দেখো আপনা দেশ পর্বে পর্যটন মন্ত্রকের ৪৪তম ওয়েবিনারের বিষয় ছিল ‘গুজরাটের ঐতিহ্যশালী পর্যটন’

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, নয়াদিল্লিঃ কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক দেখো আপনা দেশ ওয়েবিনার সিরিজের আয়োজন করছে। গুজরাটের ঐতিহ্যশালী পর্যটন নিয়ে পয়লা আগস্ট একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়, যেখানে রাজ্যের প্রাচীন যুগের পুরাকীর্তি, মধ্যযুগীয় নানা রাজকীয় স্মারক আর আধুনিক যুগের অত্যাশ্চর্য স্থাপত্যের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

গুজরাটের হেরিটেজ ট্যুরিজিম অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্রী রঞ্জিত সিং পারমার এবং বিখ্যাত পর্যটক-লেখক ও খাদ্যরসিক শ্রী অনিল মূলচান্দানি এই ওয়েবিনার পরিচালনা করেন। গুজরাটের বিভিন্ন দূর্গ, রাজপ্রসাদ, হাভেলি এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদর্শন౼যেগুলি বর্তমানে হেরিটেজ হোটেল অথবা হোম স্টে হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সে সম্পর্কে জানানো হয়। উপস্থাপকরা জানিয়েছেন গুজরাটের ১৬০০ কিলোমিটার সমুদ্রতটে প্রাচীন যুগ থেকে ব্যবসায়ি, পর্যটক, অভিবাসি এবং উদ্বাস্তুরা এসেছেন। উপস্থাপকরা গুজরাটের প্রাকৃতিক ও স্থাপত্য কলার বিভিন্ন সৌন্দ্যর্যের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ এই কর্মসূচির আওতায় দেখো আপনা দেশ ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়েছে।

গৌরবজ্জ্বল গুজরাটে বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ, রাজপ্রসাদ, দূ্র্গ এবং সৌধ রয়েছে, যেগুলি বিভিন্ন সাম্রাজ্যের স্বণর্যুগের সাক্ষ্য বহন করে। প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার লোথাল, ধোলাভিরা, গোলাধরো-র মতো স্থানগুলি গুজরাটে অবস্থিত। বিশ্বের প্রথম সমুদ্র বন্দর হিসেবে লোথালকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মৌর্য, গুপ্ত, শক এবং পশ্চিমী শাসকদের সময় ভারুচ ও খামবাত বন্দর ব্যবসা বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

আরও পড়ুন -  দশেরা উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা

১৬০০ খ্রীষ্টাব্দে পশ্চিম উপকূলে ওলন্দাজ, ফরাসী, ইংরেজ ও পর্তুগীজরা বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ে তুলেছিল। গুজরাটে পর্তুগীজরা প্রথম ইউরোপীয় শাসক হিসেবে শাসনকাজ পরিচালনা করেছে। দিউ-এর যুদ্ধের পর গুজরাট উপকূলের দমন ও দিউ ছিটমহলের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের দাদরা ও নগর হাভেলী ছিটমহলেও তারা ৪৫০ বছর ধরে শাসন করেছে। ১৯৬১ সালের ১৯য়ে ডিসেম্বর সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলগুলির ভারত ভুক্তি হয়েছিল।

এই ওয়েবিনারে গুজরাটের বিভিন্ন স্থাপত্যের নির্দশন দেখানো হয়েছে। রাজস্থান সংলগ্ন উত্তর গুজরাটে যেসব বড় বড় ইঁদারা, হ্রদ, রানি কি ভাও, পাটন এবং কুম্বারিয়া জৈন মন্দির রয়েছে, সেগুলি দেখানো হয়েছে। ইউনেস্কো একাদশ শতাব্দীর রানী কি ভাও ইঁদারাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যশালী কেন্দ্র বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দীতে সোলাঙ্কি সাম্রাজ্যকে গুজরাটের স্বর্ণযুগ বলে বর্ণনা করা হয়। ঝিঞ্জিবার ও দাদভই-এর দূর্গ এবং রাজপ্রাসাদগুলি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সিধাপুরের রুদ্রমাল্য হিন্দু মন্দির, মধেরার সূর্য মন্দির, পালিতানা, তরঙ্গ, গিরনার, মাউন্ট আবুর জৈন মন্দির বিখ্যাত পর্যটন স্থল। রাজ্যে জল সম্পদের ঘাটতি থাকায় ধাপে ধাপে ইঁদারা বা ভাও, ধাপে ধাপে পুকুর বা কুন্ড এবং হ্রদ বা তালাও তৈরি করা হয়েছে। এগুলি নির্মাণের সময় সুন্দর সুন্দর পাথরের ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছিল। মা দূর্গা বিষ্ণু অবতারের বিভিন্ন প্রতিকৃতি এইসব ভাস্কর্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ১৪১১ সালে সুলতান আহমেদ শাহ সবরমতী নদীর পূর্ব তীরে প্রাকারের শহর আহমেদাবাদ তৈরি করেছিলেন- যাকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যশালী কেন্দ্রের মর্যাদা দিয়েছে।

