উচ্চশিক্ষা সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ প্রধানমন্ত্রীর

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ উচ্চশিক্ষা সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছেন।

সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে ৩-৪ বছর ধরে ব্যাপক আলোচনা এবং লক্ষাধিক মতামতে ওপর চিন্তাভাবনা ভাগ করে নেওয়ার পর জাতীয় শিক্ষানীতিটি অনুমোদিত হয়েছে। তিনি বলেন, সারা দেশে জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে স্বাস্থ্যকর বিতর্ক এবং আলোচনা চলছে।

জাতীয় শিক্ষানীতির উদ্দেশ্যই হল জাতীয় মূল্যবোধ এবং জাতীয় লক্ষ্যে যুবদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা।

শ্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, এই নীতি নতুন ভারত, একবিংশ শতাব্দীর ভারতে ভিত্তি স্থাপন করেছে। ভারতকে শক্তিশালী করে তুলতে, উন্নয়নের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে এবং দেশের নাগরিকদের ক্ষমতায়ণের জন্য তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে তোলা দরকার, যাতে তারা সর্বাধিক সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।

তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোন পরিবর্তন হয়নি যা মানুষের অগ্রাধিকার ও মানসিকতাকে দুর্বল করেছে। আমাদের দেশের মানুষ কেবলমাত্র ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা আইনজীবি হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় লাভ, সক্ষমতা এবং চাহিদা এই তিনটি বিষয়ের ওপর কোন পরিকল্পনা নেই।

আমাদের শিক্ষার বিষয়ে আগ্রহ জাগ্রত না হলে, শিক্ষার দর্শন, শিক্ষার উদ্দেশ্য মানুষ বুঝতে না পারলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা এবং উদ্ভাবনী চিন্তাধারা কিভাবে বিকশিত হতে পারে সে প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

শ্রী মোদী বলেন, জাতীয় শিক্ষা নীতিতে শিক্ষার বিষয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃষ্টিভঙ্গী প্রতিফলিত হয়েছে। এর লক্ষ্যই হল, আমাদের জীবন এবং অন্যান্য সকল জীবের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষা নীতির সাফল্য অর্জনে প্রয়োজনীয় সব রকম প্রয়াস চালানো হয়েছে।

তিনি বলেন, যে দুটি প্রশ্নকে সামনে রেখে এই শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করা হয়েছিল : এক, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কি আমাদের তরুণ প্রজন্মকে সৃজনশীল, অনুসন্ধানী এবং সঙ্কলপিত জীবনযাপনে উৎসাহিত করে? দুই, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কি আমাদের যুবদের দেশে একটি সক্ষম সমাজ গঠনে সহায়তা করে? এই দুটি বিষয়েই তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যে জাতীয় শিক্ষা নীতিতে এই দুটি অপরিহার্য বিষয়কে যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -  Patient Death: ফের চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যু

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। তিনি আরও বলেন যে পাঠক্রমের ৫+৩+৩+৪ এই নতুন শিক্ষা পরিকাঠামোটি সঠিক পদক্ষেপের এক ধাপ। শ্রী মোদী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের গ্লোবাল সিটিজেন হয়ে উঠতে হবে এবং একইসঙ্গে তাদের শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা সুনিশ্চিত করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষানীতিতে ‘কিভাবে ভাববেন’ তার ওপর দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শিশুদের জন্য অনুসন্ধান ভিত্তিক, আবিষ্কার ভিত্তিক, আলোচনা ভিত্তিক এবং বিশ্লেষণ ভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, এতে তাদের শ্রেণীকক্ষে অধ্যয়নের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলবে এবং তারা আরও বেশি করে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ পাবে।

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের নিজের আবেগ অনুসরণ করে আগ্রহ পূরণের সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। এটি প্রায়সই ঘটে থাকে যে, কোন শিক্ষার্থী পাঠক্রম শেষ করার পরে যখন কর্মসংস্থানের সুযোগ পান তখন তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি যা পড়াশোনা করেছেন তা কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেনা। তিনি বলেন, অনেকেই পাঠক্রম শেষ না করে মাঝ পথেই ছেড়ে দেন। এই ধরণের সকল শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণে নতুন শিক্ষা নীতিতে একাধিক বার ‘প্রবেশ-প্রস্থানে’র বিকল্প রয়েছে বলেও তিনি জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষানীতিতে ক্রেডিট ব্যাঙ্কের সুবিধা রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীরা পাঠক্রম মাঝ পথে ছেড়ে দেওয়ার পর পুনরায় শুরু করতে চাইলে স্বাধীন ভাবে তা ব্যবহার করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি যুগে যাচ্ছি যেখানে একজনকে ক্রমাগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং আরও বেশি দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে’।

