খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, কলকাতাঃ ইউবিআই মনে করে শ্রমিকদের কাজ ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে এমএসএমই-র পুনরুজ্জীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
সমবায় ব্যাঙ্কগুলির মূলধণের যোগান বাড়াতে নাবার্ড ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ মূলধণ সহায়তার ব্যবস্থা করল
কেন্দ্রের আর্থিক পরিষেবা দপ্তর এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নেতৃত্বে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলি কোভিড-১৯ অতিমারীর ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তাদের পরিষেবা বজায় রাখার জন্য বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন সংস্থা যে আর্থিক সংকটে পড়েছে তাদের সাহায্য করাই এর মূল উদ্দেশ্য। এসবিআই তার প্রতিটি প্রশাসনিক দপ্তরে এই উদ্যোগকে দ্রুত বাস্তবায়িত করার জন্য একজন করে নোডাল অফিসার নিয়োগ করেছে। ‘ব্যাঙ্কিং এফর্টস টু হেল্প ইন অ্যাটেইনিং আত্মনির্ভর ভারত ইন কোভিড সিচ্যুয়েশেন’- অর্থাৎ কোভিডের পরিস্থিতিতে আত্মনির্ভর ভারত গড়ার লক্ষ্যে ব্যাঙ্কের সহায়তা౼ এই শীর্ষক একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর কলকাতার দপ্তর শুক্রবার। এই ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে এসবিআই-এর জেনারেল ম্যানেজার শ্রী মহম্মদ সাদ ইমতিয়াজ হুসেইনি বলেন, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এসবিআই এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলি একটি নতুন প্রকল্প নিয়ে আসে। অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ অর্থাৎ এমএসএমই এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিকে মূলধণের সংকট থেকে বের করে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে ‘কমন কোভিড এমার্জেন্সি লাইন অফ ক্রেডিট’ চালু করা হয়েছে ব্যাঙ্কের তরফে। এই প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির মোট মূলধণের ১০ শতাংশ অর্থ ব্যাঙ্ক ঋণ হিসেবে দেবে। এই ১০ শতাংশ মূলধনের ঋণের সময়সীমা হবে ২৪ মাস, যেখানে ৬ মাসের মোরেটোরিয়াম (দেনা স্থগিত রাখার ব্যবস্থা)-এর সংস্থান থাকছে। এক্ষেত্রে সুদের হার এমসিএলআর-এর থেকে ১ শতাংশ বেশি౼প্রায় ৮ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে।
শ্রী হুসেইনি জানান, কেন্দ্র এমএসএমই-র জন্য মে মাসে দারুন সুযোগ নিয়ে আসে। কেন্দ্রীয় সরকার জরুরি অবস্থায় মূলধনের যোগানের জন্য ৩ লক্ষ কোটি টাকার একটি তহবিল ঘোষণা করেছে। কোন এমএসএমই-র ২৯শে ফেব্রুয়ারীর হিসেব অনুসারে মোট বকেয়া ২৫ কোটি টাকার মধ্যে থাকলে এবং তাদের যদি অনুৎপাদক সম্পদ বা এনপিএ অথবা এসএমএ২ না থাকে, তাহলে তারা তাদের বকেয়ার ২০ শতাংশ অর্থ কার্যকরী মূলধন বাবদ ঋণ হিসেবে পাবে। এই মূলধন প্রাক-অনুমোদিত। এক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৪৮ মাস এবং এখানে ১২ মাসের মোরেটোরিয়ামের ব্যবস্থা থাকছে। সুদ প্রতি মাসে দিতে হবে। এই প্রকল্পটি ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অথবা সংশ্লিষ্ট সংস্থা ওই তহবিল থেকে অর্থ পাওয়ার সময় পর্যন্ত বহাল থাকবে। শ্রী হুসেইনি আরও জানান, এসবিআই-সহ অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলি ই-মুদ্রা ঋণের ব্যবস্থা করেছে। ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় ব্যাঙ্কিং-এর লেনদেনের সুবিধার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান ইয়োনো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্রাহকরা ব্যাঙ্কের শাখায় না গিয়েও অনলাইনে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। স্টেট ব্যাঙ্ক প্রাক-অনুমোদিত ব্যবসায় ঋণের ব্যবস্থাও করেছে- যেখানে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিনিধিরা ব্যাঙ্কের শাখায় না গিয়েও ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঋণ পেতে পারবেন।
এই অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-র (ইউবিআই) প্রাক্তন ম্যানেজিং ডিরেক্টর শ্রী অশোক প্রধান জানান, শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমএসএমই-র পুনরুজ্জীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি পরামর্শ দেন এমএসএমইগুলির ওপর চাপ কমাতে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত ঋণ শোধের যে সময়সীমা বরাদ্দ করা হয়েছে তা শিথিল করে ওই সময় বৃদ্ধি করা হোক। ভারতকে আরও আত্মনির্ভর করে তুলতে এবং দেশে পরিকাঠামোর মানোন্নয়নে সাহায্য করতে তিনি প্রতিযোগিতামূলক সুদের হারে উৎপাদন ক্ষেত্রকে সাহায্যের প্রস্তাব দেন।
নাবার্ডের কলকাতা দপ্তরেরর চিফ জেনারেল ম্যানেজার শ্রী সুব্রত মন্ডল জানান সমবায় ব্যাঙ্ক, আরআরবি এবং মাইক্রো ফিনান্স প্রতিষ্ঠানগুলির মূলধনের যোগান বাড়াতে তারা ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ মূলধন সহায়তার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরফলে, ৩ কোটি কৃষক উপকৃত হবেন। এ ছাড়াও গ্রামীণ আর্থিক সংস্থাগুলিকে ১,০৭৭ কোটি টাকার বিশেষ মূলধন সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে খরিফ মরশুমে কৃষক এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি শস্য বপনের জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ পেতে পারেন। তিনি আরও জানান, কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ২ কোটি ৫০ লক্ষ কৃষককে সহজে ঋণের ব্যবস্থা নাবার্ড করেছে।
শহরাঞ্চলে সমবায় ব্যাঙ্কের দুই প্রতিনিধি- এনইএফ রেলওয়ে এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক লিমিটেডের শ্রী দেবাশীষ বসু এবং ইস্টার্ন রেলওয়ে এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক লিমিটেডের শ্রী অপূর্ব সেন জানান, তাঁরা ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীদের তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করতে উৎসাহী।
দিল্লির এগ্রিকালচারাল ইকোনমিক সেন্টারের প্রাক্তন ফেলো, দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিক্সের শিল্প সংক্রান্ত অর্থনীতিবিদ এবং ভবানীপুর এডুকেশন সোস্যাইটি কলেজের মহানির্দেশক অধ্যাপক সুমন কে মুখার্জী জানান, প্রতিযোগিতা, গ্রাহকদের সন্তুষ্টি, সাইবার নিরাপত্তা, ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় লেনদেন বৃদ্ধি, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা এবং তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য ডিজিটাল লেজার টেকনলজির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে౼এগুলির মাধ্যমে আর্থিক সমন্বয় ঘটবে। তিনি গ্রামীণ এলাকার ব্যাঙ্কগুলিতে ডিজিটাল প্রক্রিয়ার ব্যবহার বাড়ানোর ওপর-ও গুরুত্ব দেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ এবং বন্ধন ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ও গবেষনা শাখার প্রধান, শ্রী সিদ্ধার্থ সান্যালও অধ্যাপক মুখার্জীর বক্তব্যকে সমর্থন করেন। সূত্র – পিআইবি।