আরও পড়ুন -  উড়ানের চতুর্থ পর্বে ৭৮টি নতুন রুটের অনুমোদন

প্রাক সুলতানী এবং সুলতানী আমলে এই শহরের পুরাকীর্তি নয়নাভিরাম। পুরনো শহরটিতে হাভেলী, পোল বা রাস্তার ওপর প্রধান দরজা এবং খারকি (ভেতরের দরজা) পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ১৯৮০ সালে স্বামী নারায়ন মন্দির, দোদিয়া হাভেলী, ফার্নান্ডেজ ব্রিজ, জামা মসজিদ সহ বিভিন্ন এলাকায় পর্যটকদের ঘুরে বেড়াবার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়।

এগুলির পাশাপাশি দ্বারকায় রুক্মিনী মন্দির, গোমতী ঘাট, মান্ডভি প্যালেস এবং সোমনাথ মন্দির উল্লেখযোগ্য। ভাদোদরা শহরের রাজকীয়তা, রাইপিপলা, সাতরামপুর, দেবগড় বারিয়া, ছোটা উদেপুর ইত্যাদি জায়গায় রাজ প্রাসাদগুলিকে হোটেলে পরিণত করা হয়েছে, যাতে পর্যটকরা রাজকীয়তার আমেজ পেতে পারেন। স্ট্যাচু অফ ইউনিটি, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সাফারি পার্ক, লক্ষ্মীবিলাস রাজপ্রাসাদ উত্তর গুজরাটের বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান। দক্ষিণ গুজরাটে পর্যটকের ভ্রমণ পথে ওলন্দাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র সুরাটের পাশাপাশি পার্শীদের ঐতিহ্যশালী স্থান নভসারীর অগ্নিমন্দির যুক্ত হতে পারে।

প্রাণবন্ত গুজরাটে বিভিন্ন মেলা ও উৎসবের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। নবরাত্রি, গণেশ চতুর্থী এবং দেওয়ালী ছাড়াও ১৪ই জানুয়ায়ি বার্ষিক ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। গুজরাটের ঐতিহ্যশালী রাবারি, পাটোলার এবং ইক্কতের মতো সীবন কর্ম পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।

এই ওয়েবিনারের উপস্থাপকরা পর্যটকদের ছুটি কাটানোর বিভিন্ন পন্থার পরামর্শ দেন। কেউ যদি দূর্গ ঘুরে দেখতে চান তাহলে তিনি চম্পানের, রাজকোট, গোন্দাল, ভূজ ও আহমেদাবাদ ঘুরে দেখতে পারেন। ধাপে ধাপে তৈরি ইঁদারাগুলি ঘুরতে চাইলে পর্যটকদের আহমেদাবাদ খগড়হোড়া, মূলী, সায়লা ও ওয়াঙ্কানের যেতেই হবে। পুরাতাত্বিক যুগের জিনিস দেখতে চাইলে বালাসিনোর, সাতরামপুর, রুনাওয়ার, লোথাল, ধোলাভিরা তালিকায় থাকা প্রয়োজন। কেউ যদি রাজপ্রাসাদ ঘুরে দেখতে চান তাহলে তাঁকে অবশ্যই বরোদা, বালাসিনোর, লুনাবেরা, ছোটে উদেপুর, রাজপিপলা, হিম্মতনগর এবং পালানপুর যেতেই হবে। বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এলাকাগুলি ঘুরতে চাইলে আমেদাবাদ, বরোদা, ছোটা উদেপুর, দান্তা, কোষিনা, ভূজ দেবপুরে যেতেই হবে। কেউ যদি খেতে ভালোবাসেন তাহলে তাঁকে নবাবী খানা, মারাঠী, কাঠিয়াবারী ও গুজরাটি খাবার খেতে হবে। গুজরাটে তারনেতার, রণ, রাভেকি সহ উপজাতিদের উৎসব বিখ্যাত। গুজরাটের বিভিন্ন রাজপ্রাসাদ বর্তমানে বিয়েবাড়ি সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন স্থল। মুম্বাই গুজরাটের কাছাকাছি হওয়ার এখানে বড় ও ছোট ফিল্ম, টিভি সিরিয়াল, ডকুমেন্টরি, রিয়্যালিটি শো, স্যুটিং করার অনেক আকর্ষণীয় জায়গায় শ্যুটিং-এর সুযোগ রয়েছে। ওয়েবিনারের শেষে পর্যটন দপ্তরের অতিরিক্ত মহানির্দেশক রুপিন্দর ব্রার এই ঐতিহ্যশালী রাজ্যটি সফর করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। পরবর্তী ওয়েবিনার হবে ৮ই আগস্ট বেলা ১১টায়। এই ওয়েবিনারের বিষয় ‘১৮৫৭র ইতিহাস- স্বাধীনতার প্রস্তাবনা’। সূত্র – পিআইবি।

আরও পড়ুন -  Cyber: সাইবার যুদ্ধ