হাঁস পালনের মাধ্যমে রোজগার করছেন কোচবিহারের মহিলা উদ্যোগপতিরা

Published By: Khabar India Online | Published On:

খবরইন্ডিয়াঅনলাইন, কলকাতাঃ    একটি বহু পুরানো প্রবাদ আছে ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’। বলা যেতে পারে প্রবাদ বাক্যটি বোধহয় এই সংস্থার পক্ষে যথাযথভাবে প্রযোজ্য।২০০১ সালে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি এবং তাদের দারিদ্র্য দূর করে একটা সুন্দর জীবনের সুযোগ তৈরি সহ প্রান্তিক ও দুর্বল মানুষদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে এদের যাত্রা শুরু হয়েছিল।

 

প্রতিষ্ঠার প্রায় কুড়ি বছর পরে সাতমাইল সতীশ ক্লাব ও পাঠাগার (এস এস সি ও পি) সংগঠনটি সম্পূর্ণরূপে না হলেও অন্তত কিছুটা হলেও তাদের লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছে। এটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কৃষি ক্ষেত্রে কাজ করছিল, এখন হাঁস পালনকে উৎসাহিত করে তার ডিম এবং মাংস উৎপাদনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিইয়েছে।

 

এস এস সি ও পি’র সম্পাদক অমল রায়, অনুভব করেছিলেন যে শুধুমাত্র কৃষিকাজ করে স্থানীয় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বিশেষ আয় বৃদ্ধি হবেনা। তাই তিনি মৎস্য চাষ, মুরগী ​​ও হাঁস পালনের মত অর্থকরি ব্যবসার দিকটি সম্পর্কে সকলকে সচেতন করার উদ্যোগ নেন। এতে শুধু যে আর্থিক সুবিধা হয় তাই নয় পুষ্টিকর খাবারের উৎস হিসাবেও একটা ভূমিকা পালন করে।

আরও পড়ুন -  মানিকচক কলেজে নেহা কক্করের নামে আবেদন ,ঘটনায় চাঞ্চল্য শিক্ষামহলে

 

  

 

গ্রামীণ পরিবার গুলির জীবিকা ও আয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব আনার প্রত্যাশায় এস এস সি ও পি হাঁস পালনের ব্যবসার সাফল্য নিয়ে প্রচার শুরু করে। সংগঠনটি এলাকায় একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখে যে গ্রামীণ পরিবারগুলি ঐতিহ্যগতভাবেই ডিমের জন্য হাঁস পালন করে, তবে মাংসের জন্য নয়।কিন্তু এস এস সি ও পি ডিম এবং মাংস উভয়ের জন্যই হাঁস পালনের প্রচার শুরু করে। খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালনের খরচ খুব বেশি (কারণ এর জন্য যে গুণমানের খাবার প্রয়োজন তা বেশ ব্যয়বহুল) তো বটেই তা ছাড়া এই জাতের হাঁস পালতে শুরু করার ছয় মাস পরে ডিম দেয় যা গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের বিশেষত মহিলা এবং প্রথমবার যারা এই চাষ করছেন্ তাদের খুব একটা মনোমত রিটার্ন দেয় না।এই কারণে অন্য জাতের হাঁস পালনের দিকে নজর দেওয়া হয়। তাই হোয়াইট পেকিন হাঁস নামে একটি নতুন প্রজাতির হাঁস চাষ শুরু করা হয় যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং আড়াই থেকে তিন মাসে মধ্যে তার ওজন প্রায় সারে তিন থেকে চার কেজি হয়ে যায়। এই জাতের হাঁস মাংসের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এর থেকে হ্যাচারি মালিকদের ভালই লাভ হচ্ছে।

আরও পড়ুন -  Semi-Final: নিউজিল্যান্ড টস জিতে ব্যাটিংয়ে

 

যে কোন ব্যবসার প্রতিটি ধাপে থাকে নানা ধরণের সুবিধা অসুবিধা। এই হাঁস পালনের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। বাইরের থেকে আনা হাঁসের ছানা দিয়ে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে দেখা গেলো তা বেশ খরচ সাপেক্ষ হয়ে যাচ্ছে। তখন  নিজেরাই ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করার লক্ষ্যে এস এস সি ও পি চালু করল দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ইনকিউবেটর। এর ফলে দক্ষিণ ভারত থেকে হাঁসের ছানা আনতে যে ব্যয় হচ্ছিল তা অনেকটাই কমে গেল। এছাড়া অর্ডার দেবার কতদিন পরে মাল পাওয়া যাবে তা নিয়ে যে দুশ্চিন্তা ছিল তাও দূর হোল। বিভিন্ন আকারের ইনকিউবেটর কাজে লাগিয়ে এখন তারা নিজেরাই হাঁসের ছানা তৈরি করছে। এখন পর্যন্ত এস এস সি ও পি সারা বাংলায় ১৮ টি ইউনিট বিক্রি করেছে। পোল্ট্রি ফিডের জন্যও সংস্থাটি দেশের পরিচিত পশু খাদ্য প্রস্তুতকারী সংস্থার সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছে যাতে পোল্ট্রি ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এক জায়গা থেকেই পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন -  পশ্চিম বর্ধমান জেলার ২৬৩৩ জন পুরোহিতকে ভাতার আওতায় আনা হয়েছে

 

সংস্থার বরিষ্ঠ উপদেষ্টা তপন চৌধুরীর মতে, এই এস এস সি ও পি মডেলটি বেশ অনন্য, কারণ এটি গ্রামীণ মহিলা তথা যারা প্রথমবার ব্যবসায় নেমেছেন তাদের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য নতুন পদ্ধতি চালু করেছে। এই পদ্ধতিতে মহিলাদের অত্যন্ত স্বল্প মূল্যে হাঁসের বাচ্চা দিয়ে দেওয়া হয়, সেই গুলোকে লালন পালন করে বড় হলে তার থেকে যে ডিম পাওয়া যায় তা বাজারের থেকে বেশি দামে কিনে নেওয়া হয়। এই বাই ব্যাক পলিসির উদ্দেশ্য হোল গ্রামীণ অর্থনীতি কে চাঙ্গা করা এবং যারা প্রথম বার ব্যবসায় নেমেছেন তাদের উৎসাহ দেওয়া। এছাড়া ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরির বিষয়টি ও আছে। আরও বেশি কিছু নতুন প্রজাতির হাঁস নিয়েও পরীক্ষা নিরীক্ষাও তারা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন তপন বাবু। সূত্র ও ছবি – পিআইবি।