আরও পড়ুন -  Web Series: ওয়েব সিরিজটি একদম দেখবেন না পরিবারের সাথে, দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে ট্রেলার

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোন দেশের উন্নয়নে সমাজের প্রতিটি অংশের প্রতি শ্রদ্ধা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই কারণে জাতীয় শিক্ষা নীতিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা এবং পরিশ্রমের সম্মানের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্বের কাছে ভারতের প্রতিভা ও প্রযুক্তির সমাধান উপস্থাপনের সামর্থ্য রয়েছে। জাতীয় শিক্ষা নীতি সেই ধরণের পাঠক্রম বিকাশেই দায়িত্ব পালন করবে। শ্রী মোদী বলেন, এই ভার্চুয়াল ল্যাবের মতো ধারণাগুলি লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর জন্য সর্বোত্তম শিক্ষা প্রদান করবে এবং পরীক্ষাগারের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। যারা এর আগে এই জাতীয় বিষয়ে পড়াশোনা করেননি তাদের বিশেষ উপকারে আসবে। জাতীয় শিক্ষা নীতি আমাদের দেশে গবেষণা ও শিক্ষার ব্যবধান দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রতিষ্ঠান ও পরিকাঠামোয় যখন এই সংস্কার হবে তখন জাতীয় শিক্ষা নীতি আরও কার্যকর ও দ্রুত গতির সঙ্গে বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেন, সমাজে এখন অভিনবত্ব ও গ্রহনযোগ্যতার মূল্যবোধ গড়ে তোলা দরকার এবং এটি আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে শুরু করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতায়ণ দরকার। তিনি বলেন, স্বায়ত্তশাসন নিয়ে দু ধরণের বিতর্ক রয়েছে। এক পক্ষ বলছেন সমস্ত কিছু কঠোরভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত আবার অন্য পক্ষের অভিমত সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে স্বাভাবিকভাবই স্বায়ত্তশাসন দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, প্রথম পক্ষের মত বেসরকারী সংস্থানগুলির প্রতি অবিশ্বাসের ফল স্বরূপ, দ্বিতীয় পক্ষের মতে স্বায়ত্তশাসনকে একটি অধিকার হিসেব বিবেচনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দুটি মতামতকেই একত্রিত করার মাধ্যমে গুণমান সম্পন্ন শিক্ষার পথ প্রশস্ত হবে।

আরও পড়ুন -  আসানসোল পৌরনিগম নির্বাচনী প্রচারে, তৃণমূল পদ প্রার্থী আইনজীবি তপন ব্যানার্জি

তিনি বলেন, ‘মান সম্পন্ন শিক্ষা দেওয়ার জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলি কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে তাদের আরও স্বাধীনতা থাকা উচিত।’ এতে গুনমান সম্পন্ন শিক্ষার প্রসার হবে এবং সকলকেই শিক্ষার বিকাশে উদ্বুদ্ধ করে তুলবে। তিনি আশাপ্রকাশ করেন যে জাতীয় শিক্ষা নীতির পরিধি যতো বৃদ্ধি পাবে তার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসন তত দ্রুত কার্যকর হবে।

তিনি দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এ পি জে আব্দুল কালামের বাণী উদ্ধৃত করে বলেন, ‘শিক্ষার লক্ষ্য হল দক্ষতা দিয়ে একজন ভাল মানুষ গড়ে তোলা। শিক্ষকরা সমাজের জন্য সচেতন মানুষ তৈরি করতে পারেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি শক্তিশালী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে লক্ষ্য রেখে জাতীয় শিক্ষা নীতি তৈরি করা হয়েছে যাতে শিক্ষকরা আরো ভালো সুনাগরিক তৈরি করতে পারেন। জাতীয় শিক্ষা নীতিতে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় শিক্ষা নীতি বাস্তবায়নে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে সাধারণ মানুষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল শিক্ষা বোর্ড, বিভিন্ন রাজ্য এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে এখন থেকে দফায় দফায় আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি জাতীয় শিক্ষা নীতি সম্পর্কে ওয়েবিনার আয়োজন করা এবং নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান। শ্রী মোদী আত্মবিশ্বাস ব্যাক্ত করে বলেন যে ,এই সম্মেলন থেকে জাতীয় শিক্ষা নীতি সফলভাবে কার্যকর করার বিষয় আরও ভাল পরামর্শ প্রদান করা হবে এবং কার্যকরী সমাধানের পথ দেখাবে। সূত্র – পিআইবি।