ধারাবাহিকভাবে শীর্ষ স্থান অধিকার করে। ২০২০ সালে কোন শহর বিজয়ীর তকমা পায় তা জানান জন্য ২০শে আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ বছর কোভিড মহামারীর কারণে ফল ঘোষণা করতে কিছুটা দেরি হল।
২০২০র স্বচ্ছ সবেক্ষণ ২৮ দিনে সম্পন্ন হয়েছে। এই সমীক্ষার জন্য উল্লেখযোগ্য দিকগুলি হল :
স্বচ্ছতা অ্যাপে ১ কোটি ৭০ লক্ষ নাগরিক নিবন্ধীকরণ করেছেন
সোশ্যাল মিডিয়ায় ১১ কোটির বেশি পোস্টে এর প্রভাব পড়েছে
সাড়ে ৫ লক্ষের বেশি সাফাইকর্মী সমাজ কল্যাণমূলক নানা প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন এবং ৮৪ হাজারের বেশি অসংগঠিত আবর্জনা সংগ্রহকারীকে মূল স্রোতে যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে
২১ হাজারের বেশি জায়গাকে জঞ্জালের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সেগুলির সংস্কার করা হয়েছে
কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের শহরাঞ্চলে স্বচ্ছ ভারত মিশন-নগর প্রকল্পে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইভি) বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, গুগল সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে।
২০১৪ সালের স্বচ্ছ ভারত মিশন-নগর শুরু হওয়ার পর পয়ঃপ্রণালী ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রভূত উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। দেশে কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের নীতি অনুযায়ী ৪৩২৪টি পুরসভাকে খোলা স্থানে শৌচকর্ম মুক্ত অঞ্চল বা ওডিএফ, ১ হাজার ৩১৯টি পুরসভাকে ওডিএফ প্লাস এবং ৪৮৯টি পুরসভাকে ওডিএফ প্লাস প্লাসের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছ ভারত মিশনের লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি সংখ্যায় ৬৬ লক্ষের বেশী বাড়িতে শৌচাগার ও ৬ লক্ষের বেশী মানুষের জন্য শৌচাগার নির্মাণের ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়াও গুগল ম্যাপে দেশের ২ হাজার ৯০০টির বেশি শহরে ৫৯,৯০০ টি শৌচাগারের অবস্থান দেখানো হচ্ছে। ৯৬ শতাংশ ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ৬৬ শতাংশ সংগৃহিত বর্জ্যকে বিশেষ উপায়ে প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে এর পরিমান ছিল মাত্র ১৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক জঞ্জালমুক্ত শহরের নিয়মানুসারে ৬টি শহর (ইন্দোর, অম্বিকাপুর, নবি মুম্বাই, সুরাট, রাজকোট এবং মাইশুরু)৫ তারা শহর, ৮৬টি শহরে তারা শহর এবং ৬৪টি শহরকে ১ তারা শহরের মর্যাদা দিয়েছে।
২০২০র স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ সমীক্ষায় গঙ্গা তীরবর্তী শহরগুলি পরিচ্ছন্নতার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং মূল্যায়ণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন স্থান পেয়েছে- যা ঐ দিনের অনুষ্ঠানে প্রকাশ করা হবে। এই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী শ্রী হরদীপ সিং পুরি, মন্ত্রকের সচিব শ্রী দূর্গা শঙ্কর মিশ্র সহ বিভিন্ন শহরের মহানাগরিক, রাজ্যগুলির মিশন ডিরেক্টর, পুরসভার কমিশনার এবং পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। সূত্র – পিআইবি।